ফাইল চিত্র।
ভোট আসছে দু’দেশেই। এই অবস্থায় প্রকাশ্য বিবাদ যা-ই চলুক, ভিতরে ভিতরে কূটনৈতিক বোঝাপড়া শুরু হয়ে গিয়েছে ভারত এবং পাকিস্তানের।
ভারতের এক কাশ্মীরি দূত বেসরকারি সফরে ইতিমধ্যেই দেখা করে এসেছেন পাক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। নতুন করে শুরু হয়েছে ‘নিমরানা ডায়লগ’। গত ২৮ থেকে ৩০ এপ্রিলের সেই বৈঠকে যোগ দিতে পাকিস্তানে গিয়েছিলেন প্রাক্তন ভারতীয় কূটনীতিক, প্রাক্তন সেনা অফিসার ও শিক্ষাবিদদের নিয়ে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল। তার নেতৃত্বে ছিলেন পাক বিশেষজ্ঞ প্রাক্তন আমলা বিবেক কাটজু। পাক দলে ছিলেন সে দেশের প্রাক্তন বিদেশসচিব ইনামুল হক।
পরিস্থিতি এমন ছিল না ক’দিন আগেও। ছিল উত্তপ্ত কাশ্মীর সীমান্ত, ভারতের সার্জিক্যাল স্ট্রাইক, পাকিস্তানের পাল্টা হামলার দাবি। ইতিমধ্যে ভারতীয় গোয়েন্দাদের তথ্যের ভিত্তিতে দিল্লির চিড়িয়াখানায় গ্রেফতার হন সৈয়দ ফারুক হাবিব নামে পাক দূতাবাসের এক অফিসার। মেহবুব আখতার নামে পঞ্জাব থেকে আসা এক ব্যক্তির হাত থেকে ভারতীয় সেনা সংক্রান্ত কিছু গোপন নথি নিচ্ছিলেন তিনি। কেন্দ্র বলে, এই অফিসার আসলে আইএসআইয়ের স্টেশন চিফ। তাঁকে জেরা করে জানা যায়, পাক হাইকমিশনে মোট ১৬ জন আইএসআই অফিসার রয়েছেন।
১৬ জন ছদ্মবেশী পাক গোয়েন্দা অফিসারকে দেশ থেকে বিতাড়িত করে ভারত। তার বদলা হিসেবে ইসলামাবাদে ভারতীয় কূটনীতিকদের উপরে শুরু হয়ে যায় নানা নির্যাতন। অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে, পাকিস্তানে ভারতীয় হাইকমিশনকে ‘নন ফ্যামিলি স্টেশন’ ঘোষণা করতে হয়। অর্থাৎ সেখানে আর সপরিবার থাকছেন না ভারতীয় অফিসারেরা। ভারতের নতুন হাইকমিশনার অজয় বিসেরিয়া পাকিস্তানে যান। কিন্তু তাঁকে সেখানকার কোনও ক্লাবের সদস্য পর্যন্ত করা হয়নি।
দিল্লিতে কর্মরত পাক অফিসারেরা অভিযোগ করতে থাকেন যে, ভারতীয় গোয়েন্দাদের গাড়ি সর্বত্র অনুসরণ করছে তাঁদের। চলছে গাড়ি থামিয়ে তল্লাশিও। স্কুলে যাওয়ার সময়ে খোদ মিনিস্টার প্রেস-এর ছেলেমেয়েদের হেনস্থা হতে হয়েছে বলেও দাবি করে পাকিস্তান। ভারত সে অভিযোগ অস্বীকার করে।
পাক সেনাপ্রধান নিজেই এর পরে ভারতের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দেন। তখন ভারতের তরফে বেসরকারি দূত করে পাকিস্তানে পাঠানো হয় এক কাশ্মীরি সাংবাদিককে। তিনি পাক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে আসেন। পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক হয় ভারতীয় হাইকমিশনারের। সেখানে ঠিক হয়, দু’পক্ষই নিজেদের অফিসারদের সমস্যার বিষয়টি দেখবে। তার পর থেকে ক্রমশ স্বাভাবিক হয়েছে পরিস্থিতি। দিল্লির পাক হাইকমিশনের এক অফিসার বলছিলেন, ‘‘ক’দিন আগে পর্যন্ত আমরা বাড়ি থেকে হাইকমিশন এবং সেখান থেকে বাড়ি আসতাম। বাজার পর্যন্ত যেতাম না। ইনশা আল্লা, এখন আবার স্বাভাবিক অবস্থা
ফিরে এসেছে।’’
ভোটের মুখে অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কথা মাথায় রেখে ভারত-পাক উত্তেজনা প্রশমন যে কঠিন, দু’দেশের শাসক দলই তা জানে। কিন্তু উত্তেজনা যাতে লক্ষ্মণরেখা না পেরোয়, নজর রয়েছে সে দিকেও। ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক সহজ করার জন্য ইসলামাবাদের উপরে চাপ রয়েছে আমেরিকার। আবার প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্কের সুতো পুরোপুরি কেটে দিতে চায় না নরেন্দ্র মোদী সরকারও। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ডেনমার্কের জাতীয় দিবসে ভারত কোনও প্রতিনিধি না পাঠালেও পাকিস্তানের জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানে এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিয়েছেন পাক দূতাবাসে। প্রতি বছরের মতোই। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বলছে , এখনও দু’জন আইএসআই অফিসার পাক হাইকমিশনে ভিসা অফিসার হিসেবে কাজ করছেন। কিন্তু ভারত এখনই কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
সাময়িক বোঝাপড়া চাইছে পরমাণু শক্তিধর দুই প্রতিবেশী। আর তাই শুরু হয়ে গিয়েছে ‘ট্র্যাক-২ কূটনীতি’। আনুষ্ঠানিক ‘ট্র্যাক-১’ শুরু হোক বা না হোক!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy