ফাইল চিত্র।
মায়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের ঠিক পরেই বিলম্ব না-করে, সে দেশে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার পক্ষে বিবৃতি দিয়েছে নয়াদিল্লি। বিদেশ মন্ত্রক বলেছে, সে দেশে আইনের শাসন এবং গণতন্ত্র যাতে ফিরে আসে, সে দিকে উদ্বেগের সঙ্গে নজর রাখা হচ্ছে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের এমন প্রতিক্রিয়া প্রত্যাশিতই। কিন্তু কূটনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, কবে সে দেশে গণতন্ত্র ফিরবে তার জন্য হাপিত্যেশ করে বসে থেকে, সমস্ত দ্বিপাক্ষিক প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেওয়া অর্থহীন বলেই মনে করছে সাউথ ব্লক। তা হলে সেই শূন্যস্থানে ঝাঁপিয়ে পড়বে বেজিং। ফলে মায়ানমারের সামরিক নেতৃত্বের সঙ্গেই সব রকম বাণিজ্যিক এবং কৌশলগত বিনিময় চালিয়ে যাওয়া হবে।
এমনিতেই মায়ানমারের সামরিক সংস্থার সঙ্গে যথেষ্ট জোরালো সম্পর্ক রেখেই চলে সাউথ ব্লক। এক কর্তার কথায়, “দক্ষিণ এশিয়ার সমস্ত রাষ্ট্রের মধ্যে মায়ানমারের সঙ্গে ভারতের সামরিক সম্পর্ক সবচেয়ে জোরালো। ধারাবাহিক ভাবে সামরিক চুক্তি হয়েছে দু’পক্ষের সেনার মধ্যে। আমাদের মধ্যে ১৬০০ কিলোমিটার স্থলসীমান্ত। জলসীমান্তও নগণ্য নয়। অনেক ক্ষেত্রেই ভারত এবং মায়ানমারের সেনা একই ধরনের নাশকতার বিরুদ্ধে লড়াই করেছে এবং করছে। দেশের উত্তর-পূর্বকে সুরক্ষিত রাখতে হলে মায়ানমারের সেনার সঙ্গে মসৃণ সংযোগ রেখে চলা প্রয়োজন।”
কূটনৈতিক সূত্রের মতে, মায়ানমারে রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টার পদটি প্রধানমন্ত্রী পদের সমতুল হলেও ওই পদে আউং সান সু চি-র জমানা শেষ হয়ে গিয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। তিনি আর কোনও দিন আগের ভূমিকায় ফিরতে পারবেন কি না তা অনিশ্চিত। সে দেশের পশ্চিমে রাখাইন প্রদেশ থেকে রোহিঙ্গা মুসলিমদের উচ্ছেদ এবং গণহত্যার অভিযোগে ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক স্তরে সু চি-র ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দেশীয় রাজনীতিতেও সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাঁর সংঘাত বাড়ে। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে গণতান্ত্রিক শক্তিগুলিকে সমর্থন করার পাশাপাশি, সামরিক শক্তির সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে গিয়েছে নয়াদিল্লি। তার সব চেয়ে বড় প্রমাণ গত পাঁচ বছরের মধ্যে দু’বার নয়াদিল্লি সফর করেছেন সে দেশের সেনাপ্রধান জেনারেল মিং অং হাইং।
শুধু সফরই নয়, তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠকও করেছেন ২০১৯ সালে। সাধারণত গণতন্ত্র বহাল থাকলে সেই দেশের সেনাপ্রধানের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ হওয়ার কথা নয়। সেটা হয় দেশের সেনাপ্রধান বা জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার সঙ্গে। কিন্তু যৌথ মহড়া, উপকূলে সেনা সহযোগিতা, এমনকি উন্নয়ন ও আর্থিক বিকাশ নিয়েও বৈঠক করেন মোদী ও মায়ানমারের সেনাপ্রধান।
সব মিলিয়ে প্রতিবেশী এই রাষ্ট্রের পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে কূটনৈতিক আদানপ্রদান অক্ষুণ্ণ রাখতে অনেকটাই প্রস্তুত নয়াদিল্লি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy