চুক্তির পর হোয়াইট হাইসে বক্তব্য রাখছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।
অবশেষে ‘ঐতিহাসিক’ সমঝোতা। চূড়ান্ত হল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ভবিষ্যতের রূপরেখা। একই সঙ্গে ইরানের উপর থেকে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাগুলিও উঠে যাবে। আশা, এতে ইরানের অর্থনীতিতে জোয়ার আসবে। কমবে তেলের দাম। সেই ঢেউয়ের সুফল মিলবে ভারতেও।
সমঝোতার পরেই মুখ খুলেছেন ইরান এবং আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। দীর্ঘ দিনের বৈরিতা যা পারেনি, ক’বছরের আলোচনায় সেই সুফল মিলেছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। এই সমঝোতা দেখিয়ে দিল আলোচনাতেই ফল মেলে, মত ইরানের প্রেসিডেন্ট রুহানির। পাশাপাশি, নতুন দিগন্ত খুলে গেল বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
মঙ্গলবার ভিয়েনায় আমেরিকা, রাশিয়া, ব্রিটেন, ফ্রান্স, চিন— পারমাণবিক শক্তিধর এই পাঁচটি দেশ এবং জার্মানির সঙ্গে চূড়ান্ত সমঝোতায় এল ইরান। ২০০৬ থেকে এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছিল। তার পরে দু’পক্ষের বাঘা বাঘা কূটনীতিবিদের কত বিনিদ্র রজনী পার করিয়ে অবশেষে চূড়ান্ত রূপটি সামনে এল। কয়েক মাস আগে সুইৎজারল্যান্ডের লুসানে সমঝোতার উপরি-কাঠামোটি স্থির হয়ে যায়। এ দিন স্থির হল পূর্ণাঙ্গ রূপ। এ দিন পর্যন্ত সমঝোতা নিয়ে ছিল টানটান উত্তেজনা। বেশ কাছে এলেও চূড়ান্ত মতানৈক্যে আসতে পারছিল না দু’পক্ষ। উৎকণ্ঠা ক্রমেই বাড়ছিল। তবে কি কোনও এক পক্ষ আলোচনা ছেড়ে চলে যাবে! তা হলে তো দু’পক্ষেরই এত দিনের পরিশ্রম জলে যেত।
না, উৎকণ্ঠার অবসান হয়েছে। এক মত হতে পেরেছে দু’পক্ষ। বেশ জটিল এই সমঝোতা। খুব সহজে বললে, আন্তর্জাতিক দাবি মেনে নিজেদের পারমাণবিক কর্মসূচি বেশ খানিকটা কাটছাঁট করতে রাজি হয়েছে ইরান। বিশেষ করে সেই সব কাজ যা সরাসরি পরমাণু বোমা তৈরির সঙ্গে জড়িত। পরিবর্তে রাষ্ট্রপুঞ্জ, আমেরিকা-সহ বেশ কিছু দেশ ইরানের উপরে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে। ফলে এক দিকে যেমন বিশ্বের সামনে ইরানের বাজার, মানবসম্পদের দুয়ার খুলে যাবে, তেমনই বিশ্ববাজারে তেলের জোগান বেশ বাড়বে। অর্থনীতির নিয়ম মেনে কমবে তেলের দাম। সমঝোতার সম্ভাবনাই বেশ কয়েক দিন ধরে বিশ্ববাজারে তেলের দামকে নিম্নমুখী রেখেছিল। কিন্তু এই চূড়ান্ত সমঝোতাকে বেশ কয়েকটি কঠিন বাধা পেরোতে হয়েছে। দু’পক্ষকেই আপস করতে হয়েছে বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে। যেমন,
১) রাষ্ট্রপুঞ্জের পরিদর্শকরা পারমাণবিক কেন্দ্রগুলি সমীক্ষা করতে পারবে বলে মেনে নিয়েছে ইরান। তবে তা পুরোপুরি অবাধ হবে না। বিশেষ করে সামরিক কাজে ব্যবহৃত কেন্দ্রগুলিতে পরিদর্শন নিয়ে আপত্তি তুলতে পারে ইরান।
২) ইরান সমঝোতার কোনও শর্ত ভঙ্গ করলে ৬৫ দিনের মধ্যে নিষেধাজ্ঞা ফিরে আসবে।
৩) সব ঠিকঠাক চললে ইরানের উপরে অস্ত্র এবং ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের যে দু’টি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে তা যথাক্রমে পাঁচ ও আট বছর পরে উঠে যাবে।
এই সমঝোতা নিয়ে ইরান, আমেরিকা— দুই প্রেসিডেন্টকেই ঘরে-বাইরে প্রবল চাপের মধ্যে থাকতে হয়েছে। দু’জনের কাছেই তাই এ এক ‘ঐতিহাসিক’ পদক্ষেপ। ইরানের মোল্লাতন্ত্রের একটি অংশ এই সমঝোতার বিরোধিতা করে গিয়েছে। আর আমেরিকায় অধিকাংশ রিপাবলিকান, এমনকী বেশ কিছু ডেমোক্র্যাটও এই সমঝোতার তীব্র সমালোচনা করেছেন। এই সমঝোতা পশ্চিম এশিয়ায় আমেরিকার দীর্ঘ দিনের বন্ধু ইজরায়েল আর সৌদি আরবকে একই পংক্তিতে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। শিয়া ইরানের শক্তিবৃদ্ধি দু’টি দেশের কাছেই প্রবল মাথাব্যথার কারণ। ইজরায়েলের প্রেসিডেন্ট বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এর মধ্যেই ট্যুইটে সমঝোতার তীব্র বিরোধিতা করেছেন। তাঁর মতে, এটি ‘ঐতিহাসিক’ ভুল। ইরানকে ধীরে-সুস্থে পরমাণু বোমা তৈরির পথে যেতে দেওয়া হল।
এই সমঝোতা ভারতের পক্ষে অবশ্য বেশ সুখের খবর বয়ে আনবে। প্রথমেই তেলের দাম কমায় বেশ খানিকটা অর্থ বাঁচবে। পাশাপাশি, ইরানের বাজার খুলে যাওয়ায় ভারতের রফতানি বাড়বে। বিশেষ করে বাসমতী চাল, চিনি, বার্লি, মাংসের মতো জিনিসের রফতানি বাড়বে। যাতে সুবিধা পাবেন চাষিরা। তবে বিশ্ববাজার খুলে যাওয়ায় পোশাক, গাড়ির মতো কয়েকটি ক্ষেত্রে ভারতের পণ্যকে কঠিন প্রতিযোগিতার সামনেও পড়তে হবে। ভারতের ওএনজিসি ইরানের বেশ কয়েকটি তৈলক্ষেত্রের অধিকার পেতে চায়। কিন্তু এ বার বিশ্বের বড় বড় তেল কোম্পানিগুলির সঙ্গে ওএনজিসি-কে প্রতিযোগিতায় নামতে হবে।
যে পথে এল সমঝোতা
‘ঐতিহাসিক’ পারমাণবিক চুক্তির পথে এক ধাপ এগোল ইরান
ছবি: এএফপি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy