Advertisement
২২ মে ২০২৪
Myanmar

এই অভ্যুত্থান গণতন্ত্রের জন্যই, দাবি সেনাকর্তার

শীঘ্রই নির্বাচনের কথা মুখে বললেও কবে দিন ঘোষণা হবে, তা নিয়ে খোলসা করেননি সেনাপ্রধান।

বন্দুক উঁচিয়ে: বিক্ষোভকারীদের সামলাতে তৈরি পুলিশ। মঙ্গলবার ইয়াঙ্গনে। রয়টার্স।

বন্দুক উঁচিয়ে: বিক্ষোভকারীদের সামলাতে তৈরি পুলিশ। মঙ্গলবার ইয়াঙ্গনে। রয়টার্স।

ইয়াঙ্গন শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৫:০২
Share: Save:

ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি আর হবে না। দেশের মানুষের উদ্দেশে টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে এমন বার্তাই দিলেন মায়ানমারের সেনা প্রধান জেনারেল মিন আউং লায়াং। নতুন জুন্টা প্রধান জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন শাসন করার জন্য তাঁরা এ বারের অভ্যুত্থান ঘোষণা করেননি। বরং দেশে সুশৃঙ্খল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যেই তাঁদের এই অভ্যুত্থান। সেই জন্য খুব শীঘ্রই নির্বাচনের ব্যবস্থা করে জয়ী দলের হাতে দেশের শাসনভার তুলে দিতে তাঁরা প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন জেনারেল মিন।

এর আগে ৪৯ বছরের সেনাশাসন দেখেছে মায়ানমার। ২০১১ সালে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোট হওয়ার পরে ক্ষমতা হস্তান্তর হয়েছিল আউং সান সু চি-র দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি)-র হাতে। দশ বছরের মাথায় মায়ানমারে ফের সেনা অভ্যুত্থান নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে গোটা বিশ্ব। সু চি-সহ প্রথম সারির সব নেতা-নেত্রীই এখন গৃহবন্দি। দেশের মানুষ সেনার চোখ রাঙানি উপেক্ষা করেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে রাস্তায় নামছেন রোজ। কিন্তু সেনার দাবি, গত নভেম্বরের নির্বাচনে কারচুপি করে জিতেছিল সু চি-র দল। তাই তাদের হটাতেই এ বার দেশ শাসনের রাশ তারা নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছে।

গতকাল জলপাইরঙা সেনা পোশাকে ভাষণ দিয়েছেন মিন। অভ্যুত্থান ঘোষণার পরে এই প্রথম প্রকাশ্যে দেখা যায় তাঁকে। শীঘ্রই নির্বাচনের কথা মুখে বললেও কবে দিন ঘোষণা হবে, তা নিয়ে খোলসা করেননি সেনাপ্রধান। শুধু বলেছেন, জরুরি অবস্থা কেটে যাওয়ার পরেই সব দলকে শামিল করে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু হবে। গত ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থান ঘোষণার পরেই সেনা জানিয়ে দিয়েছিল আপাতত এক বছরের জন্য গোটা দেশে কার্যকর থাকবে জরুরি অবস্থা।

সেনাপ্রধান মুখে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বললেও সেই আশ্বাসে আস্থা রাখতে রাজি নন দেশের অধিকাংশ মানুষ। কাল শিক্ষক ও চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ পথে নেমেছিল। আজও রাজধানী নেপিদ, ইয়াঙ্গনের মতো শহরে সরকার-বিরোধী বিক্ষোভে শামিল হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। কাল থেকেই মার্শাল আইন চালু করে দেশ জুড়ে রাতের কার্ফু জারি করেছে সেনা। পাঁচ জনের বেশি জমায়েতও বারণ। কিন্তু গণতন্ত্রকামী বিক্ষোভকারীরা সেই নিষেধ শোনেননি।

এত দিন সংযত থাকলেও আজ বিক্ষোভকারীদের হটাতে শূন্যে রবার বুলেট ছুড়তে দেখা গিয়েছে পুলিশকে। আশঙ্কা, আর বেশি দিন এ ভাবে বিক্ষোভ প্রদর্শন মেনে নেবে না সেনা সরকার। আজই ম্যান্ডালে-তে ফের বিক্ষোভকারীদের নিশানা করে জলকামান চালিয়েছে পুলিশ। নেপিদ-তেও কালকের মতো চলেছে জলকামান আজ। ডজনখানেক বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়েছে বলেও খবর।

আজ দিনভর সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে নানা ভিডিয়ো। কোথাও পুলিশের গুলির ভয়ে ছুটতে দেখা গিয়েছে বিক্ষোভকারীদের একাংশকে। কোথাও শান্তিপূর্ণ ভাবে প্ল্যাকার্ড হাতে বসে থাকতে দেখা গিয়েছে ছাত্রছাত্রীদের। নোবেলজয়ী নেত্রী সু চি-কে মুক্তির দাবি
জানিয়েছেন তাঁরা।

এই পরিস্থিতিতে মায়ানমার সরকারের সঙ্গে সমস্ত কূটনৈতিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার কথা ঘোষণা করেছেন নিউজ়িল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডের্ন। সেনাকর্তাদের নিউজ়িল্যান্ডে প্রবেশের ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে।
আগামী শুক্রবার মায়ানমার নিয়ে বিশেষ বৈঠকে বসবে রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার সংক্রান্ত সংগঠনগুলি। মায়ানমারের মানুষ যাতে শান্তিপূর্ণ ভাবে প্রতিবাদ জানাতে পারেন, তা নিয়ে সরব হয়েছে আমেরিকার বিদেশ দফতর। সু চি-সহ বাকি নেতা-নেত্রীদের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন পোপ ফ্রান্সিসও।

সংবাদ সংস্থা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Myanmar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE