E-Paper

চিকিৎসা কই? অস্ত্রোপচারও চলছে অ্যানাস্থেশিয়া ছাড়াই

প্রয়োজন ‘কসমেটিক সার্জারি’র। কিন্তু কী ভাবে সম্ভব সেই অস্ত্রোপচার, অর্থের জোগানই বা আসবে কোথা থেকে, ভেবে পাচ্ছেন না সাইবার সিকিয়োরিটি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্রীটি।

আরুণি মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৫ ০৭:৪২
বাড়ির বারান্দা থেকে দেখছেন নিজের শহরের ধ্বংস-চিত্র।

বাড়ির বারান্দা থেকে দেখছেন নিজের শহরের ধ্বংস-চিত্র। আয়া জাইদের পাঠানো ছবি।

চিত্র এক: বেখেয়ালে ফুটন্ত চা চলকে পড়েছিল পায়ে। পুড়ে গিয়েছিল পায়ের পাতার কিছুটা অংশ। কিন্তু শুশ্রুষার জন্য মেলেনি প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পরিষেবা। ফলে ক্ষত শুকোয়নি। এখন প্রয়োজন ‘কসমেটিক সার্জারি’র। কিন্তু কী ভাবে সম্ভব সেই অস্ত্রোপচার, অর্থের জোগানই বা আসবে কোথা থেকে, ভেবে পাচ্ছেন না সাইবার সিকিয়োরিটি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্রীটি।

চিত্র দুই: ধুলোয় মিশেছে স্থানীয় অর্থনীতি। নেই চাকরি, প্রায় বন্ধ ব্যাঙ্ক পরিষেবাও। অন্য দিকে, খাবারের দাম চোখ রাঙাচ্ছে রোজ। বিদেশ থেকে অনেকে গাজ়াবাসীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে অর্থ সাহায্য পাঠাচ্ছেন। কিন্তু সেই অনুদানও ব্যাঙ্ক থেকে তোলার পথে অনেক বাধা। সব থেকে বড় সমস্যা, স্থানীয় দালালেরা। তাঁদের মাধ্যমে ব্যাঙ্ক থেকে অর্থ তুলতে গেলে চোকাতে হবে মোটা কমিশন।

চিত্র তিন: প্রাণ বাঁচাতে বাড়ি ছেড়ে ত্রাণ শিবিরে সপরিবার আশ্রয় নিতে হয়েছিল তাঁকে। সম্প্রতি মিলেছে ঘরে ফেরার সুযোগ। প্রায় ১০ কিলোমিটার হেঁটে, ভগ্ন-শহর পেরিয়ে বাড়ি ফিরেছেন তিনি। মারণাস্ত্রের আঘাত থেকে তাঁর পরিবার প্রাণে বাঁচলেও, ধুলোয় মিশেছে তাঁদের বাড়ির একাংশ। বাড়ির কী কী জিনিস এখনও অক্ষত রয়েছে, তা দেখে নেওয়ার পাশাপাশি ওই যুবতীর চিন্তা, কী করে জোটাবেন দু’বেলার খাবার!

তিনি আয়া জাইদ। প্যালেস্টাইনেই রয়েছেন এখন সাইবার সিকিয়োরিটি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শেষ সিমেস্টারের এই ছাত্রী। পরিকল্পনা ছিল, পড়াশোনার শেষে মোটা বেতনের কোনও পদে যোগ দেবেন। কিন্তু যুদ্ধ ভেস্তে দিয়েছে তাঁর যাবতীয় পরিকল্পনা। বন্ধ পড়শোনাও। সে সব ছেড়ে আয়া জাইদ এখন ভাবছেন, কী ভাবে বেঁচে থাকবেন আজকের দিনটায়! গাজ়া ভূখণ্ডের অনেকটাই এখন ইজ়রায়েলি বাহিনীর হাতে। হামাস-নিধনের লক্ষ্যে গাজ়ার আরও অংশ দখলে নিতে পারে ইজ়রায়েল। আয়া জানালেন, গাজ়া ভূখণ্ডের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি রাফা এবং জাবালিয়া এলাকায়। জাবালিয়া শহরেরই বাসিন্দা আয়া। তাঁর কথায়, ‘‘যে দিকে চোখ যায়, শুধুই ধ্বংস-যজ্ঞ। একটি বাড়িও আস্ত নেই। এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা বলেও কিছু নেই।’’

সম্প্রতি হোয়াইট হাউসে ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে পাশে বসিয়ে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, তিনি চান যে এই যুদ্ধ থামুক। আয়ার মতে, আমেরিকা চাইলে এই যুদ্ধকে থামাতেই পারে। তাঁর কথায়, ‘‘যুদ্ধের অবসান যদি উদ্দেশ্যই হয়, তা হলে পদক্ষেপ করতে হবে। সাংবাদিক সম্মেলন করে কিছু হবে না।’’

ইজ়রায়েলি হানায় মাটিতে মিশেছে গাজ়া ভূখণ্ডের বহু হাসপাতাল। কার্যত ভেঙে পড়েছে স্বাস্থ্য পরিষেবা। আয়া বলছিলেন, ‘‘জরুরি ওষুধ কিংবা পেনকিলারের আকাল। কেউ জখম হলে যন্ত্রণা সহ্য করা ছাড়া উপায় থাকে না। অনেক সময়, অ্যানাস্থেশিয়া ছাড়াই চলছে অস্ত্রোপচার।’’ ইজ়রায়েলি কর্তৃপক্ষের দীর্ঘদিনের অভিযোগ, গাজ়া ভূখণ্ডের হাসপাতালগুলিকে নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহার করছে হামাস বাহিনী। যদিও এই যুক্তি মানতে নারাজ গাজ়ার এই যুবতী। তাঁর কথায়, ‘‘হাসপাতালগুলি আহতদের সেবার কাজে ব্যবহার করা হয়েছে, হচ্ছেও। বহু ক্ষেত্রে বোমা পড়ার সময়ে সাধারণ মানুষ হাসপাতালে আশ্রয় নেন। প্রকৃত প্রমাণ ছাড়াই ইজ়রায়েলের দাবি, হাসপাতালগুলিতে নাকি হামাসের তৈরি সুড়ঙ্গগুলি এসে মেশে। এই দাবি ঠিক নয়।’’

(চলবে)

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

hamas Israel War

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy