Advertisement
E-Paper

কিশোরগঞ্জে সে দিন হাজির ছিল চক্রীও

তার নাম জানা গিয়েছিল তখনই, যখন আইএস-যোগ সন্দেহে বর্ধমান স্টেশনে ধরা পড়ল বীরভূমের যুবক মুসা। জানা গিয়েছিল, পশ্চিমবঙ্গে ইসলামিক স্টেট বা আইএসের সংগঠন বিস্তারের প্রধান কারিগর হল বাংলাদেশের নাগরিক আবু সুলেমান।

সুরবেক বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৬ ০৪:২০
আইএস সংগঠক এই সেই সুলেমান, দাবি গোয়েন্দাদের।

আইএস সংগঠক এই সেই সুলেমান, দাবি গোয়েন্দাদের।

তার নাম জানা গিয়েছিল তখনই, যখন আইএস-যোগ সন্দেহে বর্ধমান স্টেশনে ধরা পড়ল বীরভূমের যুবক মুসা। জানা গিয়েছিল, পশ্চিমবঙ্গে ইসলামিক স্টেট বা আইএসের সংগঠন বিস্তারের প্রধান কারিগর হল বাংলাদেশের নাগরিক আবু সুলেমান। এ বার গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, ক’দিন আগে বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জে ইদের জমায়েতে সন্ত্রাসী হামলার সময়ে সুলেমান নিজেও ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল!

গত ৭ জুলাই কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় উপমহাদেশের বৃহত্তম ওই ইদ-সমাবেশে বড় নাশকতার ছক কষেছিল জঙ্গিরা। তাদের পরিকল্পনা পুরোপুরি সফল না-হলেও হানাদারিতে এক পুলিশ ও দু’জন সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়, আহত হন দশ-বারো জন। এক জঙ্গিও মারা পড়ে।

কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা আইবি’র খবর: শোলাকিয়া-কাণ্ডের পরে কয়েক জন হামলাকারীর ছবি ও ভিডিও-ফুটেজ তদন্তকারীদের হাতে এসেছে। তাদের এক জনের ছবির সঙ্গে সন্দেহজনক কিছু ফেসবুক প্রোফাইল ও ওয়েবসাইটের ছবি মিলিয়ে দেখে গোয়েন্দারা মোটামুটি নিশ্চিত, এই সেই আবু সুলেমান। যে কি না মুসার সঙ্গে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট মারফত পরিচিত হওয়ার পরে লাগাতার তার মগজ ধোলাই করেছে। এমনকী, পশ্চিমবঙ্গে এসে একাধিক বার মুসার সঙ্গে মোলাকাতও করে গিয়েছে।

এবং এ হেন বিপজ্জনক লোকটি এই মুহূর্তে ভারতেই কোথাও ঘাপটি মেরে লুকিয়ে আছে বলে গোয়েন্দাদের একাংশের অনুমান। তার নাগাল পাওয়ার চেষ্টা চলছে। যদিও কাজটা যে যথেষ্ট কঠিন, তা মানতে দ্বিধা নেই গোয়েন্দা মহলে।

তদন্তকারী সূত্রের খবর: বাংলাদেশের রাজশাহির বাসিন্দা, বছর ছাব্বিশ-সাতাশের ছেলেটির আসল নাম কিন্তু মোটেই আবু সুলেমান নয়। ওটা আইএস সংগঠনে তার নাম। ঠিক যে ভাবে মহম্মদ ইমওয়াজি হয়ে যায় জেহাদি জন। সুলেমানের আসল নাম এখনও গোয়েন্দাদের জানা নেই। ‘‘আগেই খবর ছিল, গুলশন ও কিশোরগঞ্জে জঙ্গি হানাদারির পিছনে সুলেমানের হাত আছে। তবে জানতাম না, ঘটনার সময়ে ও সশরীরে শোলাকিয়ায় গিয়েছিল।’’— বলেন এক গোয়েন্দা-আধিকারিক।

তদন্তকারীদের বক্তব্য, মাস আড়াই আগে সুলেমান মালদহে এসে মুসার সঙ্গে দেখা করে। তখন সে মুসাকে বলে গিয়েছিল, উত্তর ভারতে আইএস ক্যাডার নিয়োগ করতে যাচ্ছে। এক অফিসারের পর্যবেক্ষণ, ‘‘ওর কথা সত্যি হলে ধরে নিতে হয়, উত্তর ভারত ঘুরে সুলেমান ফের বাংলাদেশে ঢুকেছিল। কিশোরগঞ্জের ছবিগুলো সে দিকেই আঙুল তুলছে।’’

গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, সুলেমান রীতিমতো পাকা মাথার ‘করিৎকর্মা’ জঙ্গি। তথ্য-প্রযুক্তিতে চৌকস। আনকোরা ছেলেদের নানা প্রলোভন দেখিয়ে দলে টানতেও তার জুড়ি মেলা ভার। যেমন টেনেছিল মুসাকে।

কী রকম?

তদন্তকারীদের দাবি, মুসাকে টোপ দিয়েছিল সুলেমান। বলেছিল পশ্চিমবঙ্গে এমন কিছু নৃশংস খুন-খারাপি চালাতে, যাতে চার দিকে শোরগোল পড়ে যায়, মানুষ আতঙ্কে শিউরে ওঠে। বিনিময়ে মুসা ও তার পরিবারের আজীবন ভরণপোষণের দায়িত্ব নেবে ইসলামিক স্টেট।

মুসা টোপ গিলে ফেলে। ‘‘শুধু সে নয়, তার মতো এ রাজ্যের আরও কিছু ছেলে সুলেমানের ফাঁদে পা দিয়েছে।’’— মন্তব্য এক তদন্তকারীর। গোয়েন্দা-সূত্রের খবর: জেরায় মুসা বলেছে, সুলেমান যেমন তাকে বীরভূমে আইএসের হয়ে ক্যাডার নিয়োগ ও একাধিক হত্যার দায়িত্ব দিয়েছিল, তেমন মালদহ ও উত্তরবঙ্গের কিছু জেলাতেও তার ‘এজেন্ট’ মোতায়েন। মুসার অবশ্য দাবি, সেই লোকগুলোর পরিচয় তার জানা নেই।

গত ৪ জুলাই বর্ধমান স্টেশনে ধরা পড়া মুসার বিরুদ্ধে রুজু হওয়া মামলাটি সিআইডি’র হাত থেকে গিয়েছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-র হাতে। মুসা আপাতত তাদেরই হেফাজতে।

Kingpin Kishoreganj
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy