সালটা ১৯৯৭। এক সর্বভারতীয় ইংরেজি দৈনিকের সাংবাদিক হিসেবে এসেছিলাম শ্রীলঙ্কায়। তার পর থেকে এতগুলো বছরে নানা সংবাদ সংস্থায় চাকরি করেছি। থাকি কলম্বোয়। সাংবাদিকতাই করি। তবে এখনও আমি ভারতীয় নাগরিক। মাঝে মাঝে দেশে যাই।
১৯৯৭ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত এ দেশে যে সময়টা দেখেছি, একেবারেই সুখকর নয় সেটা। যুদ্ধ দেখেছি, প্রায়শই আত্মঘাতী বিস্ফোরণ। তবু কেন রয়ে গিয়েছি দ্বীপরাষ্ট্রে? প্রশ্নটা উঠলেই এখনকার ভারত আর এখনকার শ্রীলঙ্কার একটা তুল্যমূল্য বিচার চলতে থাকে মনের মধ্যে। সামাজিক, সাংস্কৃতিক আর রাজনৈতিক মেলবন্ধনের নিরিখে কোন দেশটাকে এগিয়ে রাখব আমি?
শ্রীলঙ্কায় যুদ্ধ আর সন্ত্রাস থেমেছে। তার পরে এখন আমার মনে হয়, এ দেশের জাতিগত সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান আর বেশি দূরে নেই। কারণ, প্রশ্নটা তামিলদের বা তামিলপ্রধান প্রদেশের ক্ষমতায়নের। সংখ্যাগুরু সিংহলি এবং সংখ্যালঘু তামিলদের মধ্যে সংঘাতটা সামাজিক বা সাংস্কৃতিক নয়, রাজনৈতিক। আর রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান আলোচনার মাধ্যমেই সম্ভব। এত যুদ্ধ কিন্তু শেষ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার সামাজিক কাঠামোটাকে ভেঙে দিতে পারেনি। জাতি-ধর্মের ভেদাভেদ এ দেশেও আছে, এখানকার রাজনীতিতেও সে প্রসঙ্গ আসে। কিন্তু সেই সুর অনেক স্তিমিত। এ দেশের তামিলদের সঙ্গে সিংহলিদের সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় ভাবেও একাত্ম হতে আমি দেখেছি।
আর এই সামাজিক কাঠামোর প্রসঙ্গ উঠলেই এখনকার ভারতের কথা মনে পড়ে। উগ্র হিন্দুত্ব যে কাঠামোটাকে নষ্ট করে দিচ্ছে। হিন্দু মুসলিমের বা মুসলিম হিন্দুর প্রেমে পড়লে, বিয়ে করলে, কিংবা কোনও মুসলিম গোমাংস খেলেই তা ‘দেশবিরোধী’ এবং পিটিয়ে মারার পক্ষে আদর্শ যুক্তি! সব চেয়ে খারাপ লাগে, এতে বিজেপির সরকারগুলিরই প্রচ্ছন্ন সম্মতি রয়েছে।
শ্রীলঙ্কায় এসে দেখেছি, এখানকার ভোটের ধরনটা মোটামুটি ভারতেরই মতো। ১৯৯৬ পর্যন্ত নিজের দেশে আমি ভোট দিয়েছি। আমার মতে, এ বারের লোকসভা ভোটের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ, এই ভোটটাই ঠিক করে দেবে ভারতের ভবিষ্যৎ গতিপথ। ‘ভারত মানে বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য’— এই চিরকালীন সংজ্ঞাটা কি অক্ষত থাকবে? ভাষা, পোশাক, ধর্ম, খাদ্য, জীবনযাত্রার স্বাধীনতা কি থাকবে সাধারণ মানুষের?
এ সবই ভাবায়।
লেখক সাংবাদিক
অনুলিখন: সূর্য্য দত্ত
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy