Advertisement
E-Paper

পরপর হামলায় আঁচ ছিল আইএস-যোগের

গুলশনের ঘটনার অনেক আগে থেকেই আঁচ মিলছিল যে, বাংলাদেশে আইএস বারেবারে কৌশল বদলে একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে।

জয়ন্ত ঘোষাল

শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৬ ০৩:৫৮

গুলশনের ঘটনার অনেক আগে থেকেই আঁচ মিলছিল যে, বাংলাদেশে আইএস বারেবারে কৌশল বদলে একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। এবং প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই আইএস দায় স্বীকার করায় এটাও স্পষ্ট হচ্ছিল যে, মুক্তিযুদ্ধের দেশে তারা কী ভাবে জাল বিস্তার করছে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সূত্র বলছে, গত দু’বছরে বাংলাদেশে একাধিক ঘটনায় আইএস-যোগের প্রমাণ মিলেছে। ২০১৫-র ২৮ সেপ্টেম্বর এই গুলশনেই কূটনৈতিক এলাকার ভিতরে গুলিবিদ্ধ হন সিজার তাভেলা নামক এক ইতালীয় নাগরিক। বছর পঞ্চাশের তাভেলা সকালে জগিং করতে বেরিয়েছিলেন। তিনি ডাচ চার্চ কোঅপারেটিভ-এর প্রবীণ কর্মী ছিলেন। হাই সিকিয়োরিটি জোনের মধ্যেই একটা মোটরসাইকেলে চেপে তিন জন আততায়ী তাঁকে গুলি করে পালায়। হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাভেলাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঢাকার তৎকালীন পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়াঁ বলেছিলেন, হত্যাটি সুপরিকল্পিত। একদিন পর আইএস এই হত্যার দায় স্বীকার করে জানায়, কিছু দিন ধরে তারা তাভেলার উপরে নজর রেখেছিল। তাদের দাবি, তাভেলা ইসলাম-বিরোধী কাজে যুক্ত ছিলেন।

২০১৫-র ২৬ অক্টোবর ওই হত্যাকাণ্ডের দায়ে বাংলাদেশ পুলিশ চার জনকে গ্রেফতার করে। সাংবাদিক বৈঠকে পুলিশ কমিশনার বলেন, তিন আততায়ী জেরার মুখে জানিয়েছে, তাদের ওই বিদেশিকে হত্যা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কারা সেই নির্দেশ দিয়েছিল, তা জানা যায়নি। আইএস দাবি করলেও তারাই যে কাজটি করেছে, তা প্রমাণিত হয়নি। শেষে পুলিশ সিদ্ধান্তে পৌঁছয়, এটা আইএস-এর কাজ নয়, ইচ্ছা করেই এ নিয়ে সংশয় তৈরি করা হচ্ছে।

২০১৪-র ৭ অগস্ট একটি ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করে বাংলাদেশের পাঁচ জঙ্গি প্রথম আইএস-এর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে। তখন থেকেই মার্কিন ও ভারতীয় গোয়েন্দারা তদন্ত শুরু করে। ৭ সেপ্টেম্বর ৪ জনকে ধরে বাংলাদেশ পুলিশ। জেরায় ধৃতেরা জানিয়েছিল, তারা আইএস-এ যোগ দিয়েছে। ২০১৫-র ২ জুলাই বাংলাদেশ পুলিশ আল কায়দার সঙ্গে যুক্ত ১২ জনকে ধরে। অক্টোবরে মার্কিন গোয়েন্দারা বাংলাদেশ সরকারকে জানায়, আইএস বাংলাদেশে তাদের কার্যকলাপ বাড়াতে চাইছে।

ওই সময় ঢাকার কূটনৈতিক জোন-এ এক ইতালীয় কর্মী খুন হন। তিনি বাংলাদেশের দারিদ্রমোচনের একটি প্রকল্প যুক্ত ছিলেন। একই সময়ে উত্তর বাংলাদেশে জাপানের এক কৃষি উপদেষ্টাকে হত্যা করা হয়। ২৪ অক্টোবর ঢাকার একটি মসজিদে বিস্ফোরণে একজন নিহত ও ৮০ জন আহত হন। ২০১৫-র ২৮ অক্টোবর শেখ হাসিনা বিবৃতি দিয়ে বলেছিলেন, ‘একটা কথা দ্ব্যর্থহীন ভাবে জানাতে চাই, বাংলাদেশের সামনের দিকে এগোনোর প্রক্রিয়া দু’টি বোমা ও পাঁচটি ডিম ছুড়ে আটকানো যাবে না। যারা এটা ভাবছে, তারা ভুল করছে।’ হাসিনার এই বক্তব্যকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ৪ নভেম্বর ঢাকার বারুইপাড়ায় পুলিশ চেকপয়েন্টে মোটরসাইকেলে চেপে এসে জঙ্গিরা হামলা করে। দু’জন পুলিশ অফিসার গুলি ও ছোরায় আক্রান্ত হন। ২০১৫-র ১৯ নভেম্বর ঢাকার উত্তর-পশ্চিমে ২৭৭ কিলোমিটার দূরে, দিনাজপুর প্রদেশে জঙ্গিরা গুলি চালিয়ে পিয়েরো পারালারি নামের এক ইতালীয় মিশনারিকে জখম করে। ওই বছরই ২৬ নভেম্বর ঢাকা থেকে ১২৫ কিলোমিটার দূরে শিবগঞ্জের শিয়া মসজিদে হামলা হয়। এবং দু’টি ঘটনাতেই দায়িত্ব নিয়েছিল আইএস।

২০১৩ থেকে বাংলাদেশে প্রায় দু’ডজন হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, যার মধ্যে যুক্তিবাদী, নাস্তিক, মৌলবাদের সমালোচক, ব্লগার সকলেই আছেন। বেশির ভাগকেই কুপিয়ে খুন করা হয়েছে। বৌদ্ধ সন্ন্যাসী, সুফি-গান ভক্ত অধ্যাপকও রেহাই পাননি। দু’মাসে আবার বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর আক্রমণ বেড়েছে। তালিকায় রয়েছেন দর্জি, পুরোহিত, স্কুলশিক্ষক এমনকী বৃদ্ধ পুরোহিতও। আক্রান্ত হয়েছে হিন্দুদের বহু ধর্মস্থান। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই আইএস-যোগের কথা উঠলেও সরকারি ভাবে তা অস্বীকার করা হয়েছে। গুলশনের সন্ত্রাস এই যোগাযোগের প্রশ্নটা নতুন করে এবং আরও বড় আকারে তুলে দিয়েছে।

IS Terror attack
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy