Advertisement
১৯ মে ২০২৪

সাংবাদিক গ্রেফতারে কোণঠাসা হাসিনা

বিশিষ্ট এক সাংবাদিক-সম্পাদককে গ্রেফতার করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই দেশজোড়া চাপের মুখে তাঁকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হল বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু এই ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় এক মন্ত্রীর কাজকর্ম নিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের ভাবমূর্তিতে কালি পড়ল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঢাকা শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৫ ০২:৫১
Share: Save:

বিশিষ্ট এক সাংবাদিক-সম্পাদককে গ্রেফতার করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই দেশজোড়া চাপের মুখে তাঁকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হল বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু এই ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় এক মন্ত্রীর কাজকর্ম নিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের ভাবমূর্তিতে কালি পড়ল।

একটি অনলাইন সংবাদপত্রের সম্পাদক প্রবীর সিকদারকে রবিবার রাতে ঢাকায় তাঁর অফিস থেকে তুলে নিয়ে য়ায় গোয়েন্দা পুলিশ। পরে পুলিশ জানায়, ফেসবুকে তাঁর লেখা একটি পোস্টের কারণে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে সিকদারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ফরিদপুরের সাংসদ স্থানীয় সরকার মন্ত্রী খন্দকার মোশারফের মানহানির অভিযোগ উঠেছে সিকদারের ফেসবুক পোস্টটিতে। মঙ্গলবার আদালত তাঁকে তিন দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতে পাঠায়।

কিন্তু সিকদারের গ্রেফতারির বিরুদ্ধে মৌলবাদী-বিরোধী সব মহল প্রতিবাদে সরব হয়। দেশের সব বড় শহরে গণজাগরণ মঞ্চ ও বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখায়। বিশিষ্ট জন এবং শাসক আওয়ামি লিগের নেতাদের একাংশও সিকদারের গ্রেফতারের বিরোধিতা করেন। অবশেযে চাপের মুখে পুলিশ বুধবারই এই সাংবাদিককে আদালতে তোলে। সরকারি কৌঁসুলি তাঁর জামিনের বিরোধিতা না-করায় সিকদার মুক্তি পান।

ফরিদপুরের প্রবীর সিকদার বাংলাদেশে পরিচিত মুখ। ১৯৭১-এ তাঁর পরিবারের ১৪ জনকে হত্যা করেছিল রাজাকার ও পাকিস্তানের সেনারা। ২০০১ সালে ফরিদপুরের রাজাকার শিরোমণি মুসা বিন সামশেরের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন লেখায় মৌলবাদীরা তাঁকে খুনের চেষ্টা করে। বোমায় একটি পা হারান সিকদার। সেই সময়ে প্রধানমন্ত্রী হাসিনাই তাঁকে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানোয় তিনি প্রাণে বাঁচেন। মৌলবাদের বিরুদ্ধে বরাবর সরব প্রবীণ সেই সাংবাদিককে পুলিশ হাতকড়া পরিয়ে ঢাকা থেকে ফরিদপুরে নিয়ে যাচ্ছে— এই ছবি প্রকাশ হওয়ায় বাংলাদেশে ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে ওঠা সামাজিক মাধ্যমে নিন্দার ঝড় ওঠে।

সম্পর্কে শেখ হাসিনার বেয়াই খন্দকার মোশারফ সম্প্রতি সরকারে প্রভাবশালী হয়ে উঠেছেন। পাশাপাশি জোর করে সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার নানা অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। তাঁর এই সব কাজের বিরুদ্ধে কলম ধরায় স্থানীয় বেশ কিছু সাংবাদিককে মিথ্যে মামলায় হেনস্থা, এমনকী মারধরও খেতে হয়েছে। মোশারফের বিরুদ্ধে এমনই একটি ঘটনা প্রকাশ্যে আনেন সিকদার। অভিযোগ, ফরিদপুরের প্রাণকেন্দ্রে অরুণ গুহ মজুমদারকে সপরিবার উচ্ছেদ করে তাঁর প্রায় ২০ কোটি টাকার সম্পত্তির দখল নিয়েছে এই মন্ত্রীর দলবল। সম্পত্তির মালিককে অস্ত্রের মুখে বিক্রির দললে সই করানো হয়েছে বলেও অভিযোগ।

এই খবর প্রকাশের পর থেকেই প্রাণনাশের হুমকি পেতে থাকেন সিকদার। তিনি পুলিশে গেলে অভিযোগ নেওয়া হয়নি। তার পরেই এই সাংবাদিক মন্ত্রী ও কয়েক জনের নাম উল্লেখ করে ফেসবুকে লেখেন, তিনি খুন হলে এঁরা দায়ী থাকবেন। কিন্তু এ ঘটনায় মন্ত্রীর মানহানি হয়েছে অভিযোগ করে পুলিশ সিকদারকেই গ্রেফতার করে মামলা রুজু করে।

বাংলাদেশে মৌলবাদী স্লিপার সেল তথাকথিত আনসার আল বাংলার হাতে এ পর্যন্ত চার জন ব্লগ লেখক খুন হয়েছেন। এঁদের মধ্যে তিন জন ঢাকায়, এক জন সিলেটে। কিন্তু হুমকি পেয়েছেন অনেক বিশিষ্ট জন। অভিযোগ, তাঁরা হুমকির বিষয়টি পুলিশে জানালেও প্রশাসন উদাসীন। এই পরিস্থিতিতে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশের মৌলবাদ-বিরোধী মহলে। প্রশাসনের প্রতি অনাস্থায় অনেকে গোপনে দেশ ছাড়ছেন। এই পরিস্থিতিতে সিকদারের গ্রেফতার অনেক প্রশ্ন তুলে ধরল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Journalist Probir Sikdar Faridpur court three-day
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE