অনেক ক্ষণ ধরে গাড়ি পার্ক করার জায়গাটায় দাঁড়িয়ে আছে ছেলেটা। মাথা কামানো, পরনে ঢিলে পোশাক। ভাবভঙ্গি দেখে বেশ উত্তেজিত মনে হচ্ছে। কিন্তু এ নিয়ে তখন আর মাথা ঘামাননি কেউই।
টিভির পর্দায় বেশ কয়েক দিন পর ভেসে উঠল ছেলেটার মুখ। প্যারিস হামলার মূল চক্রী হিসেবে। শিউরে উঠলেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। বাতাক্লঁ থিয়েটারের বাইরে অনেক বার ওই মুখ দেখেছেন তাঁরা। চিনতে অসুবিধ হয়নি একটুও। এক মুহূর্ত দেরি না করে যোগাযোগ করলেন তদন্তকারীদের সঙ্গে।
প্রত্যক্ষদর্শীদেরই এক জন জানাচ্ছেন, ঘটনার দিন মূল চক্রী আবাউদই ফোনে কোথায় কী ভাবে হামলা চালানো হবে, তার নির্দেশ দিচ্ছিল। প্যারিস হামলার পর কেটে গিয়েছে এক মাস। তবে এখনও হামলার ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন দেশের মানুষ। আতঙ্কও যেন পিছু ছাড়ছে না। সন্দেহভাজন জঙ্গিদের খোঁজে ফ্রান্স জুড়ে চলছে তল্লাশি। এরই মধ্যে আজ প্যারিস হামলায় জড়িত সন্দেহে আরও এক সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
গত ১৩ নভেম্বর পর পর বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছিল প্যারিসের কনসার্ট হল, স্টেডিয়াম, রেস্তোরাঁ এবং কাফে। জঙ্গি হানার বলি হয়েছিলেন ১৩০ জন। হামলার দায় স্বীকার করেছিল আইএস জঙ্গি গোষ্ঠী। হামলার মূলে ছিল ন’জন জঙ্গি। এঁদের মধ্যে পাঁচ জন আত্মঘাতী বিস্ফোরণে প্রাণ হারায়। আর হামলার মূল চক্রী হিসেবে যাকে চিহ্নিত করা হয়েছিল, সেই আবদেলহামিদ আবাউদ হামলার পাঁচ দিন পর নিহত হয় পুলিশি অভিযানে। হামলার পর থেকে অন্তত ২৭০০ বার তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। ৩৬০ জন সন্দেহভাজনকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। আবাউদকে বাড়ি ভাড়া দেওয়ার ধরা হয়েছে আরও দু’জনকে। তা বাদে বেলজিয়াম এবং তুরস্ক থেকেও ন’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে হামলায় সরাসরি জড়িত ন’জনের মধ্যে তিন জনকে ধরা যায়নি এখনও। অভ্যন্তরীণ মন্ত্রক সূত্রে খবর, ঘটনার পর ধৃত ৩৩৪ জনের মধ্যে ২৮৭ জনকে জেরা করেছে পুলিশ। চারশোরও বেশি আগ্নেয়াস্ত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
হামলার দিন আবাউদকে সামনে থেকে যিনি দেখেছিলেন, সেই প্রত্যক্ষদর্শী এ-ও জানিয়েছেন, প্রায় এক ঘণ্টা বাতাক্লঁ থিয়েটারের দরজার কাছে দাঁড়িয়েছিল আবাউদ। সেখান থেকেই ফোনে বাকিদের নির্দেশ দিচ্ছিল সে। তা ছাড়া ঘটনার দিন বিকেলে নিকটবর্তী একটি মেট্রো স্টেশনের সিসিটিভি ক্যামেরাতেও ধরা পড়েছে আবাউদের ছবি। সরকারি সূত্রে খবর, আবাউদের ফোনের রেকর্ড পরীক্ষা করে জানা গিয়েছে, সে দিন অপর এক জঙ্গি বিলাল হাদফির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছিল সে।
তদন্তকারীরা আরও জানিয়েছেন, প্যারিসের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলিকেই আক্রান্ত করে ক্ষান্ত হয়নি আবাউদরা। শহরের বাণিজ্যকেন্দ্রগুলিও আক্রমণের ছক কষেছিল তারা। তবে সে উদ্দেশ্য সফল হয়নি। হামলার পাঁচ দিন পর পুলিশি অভিযানে প্রাণ হারায় খোদ মূল চক্রীই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy