খুনে লোকটার মুখ ঢাকা ছিল। গোয়েন্দাদের সন্দেহ, সে-ই তাঁর ভাই। তবু কণিকা ধরের মন মানতে চায় না। মনেপ্রাণে এখনও বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে, ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর ওই ভিডিওয় নাতিদীর্ঘ বক্তৃতা দেওয়ার পর সামনে বসিয়ে রাখা বন্দিকে ঠান্ডা মাথায় গুলি করা জঙ্গিটা তাঁর ভাই সিদ্ধার্থ নয়।
কারণ, এই বিশ্বাসটা রাখা ছাড়া তাঁর কোনও উপায় নেই! ব্রিটিশ পার্লামেন্টের হাউস অব কমন্সে স্বরাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির এক শুনানিতে গিয়ে এই কথাই বলেছেন বঙ্গতনয়া কণিকা।
আইএসের প্রথম বঙ্গ-যোগ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে, মাসখানেকও পেরোয়নি। চরবৃত্তির অভিযোগে কয়েক জন ব্রিটিশকে খুন করার ওই ভিডিওটা আইএস প্রকাশ করার পর থেকেই চর্চা শুরু হয়েছিল সিদ্ধার্থকে নিয়ে। কারণ, জঙ্গির মুখের আদল, কণ্ঠস্বর, উচ্চারণের সঙ্গে সিদ্ধার্থ ওরফে ধর্মান্তরিত আবু রুমায়েশের মিল পাওয়া যাচ্ছে বলে সন্দেহ করেছিলেন গোয়েন্দারা।
আইএসের প্রচার ভিডিওগুলোতে এত দিন খুনির ভূমিকায় দেখা যেত জেহাদি জনকে। গত কাল আইএস মেনে নিয়েছে, জেহাদি জন বেঁচে নেই। সেই জায়গাটাই এখন সিদ্ধার্থ নিয়েছে বলে মনে হয়েছে গোয়েন্দাদের। আর সেই সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতেই কণিকাকে ডাকা হয়েছিল পার্লামেন্টের কমিটির সামনে।
কণিকা বলেছেন, ‘‘আমি মানতে পারছি না। যাচাই করার কোনও উপায় আমার কাছে নেই। এটা শুধু মনের একটা অনুভূতি যা প্রশ্ন করে, আমার ভাই-ই এ সব করেছে? ও এমন করতে পারে, আমি এটা কিছুতেই মানতে পারছি না!’’
আইএসের ওই ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পর এই কণিকাই বলেছিলেন, ওই জঙ্গি যদি তাঁর ভাই হয়, নিজের হাতে তাঁকে খুন করবেন তিনি। বলেছিলেন, বাবার মৃত্যুর পর এক বন্ধুর প্রভাবে কট্টর ইসলামি ভাবধারার দিকে ঝুঁকেছিল সিদ্ধার্থ। যদিও পার্লামেন্টের কমিটিকে কণিকা বলেছেন, সিদ্ধার্থ কী ভাবে পাল্টে গেল, তা নিয়ে সম্পূর্ণ অন্ধকারে ছিলেন তাঁরা। তবে ভাইয়ের কেউ মগজধোলাই করেছে, এমন আশঙ্কাও উড়িয়ে দেননি।
তবে তাঁদের মতো পরিবারের জন্য একটি সংগঠন থাকলে যে ভাল হয়, কমিটিকে সেটাও বলেছেন কণিকা। তাঁর মতে, ‘‘সে ক্ষেত্রে ওই রকম সঙ্কটের মুখে পরামর্শ-সাহায্য পাওয়া যায়। উদ্বেগটাও ভাগ করে নেওয়া যায়। সব জানার পরে আমি যেমন বুঝতেই পারছিলাম না যে কার কাছে যাব। পুলিশকে বলব, না সংবাদমাধ্যম, নাকি পরিবারের কাউকে। বেশ আঘাত পেয়েছিলাম।’’
এখনও ভাইকে ‘মিস’ করেন কণিকা। ভাইকে ঘিরে এ দিনের তোলপাড় অবস্থাটার জন্য একটা অপরাধবোধও হয়। ভাইকে যে আটকে রাখতে পারেননি। হারিয়ে গিয়েছে সে!
গোয়েন্দা-দল সূত্র খুঁজে চলে। কণিকার মন মানতে চায় না!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy