বন্যা-বিপর্যস্ত পঞ্জাব। একরের পর একর চাষের জমি ভেসে গিয়েছে। হড়পা বান ও ধসে বহু গ্রাম প্রায় নিশ্চিহ্ন হতে বসেছে হিমাচল প্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডে। সর্বশেষ কলকাতা শহরে আকাশভাঙা বৃষ্টি। পুজোর মুখে বিপুল ক্ষয়ক্ষতির শিকার মহানগর। শুধু ভারত নয়, সাম্প্রতিক কালে প্রবল তাপপ্রবাহের সাক্ষী হয়েছে ইউরোপ, অসময়ে দাবানল লেগেছে আমেরিকায়। এই পরিস্থিতি নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে নেচার ডট কমে। তাতে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে বিশ্ব জুড়ে এ ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় আরও ভয়াল চেহারা নেবে। আরও ঘনঘন ঘটতে দেখা যাবে। কোনও ব্যক্তি পৃথিবীর কোন প্রান্তে বাস করছেন ও তাঁর বয়স কত, এর উপর নির্ভর করছে কী পরিমাণ বিপদের সম্মুখীন হতে হবে তাঁকে।
গবেষণায় দু’টি সময়কালের তুলনা করা হয়েছে। একটি হল সাম্প্রতিক অতীত— ১৯৯১ থেকে ২০২০ সাল। অন্যটি অদূর ভবিষ্যৎ— ২০২১ সাল থেকে ২০৫০। জনসংখ্যার পরিসংখ্যানের সঙ্গে তুলনা করে দেখা হয়েছে জলবায়ুর পূর্বাভাস। তাতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈষম্য চোখে পড়েছে। পাশাপাশি, গবেষণাপত্রে জানানো হয়েছে, কী ভাবে উষ্ণস্রোত ও শীতলস্রোত একে অন্যের সঙ্গে সংঘাতে গিয়ে কোথাও অতিবৃষ্টি তো কোথাও অনাবৃষ্টি সৃষ্টি করছে। বিজ্ঞানের ভাষায় এই পরিস্থিতিকে বলা হয়— ‘কমপাউন্ড ক্লাইমেট এক্সট্রিমস’।
যে বৈষম্যগুলি চোখে পড়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য— বিশ্ব জুড়ে মাত্রাতিরিক্ত তাপপ্রবাহের জেরে কোথাও বন্যা, কোথাও অনাবৃষ্টির প্রকোপ বাড়বে। এশিয়া ও আফ্রিকা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিশেষ করে শিশু ও যুবসমাজ সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়বে।
সাহারার নিকটবর্তী অঞ্চলে জনসংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। এর জেরে ‘কমপাউন্ড ক্লাইমেট এক্সট্রিমস’ ক্রমশ বাড়ছে। ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ায় তাপপ্রবাহের সঙ্গে প্রবল বৃষ্টির মিলিত প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন প্রবীণরা। এতে স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও সামাজিক তত্ত্বাবধান পরিকাঠামো নিয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি হবে। গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলগুলিতে শৈত্যপ্রবাহের প্রকোপ কমবে। কিন্তু আমেরিকার কিছু অংশ, উত্তর ইউরোপ ও পূর্ব এশিয়ায় শৈত্যপ্রবাহ বাড়বে। ফলে এক দিকে তাপপ্রবাহ, অন্য দিকে দীর্ঘস্থায়ী শৈত্যপ্রবাহের যুগলবন্দি সঙ্কট তৈরি হবে। গবেষণাপত্রে দাবি, বিশ্বব্যাপী ঝুঁকি বৃদ্ধির প্রধান কারণ জলবায়ু পরিবর্তন। উন্নয়নশীল দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধি এই সমস্যা বহুগুণ বাড়াচ্ছে। কিন্তু ইউরোপ ও এশিয়ার কিছু অংশে, যেখানে জনসংখ্যা স্থিতিশীল বা হ্রাসমান, সেখানে এর একমাত্র কারণ জলবায়ু পরিবর্তন।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)