ইরানের হামলা রুখতে এ বার নতুন প্রতিরক্ষা অস্ত্র ব্যবহার করতে শুরু করল ইজ়রায়েল। রবিবার রাত থেকে সোমবার ভোর পর্যন্ত ইরানের হামলার মুখে ‘বারাক মাগেন’ নামের নতুন অত্যাধুনিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কার্যকর করা হয়েছে। তেমনটাই জানিয়েছে ইজ়রায়েলের সেনাবাহিনী (আইডিএফ)। এই প্রথম ‘বারাক মাগেন’ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে কার্যকর করল ইজ়রায়েল। আইডিএফ-এর বিবৃতি অনুযায়ী, ইজ়রায়েলের নৌবাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্রবাহী নৌকো (মিসাইল বোট) ফ্লোটিল্লা থেকে ‘বারাক মাগেন’ ব্যবহার করে ইরানের আটটি ড্রোন ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। ইজ়রায়েলের কোনও না কোনও শহর লক্ষ্য করে ওই ড্রোনগুলি ছোড়া হয়েছিল।
রবিবার রাত থেকে সোমবার ভোরের মধ্যে ‘এলএআরডি’ ইন্টারসেপ্টরও প্রথম বার ব্যবহার করেছে ইজ়রায়েল। ‘এলএআরডি’ এবং ‘বারাক মাগেন’— উভয় অস্ত্রই ইজ়রায়েলি নৌবাহিনীর সার ৬-ক্লাস যুদ্ধজাহাজে বসানো রয়েছে। আইডিএফ জানিয়েছে, ‘বারাক মাগেন’ বিভিন্ন ধরনের বহিরাগত আক্রমণের বিরুদ্ধে উপযুক্ত প্রতিরক্ষা গড়ে তুলতে পারে। ক্রুজ় মিসাইল, অ্যান্টি-শিপ মিসাইল এবং যে কোনও ধরনের ড্রোনের বিরুদ্ধে এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অত্যন্ত কার্যকর।
আরও পড়ুন:
ইজ়রায়েলের বায়ুসেনার সঙ্গে যোগাযোগ রেখেই কাজ করে তাদের মিসাইল বোট ফ্লোটিল্লা। ইরানের সঙ্গে সাম্প্রতিক সংঘাতের শুরু থেকে এখনও পর্যন্ত ইজ়রায়েলের নৌবাহিনী ২৫টি ড্রোন ধ্বংস করেছে, দাবি আইডিএফ-এর।
কী বিশেষত্ব ‘বারাক মাগেনের’
‘বারাক মাগেন’ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটি তৈরি করেছে ইজ়রায়েল এরোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ় (আইএআই)। ঠিক কোথায় এই ব্যবস্থা প্রথম বার কার্যকর করা হল, ভূমধ্যসাগর না লোহিত সাগর, তা এখনও স্পষ্ট নয়। ইজ়রায়েলের সামুদ্রিক প্রতিরক্ষা কৌশলের ক্ষেত্রে ‘বারাক মাগেন’ নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করল বলে অনেকের মত। বিশেষজ্ঞদের মতে, নৌ-বিমান প্রযুক্তির উল্লেখযোগ্য অগ্রগতিকে চিহ্নিত করে ‘বারাক মাগেন’। ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সাধারণত বেশি উচ্চতার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রকে আটকানোর জন্য তৈরি করা হয়। সেই হিসাবেই তৈরি হয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার নকশা। কিন্তু ‘বারাক মাগেন’ আলাদা। ড্রোন বা সেই ধরনের কোনও নিচু উচ্চতার লক্ষ্যবস্তু, ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্রের মোকাবিলার জন্য এটি তৈরি করা হয়েছে। সাধারণত ব্যবহার করা হয় উপকূলীয় এলাকায়।
আইএআই-এর তথ্য অনুযায়ী, ‘বারাক মাগেন’-এ রয়েছে উন্নত রাডার, ইলেক্ট্রো-অপটিক্যাল সেন্সর এবং ইন্টারসেপ্টর। ১৫০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বের লক্ষ্যবস্তুতেও তা আঘাত হানতে সক্ষম। যে কোনও প্ল্যাটফর্মের সঙ্গেই এটি খাপ খাইয়ে নিতে পারে। সার ৬-ক্লাস যুদ্ধজাহাজে এর অবস্থান বিশেষ ভাবে নজর কেড়েছে। ইজ়রায়েল নৌবাহিনীর অন্যতম সম্পদ হয়ে উঠেছে এই ‘বারাক মাগেন’। আপাতত ড্রোনের মতো ছোট লক্ষ্যবস্তুতে ‘বারাক মাগেন’-এর প্রথম ব্যবহার সফল হয়েছে। কিন্তু বৃহত্তর হামলার বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে এখনও প্রশ্ন রয়েছে।
গত শুক্রবার ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইজ়রায়েল। তারা দাবি করে, আমেরিকার সঙ্গে পরমাণু চুক্তিতে সম্মত না হওয়ায় এই হামলা। ইজ়রায়েলের হামলায় নিহত হন ইরানের চার শীর্ষ সেনাকর্তা এবং ন’জন পরমাণু বিজ্ঞানী। আমেরিকার সমর্থনেই এই হামলা হয়। প্রত্যাঘাতের হুঁশিয়ারি তখনই দিয়ে রেখেছিল তেহরান। তারাও পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র বর্ষণ শুরু করে। সেই থেকে পশ্চিম এশিয়ার এই দুই ‘চিরশত্রু’র সংঘাত চলছে। এ বার তাতেই নতুন প্রতিরক্ষা অস্ত্র কার্যকর করল ইজ়রায়েল।