Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
International

হারের পর হিলারির চিঠি এল আমার কাছেও, চমকে উঠেছিলাম!

দুপুর বেলায় মেল চেক করতে গিয়ে নামটা দেখে প্রথমটায় বিশ্বাস হয়নি। এ কোন হিলারি! আমেরিকার স্বপ্নভঙ্গের দূত! নাকি যে মহিলার হাত ধরে গোটা বিশ্ব জানল, সর্বোচ্চ নেতৃত্বে এক মহিলাকে মেনে নিতে তারা এখনো প্রস্তুত নয়! যাই হোক, মেলটা হিলারির।

বিধ্বস্ত ক্লিন্টন। ছবি: এএফপি।

বিধ্বস্ত ক্লিন্টন। ছবি: এএফপি।

প্রসেনজিৎ সিংহ, ফিলাডেলফিয়া, পেনসিলভ্যানিয়া
শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৬ ১৪:১৬
Share: Save:

দুপুর বেলায় মেল চেক করতে গিয়ে নামটা দেখে প্রথমটায় বিশ্বাস হয়নি। এ কোন হিলারি! আমেরিকার স্বপ্নভঙ্গের দূত! নাকি যে মহিলার হাত ধরে গোটা বিশ্ব জানল, সর্বোচ্চ নেতৃত্বে এক মহিলাকে মেনে নিতে তারা এখনো প্রস্তুত নয়! যাই হোক, মেলটা হিলারির।

পড়ে বুঝলাম পরাজয় স্বীকার করে শেষ যে কথাগুলো বলেছিলেন হিলারি ক্লিন্টন, চিঠিতে তারই সারাংশ। উপরে আমার নাম। নীচে তাঁর। আশাহত ভক্তদের প্রত্যেকের মেলেই হয়তো পাঠিয়েছেন এই চিঠি। কিন্তু এই ভারতীয়ের ইনবক্সেও!

কারণ আর কিছু নয়, একটা সভা। পরাজয়ের আগে হিলারির শেষ সভা।

যদি আলেথিয়া অজানা অচেনা এই ভারতীয়কে টেক্সট না করতেন বোধ হয় ঐতিহাসিক একটা মুহূর্তের সাক্ষী হওয়া হতো না!

আলেথিয়াকে আমি চিনি না।

সোমবার রাতেই ফেসবুকে দেখেছিলাম ফিলাডেলফিয়া ইন্ডিপেন্ডেন্স মলে প্রচারের শেষ সভাটি করবেন হিলারি। একটু বিশদে দেখতে গিয়ে চোখে পড়ল ওই সভায় যাওয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে হবে, নাম, ঠিকানা, ইমেল, ফোন নম্বর দিয়ে। সাংবাদিক পরিচয়ে এ দেশে আসিনি। অতএব বিশেষ প্রাধান্য পাওয়ার সুযোগ নেই। তবু মনে হচ্ছিল, এমন একটা সুযোগ কোনও ভাবেই হারানো যাবে না। নাম নথিভুক্ত করলাম। কিছু ক্ষণ পরে তার উত্তর এল। অতি সাধারণ ‘সিস্টেম জেনারেটেড রিপ্লাই’। শেষে একপ্রস্থ চাঁদার কথাও বলা হয়েছে। এই রে! নির্বাচনী সভায় যেতেও গাঁটের ডলার খরচ করতে হবে না কি! নূন্যতম দশ ডলার। মানে প্রায় সাতশো টাকা।

সে কি! ব্রিগেডের সভায় গাঁ-গঞ্জ থেকে বাস-লরি-ম্যাটাডোরে যাঁরা আসেন, তাঁদের তো… খাওয়াদাওয়া ছাড়াও কখনও সখনও নগদ-নারায়ণের ব্যবস্থা থাকে। ও মা, আরও একটু এগোতে গিয়ে দেখি, দান করতে গেলে আমেরিকার নাগরিক বা স্থায়ী অভিবাসী হতে হবে। মনটা দমে গেল। তা হলে বোধ হয় আর হল না। ঘণ্টা তিনেক বাদে আলেথিয়া নামে একটি মেয়ে আমার নম্বরে টেক্সট করে জানতে চাইল, আমি যাচ্ছি কি না! আমি জানালাম, আমি ভারতীয়। তা ছাড়া, ভোটারও নই। আমাকে কি তোমরা ঢুকতে দেবে! উত্তর এল, ‘নিশ্চয়। তিন জন প্রেসিডেন্টকে এক সঙ্গে দেখার সুযোগ সহজে মেলে না।’ অ্যালেথিয়া ডেমোক্র্যাট ভল্যান্টিয়ার। ভোটের ১৫ ঘণ্টা আগে, তাই হিলারিকে ‘ম্যাডাম প্রেসিডেন্ট’ বানিয়ে ছেড়েছিল। হায় রে অ্যালেথিয়া।

