Advertisement
E-Paper

ইহুদি এভার গল্প ইনস্টাগ্রামে

হাঙ্গেরীয় ইহুদি এভা হেমানের এই দিনলিপি অতীতে ছেপে প্রকাশিত হলেও নজরে আসেনি এত দিন। আর এক ইহুদি কিশোরী আন ফ্রাঙ্কের ডায়েরির মতো জনপ্রিয়তাও পায়নি। বর্তমান রোমানিয়ায় ওরাদা শহরে কিশোরী এভার একটা মূর্তি রয়েছে শুধু।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৯ ০৩:২০
এভা হেমান (বাঁ দিকে)। ‘এভা’স স্টোরি’তে এভার চরিত্রে অভিনয় করছেন এই কিশোরী অভিনেত্রী। ছবি ইনস্টাগ্রাম থেকে।

এভা হেমান (বাঁ দিকে)। ‘এভা’স স্টোরি’তে এভার চরিত্রে অভিনয় করছেন এই কিশোরী অভিনেত্রী। ছবি ইনস্টাগ্রাম থেকে।

তেরো বছরের জন্মদিনে ছোট্ট মেয়েটা ডায়েরিতে লিখেছিল, বড় হয়ে সে সাংবাদিক হবে। বিয়ে করবে এক ইংরেজকে। ১৯৪৪ সালের সেই ফেব্রুয়ারির এক মাসের মাথায় হাঙ্গেরিতে ঢুকে পড়েছিল নাৎসি বাহিনী। জীবনের মতো ইহুদি খুকির ডায়েরি থেকে উধাও হয়ে গিয়েছিল স্বপ্নের কথা। বদলে সে লিখেছিল, ‘‘ডায়েরি তুমিই হলে সবচেয়ে সুখী। আমরা যে দুদর্শার শিকার, তা তুমি টেরও পাচ্ছ না।’’

হাঙ্গেরীয় ইহুদি এভা হেমানের এই দিনলিপি অতীতে ছেপে প্রকাশিত হলেও নজরে আসেনি এত দিন। আর এক ইহুদি কিশোরী আন ফ্রাঙ্কের ডায়েরির মতো জনপ্রিয়তাও পায়নি। বর্তমান রোমানিয়ায় ওরাদা শহরে কিশোরী এভার একটা মূর্তি রয়েছে শুধু। এ বার ইনস্টাগ্রামে ছোট ছোট ভিডিয়োর আকারে এভার সেই দিনলিপির এক-একটি পাতাই তুলে ধরছেন ইজ়রায়েলের বাবা-মেয়ে পরিচালক জুটি, মাতি এবং মায়া কোচাভি।

নাৎসি-আতঙ্ক তখন সদ্য ছায়া ফেলছে এভাদের পরিবারে। ১৯৪৪ সালের ৩১ মার্চ সে লিখল, ‘‘আজ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ইহুদিদের পোশাকে লাগাতে হবে হলুদ বড় তারা চিহ্ন। কত বড় চিহ্ন তা-ও বলে দেওয়া হয়েছে। জ্যাকেট বা কোটে সেলাই করে লাগিয়ে রাখতে হবে। এটা শুনেই দিদিমা এমন অসুস্থ হয়ে পড়ল যে আমাদের ডাক্তার ডাকতে হল।’’ পয়লা মে ইজ়রায়েলে ইহুদি স্মরণ দিবসে প্রথম ইনস্টাগ্রামে এসেছে ‘এভা’স স্টোরি’। অভিনেতা-অভিনেত্রী ছাড়াও কয়েক’শো লোকলস্কর নিয়ে এখনও চলছে শুটিং। ইউক্রেনের লোভিউ শহরে তৈরি হয়েছে সেট। ২৭ বছরের মায়ার কথায়, ‘‘নতুন প্রজন্মের কাছে হলোকস্টের ভয়াবহ ইতিহাস তুলে ধরতে হলে আমাদের নতুন ও জোরালো মাধ্যমের কথা ভাবতে হবে। এভা’স স্টোরি’ সে চেষ্টাই করেছে।’’

ডায়েরি লেখা শুরু করার পরে মাত্র ১০৮ দিন সময় পেয়েছিল এভা। খারাপ সময় যে খুব দ্রুত এগিয়ে আসছে, পাতায় পাতায় ছিল তার প্রকাশ। ১০ মে সে লিখেছে, ‘‘আরও কী অপেক্ষা করে আছে ভাবতেও পারছি না। আমার মনে হত, এটাই বুঝি সবচেয়ে কঠিন সময়। এখন নিজেই বুঝেছি, পরিস্থিতি আরও কঠিন হতে পারে। এত দিন আমাদের খাবার ছিল। কিন্তু এখন কী খাব তা-ও জানি না।’’ ৩০ মে এভা লিখেছে, ‘‘ডায়েরি আমি মরে যেতে চাই না। এখনও আমি বাঁচতে চাই। গোটা শহরে যদি শুধুমাত্র আমি বাঁচি তা-ও হবে।’’ এটাই ছিল তার শেষ লেখা। তিন দিন বাদে হাঙ্গেরি থেকে আউশভিৎস কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছিল এভাকে। ১৭ অক্টোবর গ্যাসচেম্বারে মৃত্যু হয় তার।

ইজ়রায়েলের যুবসমাজকে ইহুদি নিধন বা হলোকস্ট সম্পর্কে জানাতে পরিচালক বাবা-মেয়ের কাজ বিস্তর সমালোচিত হয়েছে। আপত্তিটা মূলত সোশ্যাল মিডিয়াকে মাধ্যম করায়। যার জবাবে এ প্রজন্মের প্রতিনিধি মায়া বলেছেন, ‘‘ইনস্টাগ্রামে যে বিষয়গুলি থাকে তা অনেকের চোখেই হালকা ও অগভীর। কিন্তু আপনারা যদি এমন বিষয় খোঁজেন যা শক্তিশালী, গুরুত্বপূর্ণ, এমনকি বিপ্লব সৃষ্টি করতে পারে, তা-ও কিন্তু পাবেন।’’ মায়ারা মনে করছেন, হলোকস্টের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়ার মতো মানুষের সংখ্যা কমে আসছে। মানুষ সেই স্মৃতি মনে করতে চায় না, অথচ ভুলতেও পারে না। সেই ইতিহাসেরই নয়া মুখ হবে এভা।

Eva Heyman Holocaust Jew Instagram
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy