বড় হয়েছি গ্রীষ্মপ্রবণ ভারতবর্ষে। কর্মসূত্রে বাবা কিছু দিন উত্তর ভারতে ছিলেন। শীতকালে তখন মনটা কলকাতার জন্য পালাই পালাই করত। তখনও জানি না, আমার জন্য অপেক্ষা করে রয়েছে মেরু-ঘূর্ণাবর্ত।
প্রথম যখন এ দেশে পা দিই, মেরু-ঘূর্ণাবর্ত বা পোলার ভর্টেক্স কথাটার মানেও জানতাম না। কবে শব্দটা প্রথম শুনেছি, তা মনে না পড়লেও হিমাঙ্কের নীচের তাপমাত্রার সঙ্গে প্রথম মোলাকাতের কথা দিব্যি মনে আছে।
বছর কুড়ি আগের কথা। তখনও হাতে হাতে স্মার্টফোন আসেনি। ফেসবুক-হোয়াটস্যাপও আসেনি। কাল কী রকম আবহাওয়া থাকবে, ঠান্ডা থেকে বাড়ির বয়স্ক ও বাচ্চাদের বাঁচাতে কী কী করা উচিত, তা নিয়ে রাশি রাশি ‘ফরোয়ার্ড’ও আসত না। প্রথম শীতে প্রতি পদে ঠেকে শিখেছি, কী ভাবে এখানে বাঁচতে হবে। তখন ম্যানহাটনের একটা ছোট্ট অ্যাপার্টমেন্টে থাকতাম। কাঁপতে কাঁপতে ‘থার্মোস্ট্যাট’ চালিয়েছি, ঘর যতটা সম্ভব বেশি গরম রাখা যায়। পরের দিন নাক থেকে রক্ত বার হতে শুরু করে দিল। ডাক্তার বললেন, ঘরের তাপমাত্রা খুব বেশি করে রাখার ফলেই এই কাণ্ড। কয়েক দিন পরে জলের পাইপ ফেটে আর এক বিপদ। এক বন্ধু উপদেশ দিল, সব সময়ে অল্প করে কল খুলে রাখতে হবে, যাতে পাইপে বরফ জমলেও ফেটে না যায়। ছোট হিটার কী করে ব্যবহার করতে হয়, তা-ও শিখতে হয়েছে। এখানে বাড়ি কাঠের তৈরি। হিটার থেকে নানা ভাবে আগুন ধরে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ঠিক মতো হিটার চালাতে না-পারলে তাই সমূহ বিপদ। দরজা-জানলা বন্ধ করার মতো সাধারণ কাজটুকুও তখন দুঃসাধ্য মনে হত। যতই জানলা বন্ধ করি না কেন, জানলার তলা দিয়ে হাড়হিম হাওয়া ঢোকে। হাওয়া ঢোকা বন্ধ করতে কী করে জানলা ‘সিল’ করা যায়, তা-ও মাথা খাটিয়ে বার করতে হয়েছে। সব থেকে অসুবিধে হত সেন্টিগ্রেড আর ফ্যারেনহাইটের ফারাক বুঝতে। চিরকাল জেনে এসেছি, শূন্য ডিগ্রিতে জল জমে বরফ হয়ে যায়। সেটা সেন্টিগ্রেডের মাপ। এখানে ব্যবহৃত হয় ফ্যারেনহাইট, যে মাপকাঠিতে জল জমে যায় ৩২ ডিগ্রিতেই!