মনে হয়েছিল, এর পর আর বসে থাকার অর্থ হয় না। গুগলের স্মরণ নিয়ে রাস্তা খুঁজে নিলাম। ট্রেনে গেলে খুব বেশি সময় লাগবে না। কিছু দিন ধরে এখানকার পরিবহণ সংস্থার কর্মীরা ধর্মঘট করছিলেন। ভোটের আগের দিন পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও পুরোপুরি হয়নি। সভায় যেতে গেলে যেখানে নামতে হয়, সেই ফিফথ স্টেশনে ট্রেন দাঁড়াবে না জানিয়ে দিল। অতএব এইটথ স্টেশন থেকে হাঁটা। আমেরিকান পাবলিকের রকমসকম দেখতে দেখতে। হাজার তিরিশেক লোক অপেক্ষা করছে। ঝাড়া পাঁচ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে অবশেষে দেখা মিলল তাঁর।

এই সেই চিঠি। click করুন..

আবেগ উচ্ছ্বাস এখানেও কম নয়। আমার পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন এক দম্পতি। মহিলাটি সেলফি তুলে তুলে ক্লান্ত হয়ে পড়লেও স্বামী লোকটি বেশ ইন্টারেস্টিং। সভার প্রচণ্ড আলোয় একটা ‘দ্য নিউ ইয়র্ক বুক রিভিউ’ পড়ে যাচ্ছিলেন। বনজোভি আর স্প্রিংস্টিনের গানের সঙ্গে শরীর দোলালেন। স্ত্রীকে বারদুয়েক চুমু খেলেন। কিন্তু বদলে গেলেন সভা শুরু হতেই। হাতের কাগজটাকে মুড়ে হ্যান্ডমাইক বানিয়ে বিভিন্ন গলায় আওয়াজ করতে লাগলেন ক্রমাগত। সমর্থকদের আবেগ উস্কে দেওয়া ভাষণে মিশেল ওবামা, বারাক ওবামা, বিল ক্লিন্টন সে দিন বোধহয় টের পাননি, কয়েক ঘণ্টা পরে কী বিপ্লব ঘটাতে চলেছেন আমেরিকানরা।

কিন্তু প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর হেরে গিয়েও হারলে চলে না।

হাসতে হয়, বোঝাতে হয়, তিনি ভেঙে পড়েননি। তাই পাশে থাকার জন্য সমর্থকদের ধন্যবাদ জানাতে হয়। বলতে হয়, এ লড়াই শেষ হওয়ার নয়। আমেরিকার সকলের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিতে হয়।

সে দিনের সভায় ভল্যান্টিয়ারদের দেওয়া নীল রঙের প্ল্যাকার্ড সুভেনির মনে করে নিয়ে আসি। বড়বড় করে লেখা, ‘স্ট্রংগার টুগেদার’। শেষ বার্তাতেও সে কথাই মনে করিয়ে দিয়েছেন হিলারি।

সেই পুরুষটি কী করছেন? যিনি অবিরাম কাগজের মাইকে বিভিন্ন রকমের আওয়াজ করে হিলারিকে সমর্থন জানাচ্ছিলেন, কিংবা তাঁর স্ত্রী? উত্তরটা হয়তো ছড়িয়ে রয়েছে এই মুলুকের আনাচে কানাচেই।

স্কুল থেকে ফিরে ছেলে বলল, ওর বন্ধুবান্ধবদেরও সকলের মন খারাপ। স্কুলের সামনেই এক মহিলা ‘ক্রসিং গার্ড’ থাকেন ছেলেমেয়েদের রাস্তা পার করানোর জন্য। প্রতি দিন দেখি, রাস্তারই পাশে দাঁড় করানো থাকে তাঁর গাড়িটি। আর সেই গাড়ির মিউজিক সিস্টেম চালু থাকে প্রতি দিন। মিউজিকের তালে নেচে নেচেই তিনি ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করেন। সকালে ওঁর এই ভরপুর প্রাণশক্তি দেখে মন ভাল হয়ে যায়। সকলকেই উইশ করেন। বুধবার তাঁর মুখটা ছিল থমথমে। কষ্টটা সকালেও লেগে ছিল চোখেমুখে। বৃহস্পতিবার আর জয়পরাজয়ের চিহ্ন নেই তাঁর মুখে। কাজ কাজই। অবহেলা করা যায় না।

এটা যে আমেরিকা!

আরও পড়ুন:
‘এখন যতই মিষ্টি কথা বলো, তুমি আমাদের প্রেসিডেন্ট নও!’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE