E-Paper

পহেলগাম নিয়ে দায় এড়াচ্ছে ইসলামাবাদ

পহেলগাম হামলার দায় স্বীকার করেছে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ)। টিআরএফের উত্থান হয় ২০১৯ সালে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সেই সালেই জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদার অবলুপ্তি হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৫ ০৭:৫৬
হামলার দায় স্বীকার করেছে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ)।

হামলার দায় স্বীকার করেছে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ)। —প্রতীকী চিত্র।

পহেলগাম নাশকতার পরেই তড়িঘড়ি নিজেদের দায় ঝেড়ে ফেলেছে ইসলামাবাদ। আর তাতেই বেড়েছে সন্দেহ। ভারত কোনও অভিযোগের তোলার আগেই পাকিস্তানের বক্তব্য, জঙ্গি হামলায় তাদের হাত নেই। সাউথ ব্লক সূত্রের বক্তব্য, পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফের এই দাবি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চোখে ধুলো দেওয়ার অক্ষম চেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়। পহেলগাম-কাণ্ডে তাদের ভূমিকা প্রকাশ্যে চলে এসেছে। আজ সন্ধ্যায় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির দীর্ঘ আলোচনার পুরোটা জুড়েই ছিল পাকিস্তানের দিক থেকে আসা সন্ত্রাস মোকাবিলার নীতি তৈরি করা।

বেশ কিছু দিনের বিরতির পর ইসলামাবাদের সঙ্গে হাতে কলমে প্রায় যুদ্ধের পরিস্থিতিই তৈরি হল বলে মনে করা হচ্ছে। পাকিস্তানের এক সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আজ খাজা বলেন, ‘‘পহেলগামে হামলার সঙ্গে পাকিস্তানের কোনও যোগসূত্র নেই।’’ এখানেই না থেমে তিনি যোগ করেন, ‘‘নাগাল্যান্ড থেকে কাশ্মীর, ছত্তীসগঢ়, মণিপুর এবং দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলিতে বিদ্রোহ চলছে। মনে হচ্ছে, এই হামলায় কোনও বিদেশি হস্তক্ষেপ নেই, বরং স্থানীয় বৃহত্তর বিদ্রোহের ফল!’’


গত কালই পহেলগাম হামলার দায় স্বীকার করেছে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ)। টিআরএফের উত্থান হয় ২০১৯ সালে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সেই সালেই জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদার অবলুপ্তি হয়েছে। তখনই পাক জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই-তইবা-র ‘ছায়া সংগঠন’ হিসেবে উঠে আসে টিআরএফ। সেই সংগঠনেরই পাঁচ-ছ’জন আচমকাই গত কাল দুপুরে পহেলগামে হামলা চালায় বলে গোয়েন্দা সূত্রে খবর।

আজ সকাল থেকেই কূটনৈতিক মহলে আলোচনায় উঠে আসে মাত্র পাঁচ দিন আগে করা কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের মন্তব্য। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, জেনারেল মুনির আইএসআই-কে নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন, এই মুহূর্তে পাকিস্তানে তাঁর ক্ষমতা প্রবল। কাশ্মীরকে মানবদেহের অন্যতম শিরা ‘জাগিউলার ভেন’-এর সঙ্গে তুলনা করে পাকিস্তানের কাছে তার গুরুত্বকে সে দিন বোঝাতে চেয়েছিলেন মুনির। তার ঠিক পরই গত কালের হামলাকে নিছক কাকতালীয় বলে উড়িয়ে দিচ্ছে না বিদেশ মন্ত্রক। মুনির বলেছিলেন ‘‘কাশ্মীরের ব্যাপারে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট। এটা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ শিরা ‘জাগিউলার ভেন’-এর মতো (যা মস্তিষ্ক, ঘাড়, মুখের একাংশ থেকে রক্ত সংগ্রহ করে হৃৎপিন্ডে পৌঁছে দেয়)। কাশ্মীরি ভাইদের নায়কোচিত লড়াই থেকে আমরা নিজেদের সরিয়ে রাখব না।’’ পাশাপাশি ১৮ এপ্রিল পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের খাই গালা এলাকায় এক সভায় জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা লোপ ও উপত্যকার জনসংখ্যায় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের অনুপাত বদলে দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগকে হাতিয়ার করে হামলার ডাক দিয়েছিল লস্কর কমান্ডার আবু মুসা।

পহেলগামে জঙ্গি হামলার পরে কাল বিকেল থেকে গোটা বিশ্বের কড়া নিন্দা, নিহতদের পরিবারের প্রতি শোকবার্তা নয়াদিল্লিতে উপচে পড়লেও তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে নীরব ছিল ভারতের সবচেয়ে কাছের (ভৌগোলিক ভাবে) রাষ্ট্র বাংলাদেশ। সাউথ ব্লক নজরে রেখেছে, পাকিস্তান তথা আইএসআইয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সখ্য ক্রমশই বাড়ছে। গত কাল ঢাকার এই নীরবতা তারই ফলশ্রুতি বলে মনে করছে বিদেশ মন্ত্রক। অবশেষে আজ দুপুরে বাংলাদেশের তরফে ঘটনার নিন্দা করে কয়েক লাইনের বিবৃতি প্রকাশ করা হয়।

ভারতে আশ্রিত বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পহেলগাম-কাণ্ড নিয়ে দীর্ঘ বিবৃতি দিয়েছেন। বলেছেন, ‘সন্ত্রাসবাদীরা মানবতার অগ্রযাত্রাকে থমকে দিতে চায়। তারা মানবতার ঘৃণিত শত্রু।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Pakistan Pahelgam Terror Attack

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy