বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থল খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। ছবি: এএফপি।
চার দিনের ব্যবধান। ফের আক্রান্ত কাবুল!
রবিবার সাত সকালে হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের খুব কাছে হামলা চালাল তালিবান। আত্মঘাতী গাড়িবোমা বিস্ফোরণে প্রাণ হারালেন অন্তত ৩ জন। জখম আরও ১৮। বিমানবন্দর সংলগ্ন রাস্তা দিয়ে সে সময় ইউরোপীয় ইউনিয়নের পুলিশ প্রশিক্ষণ অভিযানের (ইউপল) কনভয় যাচ্ছিল। কনভয়টিই হামলাকারীদের মূল লক্ষ্য ছিল বলে অনুমান আফগান পুলিশের।
আফগান প্রশাসনের পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করে এই ইউপল। তাদেরই এক মুখপাত্র সারি হক্কা কোনু জানিয়েছেন, অভিযানের সব সদস্যই সুরক্ষিত। বিস্ফোরণে তিন আধিকারিক জখম হয়েছেন ঠিকই, তবে তাঁদের চোট গুরুতর নয়। তবে ইউপল-এর গাড়িতেই সওয়ার, অভিযানের সদস্য নয় এমন এক জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছেন তিনি। নিহতের পরিচয় নিয়ে অবশ্য কিছু বলেননি। এ দিকে সরকারি ভাবে তালিবান হামলায় স্থানীয় দুই মহিলা-সহ তিন জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছেন আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ মন্ত্রকের মুখপাত্র সেদিক সেদিক্কি। তিনি এ-ও জানিয়েছেন, জখমদের মধ্যে রয়েছেন তিন বিদেশি ও আট মহিলা। রয়েছে তিন শিশুও।
গত সপ্তাহেই কাবুলের অতিথিশালায় ভয়াবহ হামলা চালিয়েছিল তালিবান। আফগান সরকারের বিবৃতি অনুযায়ী, হামলার লক্ষ্য ছিলেন ভারতীয় রাষ্ট্রদূত অমর সিন্হা। অমর প্রাণে বেঁচে গেলেও মৃত্যু হয়েছিল ৪ ভারতীয়-সহ মোট ১৪ জনের। রবিবার সকালেই বিশেষ বিমানে দিল্লি নিয়ে আসা হয়েছে ওই চার ভারতীয়ের দেহ। হামলার ক্ষতটা তাই এখনও টাটকা। তার মধ্যেই আবার ধাক্কা।
প্রত্যক্ষদর্শী এক দোকানির বয়ান অনুযায়ী, আজ সকালে বিস্ফোরণটি হয়েছে আফগান বিমান পরিবহণ কর্তৃপক্ষের অফিসের ঠিক সামনে। কাবুলের বিমানবন্দর থেকে ন্যাটোর সেনাঘাঁটি যাওয়ার রাস্তা দিয়ে ইউপল-এর কনভয়টি যাচ্ছিল সে সময়। উল্টো দিক থেকে আসছিল একটি বিদেশি গাড়ি। বিমানবন্দরের মূল টার্মিনাল থেকে ২০০ মিটার দূরত্বে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িগুলিতে হঠাৎই ধাক্কা মারে সেটি। বিস্ফোরণে কার্যত গুঁড়িয়ে যায় তিনটি গাড়ি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইউপল-এর কনভয়ের একটি গাড়ি, আশপাশের কিছু বাড়ি, দোকানও।
ঘটনার পরে এলাকা ঘিরে ফেলে আফগান পুলিশ। রবিবার সন্ধে পর্যন্ত ঘটনাস্থলেই পড়ে ছিল গাড়িগুলির ভগ্নাবশেষ। যার জেরে দীর্ঘ ক্ষণ যানজটের সমস্যাও দেখা দেয় এলাকায়। বিমানবন্দরের আসা-যাওয়ার পথে চিরুনি তল্লাশির মুখে পড়তে হয় যাত্রীদের।
বেলার দিকে সংবাদমাধ্যকে ই-মেল পাঠিয়ে হামলার দায় স্বীকার করেছে তালিবান। সংগঠনের মুখপাত্র জাবিবুল্লা মুজাহিদ দাবি করেছে, হামলায় উড়ে গিয়েছে ইউপল-এর দু’-দু’টি গাড়ি। মৃত্যু হয়েছে ৭ বিদেশি সেনার। প্রত্যক্ষদর্শী যে দোকানি ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন, তিনি আবার বলছেন, বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থলে দুই মহিলা এবং এক শিশুর রক্তাক্ত দেহ পড়ে থাকতে দেখেছিলেন তিনি। আফগান প্রশাসন এ দিকে সরকারি ভাবে তিন জনের মৃত্যুর কথা জানাচ্ছে। অন্য দিকে কাবুলে ব্রিটিশ দূতাবাসের এক মুখপাত্র নিশ্চিত করে বলেছেন, নিহতদের মধ্যে রয়েছেন এক ব্রিটিশ নাগরিক। দূতাবাসের তরফে নিহতের পরিবারকে সব রকম সাহায্যের আশ্বাসও দিয়ে রেখেছেন তিনি। এ সবের জেরে এ দিনের তালিবান হানায় নিহতের সংখ্যা এবং পরিচয় নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা।
রবিবার সকালেই কাবুলের পূর্বে প্রত্যন্ত এলাকায় আরও একটি গাড়িবোমা বিস্ফোরণ হয়। তাতে আহত হন এক জন। সেপ্টেম্বর ২০০১-এর পর আমেরিকার নেতৃত্বে আফগানিস্তানে শুরু হয় ‘জঙ্গি দমন’ অভিযান। অভিযানের অংশ হিসেবে ১৩ বছর ধরে আফগানিস্তানেই ঘাঁটি গেড়েছিল ন্যাটো সেনা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে দেখে গত বছর
থেকে আফগানিস্তান থেকে ধীরে ধীরে সেনা সরিয়ে নিচ্ছে ন্যাটো। এমতাবস্থায় তালিবান ফের আফগান মাটির দখল নিতে চাইছে। বিদেশিদের উপর একের পর এক প্রাণঘাতী হামলা তারই ইঙ্গিত বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy