‘ভোট দো, ফ্রাইজ় লো!’
‘আপনি যদি ভোট দেন, তা হলে ভোটের কালি-লাগানো আঙুলটা দেখান আমাদের কফিশপে এসে। এক কাপ কফি আপনার জন্য ফ্রি!’
ফ্রি হালুয়া-পুরি ব্রেকফাস্ট? তা-ও পাবেন। কোনও কুপন দরকার নেই। বেগুনি কালি-লাগা আঙুলটা দেখালেই হবে।
মাত্র তিনটের কথা বললাম। ভোটের আগে এমন অজস্র বিজ্ঞাপনে ছেয়ে গিয়েছে পাকিস্তান। ভোট দিয়ে গুল আহমেদের অভিজাত ফ্যাশন স্টোরে গেলেও আজ থেকে পাওয়া যাচ্ছে ৫০ শতাংশ ছাড়!
আমরা ঘরোয়া আড্ডায় বলি— ভারত আর পাকিস্তানের কোষ্ঠী অনেকটাই এক রকম। কয়েক মুহূর্তের ব্যবধানে জন্মানো দু’টো দেশ তো। রাজনীতিই দেখুন। আমাদের ‘প্রাচীন’ পিপিপি জনতার সমর্থন আর ভোটব্যাঙ্কে ধস-নামা হার, দুই-ই দেখেছে। এমন উত্থান-পতন দেখেছে ভারতের কংগ্রেসও। আবার আমাদের দেশে তেহরিক-এ-ইনসাফের মতো নতুন দল এসেছে। তেমনই আপনাদের দেশে জন্মেছে আম আদমি পার্টি। কিন্তু জনতাকে ভোট দেওয়ানোর জন্য সর্বত্র এ রকম কেনাকাটায় ছাড়ের বন্যা ভারতের কোথাও দেখেছেন কি? ব্যাপারটায় পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনও হাত নেই। পুরোটাই ব্র্যান্ডগুলোর নিজস্ব উদ্যোগ। বিনা-পয়সায় প্রচারটা তো হয়ে গেল!
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর কুর্সি প্রায় হাতের মুঠোয় ইমরানের
আজ সকালে তাই করাচির রাস্তায় দেখছিলাম, একটা কফি-শপের বাইরে ঠেলাঠেলি ভিড়। কে বলবে, আজ ভোট! ওহ্, ভুলে গিয়েছিলাম, নতুন একটা অ্যাপ-ক্যাব পাকিস্তানের রাস্তায় নেমেছে আজ থেকে। তাদের স্লোগানও এক। ভোট দিতে যান, ভোট দিয়ে ফিরুন— আমাদের গাড়িতে, নিখরচায়!
আম আদমির মধ্যেও তাই সকাল থেকে একটা ছুটি-ছুটি ভাব। ভোট দেওয়ার উৎসাহও বেশ চোখে পড়ল। লাহৌর থেকে ছবি এল আমাদের অফিসে। বড়সড় চেহারার এক বৃদ্ধকে হুইলচেয়ারে বসা অবস্থাতেই সিঁড়ি ভেঙে ভোটকেন্দ্রের দোতলায় তুলে আনছেন জনা-পাঁচেক তরুণ। পাকিস্তানে কিন্তু ইলেকট্রনিক ভোটযন্ত্রে নয়, ব্যালটে ভোট। মহিলাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা হয়েছিল— চাইলে শুধুমাত্র মহিলা ভোটকর্মী পরিচালিত বুথে যেতে পারবেন তাঁরা। সেই বুথগুলোয় ভিড় ছিল ভালই। আপাদমস্তক বোরখায় ঢাকা কিছু ভোটকর্মী যেমন ছিলেন, তেমনই বাইরের ডেস্কে বসে দক্ষ হাতেই দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন নওয়াজ় শরিফের দলের বাঘমার্কা টুপি-পরা মহিলা পোলিং এজেন্টরা।
প্রায় তিন দশক ধরে করাচি শাসন করে আসা এমকিউএম এ বার আড়াআড়ি দু’ভাগ। ফলে এ শহর দখলে নজর রয়েছে সব দলেরই। লাহৌরে একটা অশান্তির খবর পেলাম। রিগিংয়ের অভিযোগ ঘিরে দু’দলের মারপিট, পুলিশের চড়চাপড়। আবার পেশোয়ারে দেখলাম, বুথের পাহারায় থাকা সেনার হাতে ফুল তুলে দিচ্ছেন বৃদ্ধ ভোটার। শুধু কোয়েটার বিস্ফোরণটাই কালো দাগ হয়ে রইল। প্রায় সত্তর হাজার বুথকে ‘স্পর্শকাতর’ ঘোষণা করা হয়েছিল এ বার। ভোটের আগে এক সপ্তাহে বিস্ফোরণ হয়েছিল চারটে। সেই হিসেবে বলতে হয়, আজকের ভোটটা মোটামুটি উতরে গিয়েছে।
আরও পড়ুন: ইমরানে লাভই দেখছেন ভারতের গোয়েন্দারা
করাচির বাসিন্দাদের অনেকেরই শিকড় ভারতে। কারও দিল্লি, লখনউ, হায়দরাবাদ, কারও বিহার, পঞ্জাব, গুজরাত, দক্ষিণ ভারত কিংবা আপনাদের কলকাতায়। দেশভাগের সময়ে এসেছিলেন এঁরা। বিরাট সংখ্যক বাঙালির বাস করাচিতে। বাংলা গান, বাংলা লেখাপড়ার চর্চা আছে এ শহরে। আমাদের ভোটে তাই লেগে রইল বাংলার ছোঁয়াও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy