Advertisement
E-Paper

মাদক রুখেই রোষে, দাবি সিরিসেনার 

শুক্রবার সিরিয়েনা সাংবাদিকদের বলেছেন, মাদক পাচার করে অর্থ জোগাড়ের ব্যবস্থা করে বেশির ভাগ জঙ্গি গোষ্ঠী। সেই লাভজনক ব্যবসায় ধাক্কা লাগতেই পাল্টা জবাব দিয়েছে জঙ্গিরা।

পি কে বালচন্দ্রন 

শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:৪৪
মৈত্রীপালা সিরিসেনা

মৈত্রীপালা সিরিসেনা

মাদক বিরোধী অভিযান আর প্রচার— দু’টোই সম্প্রতি জোরদার ভাবে শুরু করেছিলেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মৈত্রীপালা সিরিসেনা। তার জেরেই ইস্টার রবিবারে আটটি বিস্ফোরণ হল বলে দাবি করেছেন প্রেসিডেন্ট।

শুক্রবার সিরিয়েনা সাংবাদিকদের বলেছেন, মাদক পাচার করে অর্থ জোগাড়ের ব্যবস্থা করে বেশির ভাগ জঙ্গি গোষ্ঠী। সেই লাভজনক ব্যবসায় ধাক্কা লাগতেই পাল্টা জবাব দিয়েছে জঙ্গিরা। প্রেসিডেন্টের মতে, এলটিটিই এক সময়ে এটাই করে এসেছে। এখন ইসলামিক স্টেট (আইএস) সেই ভূমিকা নিয়েছে। মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে সিরিসেনার নির্দেশে গত কয়েক মাস ধরে দেশ জুড়ে পুলিশি অভিযান শুরু হয়েছিল। বিপুল পরিমাণ মাদক বাজেয়াপ্ত হয়। প্রচুর স্থানীয় এবং বিদেশি মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতারও করা হচ্ছিল। প্রেসিডেন্টের দাবি, সেটাই আইএস-এর রাগের কারণ। আজও বাত্তিকালোয়ার কাছে বিস্ফোরক বেল্ট তৈরির একটি ঘাঁটিতে হানা দেয় পুলিশ। সেখানে বিস্ফোরণের খবর মিলেছে। দুষ্কৃতীদের সঙ্গে পুলিশের গুলির লড়াই এবং আরও অন্তত দু’টি বিস্ফোরণের কথা শোনা গিয়েছে। তবে হতাহতের খবর নেই। অনেকের মতে, এখন সন্দেহজনক বস্তু দেখলেই ডিটোনেটর দিয়ে তা ফাটিয়ে দিচ্ছে সেনা ও পুলিশ।

বেছে বেছে গির্জায় বিস্ফোরণের ব্যাখ্যাও দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট। তাঁর মতে, সম্প্রতি আর্চবিশপ কার্ডিনাল ম্যালকম রঞ্জিত মাদক-বিরোধী প্রচারে চার হাজার ক্যাথলিককে নিয়ে মিছিল করেছিলেন। আজ শ্রীলঙ্কার গোয়েন্দাপ্রধান চুলা সেনেবিরত্নে-কে পাশে বসিয়ে সিরিসেনা জানিয়েছেন, ন’জন আত্মঘাতী বোমারু এবং তাদের বাকি শাগরেদরা শ্রীলঙ্কার সুন্নি মুসলিম সম্প্রদায়ের। এখানে প্রথমে ছিল তৌহিদ জামাতস নামে একটি জঙ্গি গোষ্ঠী। সেখান থেকে বেরিয়ে এদের অনেকেই অন্যান্য গোষ্ঠী তৈরি করে। সেগুলো আইএসের মতো গোষ্ঠীর প্রভাবে তৌহিদ জামাতস-এর থেকেও বেশি কট্টর হয়ে ওঠে। তারই একটি ন্যাশনাল তৌহিদ জামাত (এনটিজে), এক সময়ে যার মাথায় ছিল জ়াহরান হাসান। পরে অবশ্য এই গোষ্ঠী থেকেও বেরিয়ে যায় সে।

শাংগ্রি লা হোটেলে হামলার নেতৃত্ব দিয়েছিল যে মৌলবি, সে-ই জ়াহরান। গত কাল পর্যন্ত জ়াহরান বেঁচে আছে কি না, তা বলতে পারেননি গোয়েন্দারা। আজ সেটাই নিশ্চিত করেন তাঁরা। তার সঙ্গে ছিল আরও এক বোমারু, যার নাম ইলাম। যদিও কাল বলা হয়েছিল, মশলা ব্যবসায়ী মহম্মদ ইউসুফ ইব্রাহিমের ছেলে ইলাম ইব্রাহিম সিনামন গ্র্যান্ডের বিস্ফোরণে জড়িত। আজ শাংগ্রি লা-য় দ্বিতীয় বোমারুর নাম শুধু ইলাম বলে জানানো হয়েছে প্রশাসনের তরফে।

জ়াহরান এনটিজে থেকে বেরিয়ে তামিলনাড়ু যায়। সেখানে জামাত উল মুজাহিদিন (জেএমআই) গোষ্ঠীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে তার। এই সূত্রেই আইএস-এর প্রভাব পড়ে তার উপরে। দেশে ফিরে উচ্চশিক্ষিত, বিদেশি সংযোগ রয়েছে এমন যুবকদের একজোট করতে নামে জ়াহরান।

আটটি বিস্ফোরণের আঘাত থেকে শিক্ষা নিয়ে সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণে অস্ট্রেলিয়া ও সিঙ্গাপুরের ধাঁচে নতুন আইনের কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানান প্রেসিডেন্ট। সিরিসেনার কথায়, ‘‘শ্রীলঙ্কার এখনকার আইন যথেষ্ট লঘু। ২০১৭ সাল থেকে তৌহিদ গোষ্ঠীগুলি নজরে থাকলেও কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। কারণ উপযুক্ত আইন ছিল না। আর যদি এখনকার আইনে গ্রেফতার করাও হত, মানবাধিকার সংগঠনগুলি আপত্তি জানাত।’’

প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমসিংহেও আজ জানিয়েছেন, কঠোরতর আইন এনে জঙ্গি কার্যকলাপে যুক্ত ব্যক্তি ও প্রশিক্ষণগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে শ্রীলঙ্কা। আত্মঘাতী বোমারুদের অন্যতম, আব্দুল লতিফ জামিল মহম্মদের বোনকে উদ্ধৃত করে অস্ট্রেলিয়ার একটি সংবাদপত্রের দাবি, সে কাশ্মীরে জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিয়েছিল। সিরিয়ায় গিয়ে আইএসেও যোগ দিয়েছিল সে। পরে শ্রীলঙ্কায় ফেরে।

প্রেসিডেন্ট বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা খুব জরুরি। তাই বিস্ফোরণের দায় মুসলিমদের উপরে চাপানো চলবে না। ‘‘বিস্ফোরণে মুষ্টিমেয় লোকের হাত ছিল। শ্রীলঙ্কায় আইএসের প্রভাব ১৩০ জনের বেশি লোকের মধ্যে ছড়িয়েছে বলে মনে হয় না। ৭০ জনকে গ্রেফতার করেছি। মুসলিম নাগরিকদের ধরে হেনস্থা করা চলবে না। তাঁদের রক্ষার দায়িত্ব শ্রীলঙ্কার,’’ সাফ বলেছেন সিরিসেনা।

(লেখক সাংবাদিক)

Maithripala Sirisena Sri Lanka Sri Lanka Blast
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy