এ বার সরাসরি হুঁশিয়ারির রাস্তা নিল বেজিং। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
পুতুল সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে। মলদ্বীপে জয়ী হয়েছেন ভারতপন্থী প্রার্থী। নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ অনুষ্ঠানে সাদরে অভ্যর্থনা জানানো হয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। ভারত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্রটির উপর থেকে নিজেদের প্রভাব দ্রুত ফিকে হতে দেখছে চিন। পরিস্থিতি সামাল দিতে মরিয়া বেজিং প্রায় সরাসরি হুঁশিয়ারির রাস্তা নিল। ভারতের কাছ থেকে ‘অর্থহীন উপহার’ নিশ্চয়ই নেবে না মলদ্বীপ— চিনা কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম প্রধান মুখপত্রে লেখা হল এমনই। মলদ্বীপে ভারত সেনা মোতায়েন করতে চাইছে বলে দাবি করে উদ্বেগও প্রকাশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
‘মলদ্বীপ নিশ্চয়ই বিবেচকের মতো আচরণ করবে এবং নয়াদিল্লির দেওয়া অর্থহীন ‘উপহার’ প্রত্যাখ্যান করবে।’ গ্লোবাল টাইমসে প্রকাশিত একটি নিবন্ধের শিরোনাম ঠিক এই রকমই। কোন আন্তর্জাতিক বিষয়কে চিন কী চোখে দেখছে, তা কমিউনিস্ট পার্টি পরিচালিত এই ট্যাবলয়েডের মাধ্যমেই বিশ্বের সামনে তুলে ধরে চিন। সেখানেই সংবাদপত্রটি যে ভাবে মলদ্বীপের প্রতি ভারতের আনুকূল্যকে ‘অর্থহীন’ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছে এবং মলদ্বীপকে তা ‘প্রত্যাখ্যান’ করার পরামর্শ দিয়েছে, তাকে মলদ্বীপের প্রতি চিনের সতর্কবার্তা হিসেবেই দেখছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশারদরা।
মলদ্বীপের সদ্যপ্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আবদুল্লা ইয়ামিনের জমানায় বেজিঙের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছিল মালে, দূরে ঠেলেছিল নয়াদিল্লিকে। চিনের কাছে থেকে ঋণ নিয়েছিল মলদ্বীপ, চিনের সঙ্গে অবাধ বাণিজ্যের চুক্তি করেছিল, নানা প্রকল্প থেকে ভারতীয় সংস্থাগুলিকে সরিয়ে চিনা বিনিয়োগের পথ প্রশস্ত করেছিল, চিনের ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ (ওবর) পরিকল্পনাতেও সামিল হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ইয়ামিন ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারলেন না। মলদ্বীপে সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরি করে ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখার চেষ্টা করেছিলেন তিনি, চিনের স্পষ্ট মদত ছিল তাতে। কিন্তু আন্তর্জাতিক মহলের প্রবল চাপে ইয়ামিনকে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে যেতেই হয় এবং তাতে শোচনীয় পরাজয় হয় চিনপন্থী প্রেসিডেন্টের।
আরও পড়ুন: মেয়র হলেন ফিরহাদ, ভোট বয়কট বাম-কংগ্রেসের
নির্বাচনে জয়ের পরেই ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছিলেন ইব্রাহিম মহম্মদ সোলিহ। ১৭ নভেম্বর মালেতে নরেন্দ্র মোদীর উপস্থিতিতে তিনি শপথ নিয়েছেন। ভারতের সঙ্গে মলদ্বীপের যে দীর্ঘ সম্পর্ক, দ্রুত তার পুনরুদ্ধারের পথেই যে হাঁটবে নতুন সরকার, সে ইঙ্গিতও স্পষ্ট করেই দিয়ে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট সোলিহ। তাতেই বেজিঙের রক্তচাপ বাড়তে শুরু করেছে।
মলদ্বীপে ভারতের প্রভাব যে বাড়ছে, সে কথা গ্লোবাল টাইমসের প্রতিবেদনে কার্যত স্বীকার করে নিয়েছে বেজিং। সেখানে লেখা হয়েছে, ‘‘চিনা ঋণ পরিশোধ করার জন্য মলদ্বীপকে ঋণ দেওয়ার যে পরিকল্পনা ভারত করেছে, তাতে(মলদ্বীপের) কোনও লাভ হবে না, শুধু ভারত তাদের নতুন ঋণদাতা হয়ে উঠবে।’’ লিখেছে গ্লোবাল টাইমস। ভারতের এই পরিকল্পনাকে ‘পুরনো কৌশল’ আখ্যা দিয়েছে চিনা সংবাদপত্রটি। নিকেই এশিয়ান রিভিউ নামে একটি সংস্থার প্রতিবেদন উল্লেখ করে চিনা সংবাদপত্র জানিয়েছে, ভারত সরকারের মধ্যে থেকেই গোপন সূত্রে খবর পাওয়া গিয়েছে যে, মলদ্বীপকে ভারত ১০০ কোটি ডলার ঋণ দিতে চলেছে চিনা ঋণ শোধ করে দেওয়ার জন্য।
ভারত সরকারের কোন সূত্র থেকে খবর পাওয়া গিয়েছে, তা বলা হয়নি গ্লোবাল টাইমসে। তবে সেই উদ্ধৃত করে লেখা হয়েছে, ‘‘কম সুদে এবং অনেকগুলি কিস্তিতে পরিশোধের শর্তে ঋণ দেওয়ার বিষয়ে মলদ্বীপের সঙ্গে ভারতের কথা চলছে। তার বদলে ভারত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্রটির সঙ্গে ভারত আরও শক্তিশালী নিরাপত্তা চুক্তি চায় এবং দ্বীপরাষ্ট্রে স্থায়ী ভাবে ভারতীয় সামরিক বাহিনী মোতায়েন করতে চায়।’’
আরও পড়ুন: ‘বেঁচে আছি, এটাই প্রকৃত আমি’, ছবি দেখিয়েই জীবিত থাকার প্রমাণ দিচ্ছেন প্রেসিডেন্ট!
চিনা সংবাদপত্রের ব্যাখ্যা— ভারতের উদ্দেশ্য হল চিনকে মলদ্বীপের থেকে দূরে সরানো এবং ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব বাড়াতে মলদ্বীপকে ব্যবহার করা। এক জনের দেনা শোধ করতে অন্য জনের থেকে ঋণ নেওয়া কোনও কাজের কথা নয়— এমন পরামর্শও দিয়েছে গ্লোবাল টাইমস। চিনা বিনিয়োগে মলদ্বীপে খুব দ্রুত পরিকাঠামো বৃদ্ধি পেতে পারত এবং মলদ্বীপের উন্নয়নও খুব দ্রুত হত— এমন আক্ষেপের সুর রয়েছে চিনা সংবাদপত্রের প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে। ভারতের উদ্দেশ্য মলদ্বীপকে সাহায্য করা নয়, মলদ্বীপের উন্নয়নে চিনের যে ভূমিকা, তার অপব্যাখ্যা করা— ঠিক এই ভাষাতেই আক্রমণ করা হয়েছে নয়াদিল্লির সক্রিয়তাকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy