পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্রনাথের মূর্তিতে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই।
চিনের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে আজ সন্ত্রাসবাদ নিয়ে কড়া বার্তা দিল ভারত। আমেরিকার মতোই চিনকেও দিল্লি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিল, ‘ভাল জঙ্গি খারাপ জঙ্গি’ বলে কিছু হয় না।
আজ রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় দফায় দফায় বৈঠক করেছেন সে দেশের প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং, প্রধানমন্ত্রী লি খ্যছিয়াং, চিনা কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যান ঝাং দেজিয়াং-এর সঙ্গে। প্রত্যেকটি বৈঠকেই ভারতের পক্ষ থেকে সন্ত্রাসবাদ প্রসঙ্গ তোলা হয়েছে। বৈঠকের শেষে বিদেশসচিব এস জয়শঙ্করের বক্তব্য, “একটি সফরেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায় না। কিন্তু এ বার চিনা নেতৃত্ব খোলামেলা মানসিকতা নিয়ে আমাদের বক্তব্য শুনেছেন।”
সম্প্রতি চিনের দু’টি পদক্ষেপ সাউথ ব্লকের উদ্বেগ বাড়িয়েছে। প্রণব মুখোপাধ্যায়ের এ বারের সফরের মূল উদ্দেশ্যই ছিল এই বিষয়গুলি নিয়ে ভারতের উদ্বেগের কথা চিনা নেতৃত্বকে জানানো। প্রথমত, পঠানকোট কাণ্ডের মূল চক্রী জইশ নেতা মাসুদ আজহারকে নিষিদ্ধ করতে রাষ্ট্রপুঞ্জে আর্জি জানিয়েছিল ভারত। পাকিস্তানের পাশে দাঁড়িয়ে সেই আর্জি স্থগিত করে দিয়েছিল চিন। দ্বিতীয়ত, পরমাণু সরবরাহকারী গোষ্ঠী বা এনএসজি-তে ভারতকে অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ে সম্প্রতি বাদ সেধেছে বেজিং। চিনের মতে, পরমাণু সম্প্রসারণ বিরোধী চুক্তি বা এনপিটি-তে সই করেনি দিল্লি। তাই ভারতকে এনএসজি-তে ঢোকানো সম্ভব নয়।
আজকের বৈঠকগুলিতে মাসুদ আজহারের নাম করেননি প্রণব মুখোপাধ্যায়। কিন্তু নাম না করেও বিষয়টি নিয়ে ভারতের মনোভাব স্পষ্ট করে দিয়েছেন। জয়শঙ্করের কথায়, “আজ রাষ্ট্রপতি চিনা নেতাদের জানিয়ে দিয়েছেন, ভাল জঙ্গি বা খারাপ জঙ্গি বলে কিছু হয় না। সন্ত্রাসবাদের কোনও আদর্শ থাকতে পারে না। আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাস বন্ধ করতে সমন্বয় বাড়ানোর উপরেও জোর দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি।” একই ভাবে ভারতের অসামরিক পরমাণু শক্তির প্রয়োজনীয়তাও শি চিনফিং-এর সামনে তুলে ধরেছেন প্রণববাবু।
পরে চিনা বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র জিয়াও কোয়ান বৈঠক নিয়ে পাল্টা মুখ খুলেছেন। যে হেতু ভারত সরাসরি মাসুদের নাম করেনি তাই স্বাভাবিক ভাবে তারাও এই নামটি এড়িয়ে গিয়েছে। জিয়াও বলেছেন, “দু’দেশের রাষ্ট্রনেতা সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলা নিয়ে আলোচনা করেছেন। তাঁরা এক মত হয়েছেন যে রাষ্ট্রপুঞ্জ, ব্রিকস এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক কাঠামোর মধ্যে ভারত এবং চিন সমন্বয় বাড়াবে।”
আজ সকালেই পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর বক্তৃতায় সীমান্ত সমস্যার কথা উল্লেখ করে ভারতের উদ্বেগের সুর বেঁধে দিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি। তাঁর বক্তব্য, “দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে সীমান্ত সমস্যা-সহ বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এগুলির সমাধান করা প্রয়োজন। এই সমস্যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ঝুলিয়ে রাখা উচিত নয়।’’ পরে চিনা নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকেও এসেছে সীমান্ত প্রসঙ্গ। জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, “আলোচনায় স্থির হয়েছে, সীমান্তে শান্তি বজায় রাখা হবে। পাশাপাশি জোরদার করা হবে সীমান্ত সমস্যা মোকাবিলা করার ব্যবস্থাকে।”
সফর শুরুর প্রথম দিনই ঘরোয়া ভাবে বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছিল, প্রণব মুখোপাধ্যায়ের এই সফর বিশেষ তাৎপর্য বহন করছে। সেই গুরুত্ব বিচার করেই তাঁর সঙ্গে বিদেশসচিব এস জয়শঙ্করকে পাঠিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার।
প্রণবের সফর ভারত-চিন সম্পর্কে স্বল্পমেয়াদি কোনও পরিবর্তনও আনতে পারে কি না সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy