Advertisement
১১ মে ২০২৪

আইসএস দমনে ওবামার নীতির সাফল্য নিয়ে উঠছে প্রশ্ন

ইসলামিক স্টেট-কে (আইএস) ধ্বংসের ডাক দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। মার্কিন সময় রবিবার রাতে টেলিভিশনে ১৩ মিনিটের ভাষণে এ কথা বলেন ওবামা। উপলক্ষ ছিল ক্যালিফোর্নিয়ার সান বার্নির্দিনোর ‘মৌলবাদী’ দম্পতির হাতে ১৪ জনের মৃত্যু।

বারাক ওবামা। ছবি: রয়টার্স।

বারাক ওবামা। ছবি: রয়টার্স।

রত্নাঙ্ক ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৫ ১৮:১৭
Share: Save:

ইসলামিক স্টেট-কে (আইএস) ধ্বংসের ডাক দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। মার্কিন সময় রবিবার রাতে টেলিভিশনে ১৩ মিনিটের ভাষণে এ কথা বলেন ওবামা। উপলক্ষ ছিল ক্যালিফোর্নিয়ার সান বার্নির্দিনোর ‘মৌলবাদী’ দম্পতির হাতে ১৪ জনের মৃত্যু।

কিন্তু কী ভাবে আইএস দমনের লক্ষ্যপূরণ করবেন ওবামা। তাঁর পরিকল্পনা কী? তিনি জানালেন, প্রথমত, পদাতিক সেনা নয়, বিমানহানা বাড়ানো আর স্পেশ্যাল ট্রুপ পাঠানো হবে। দ্বিতীয়ত, আইএস-এর অর্থ রোজগারের পথ বন্ধ করা হবে। তৃতীয়ত, স্থানীয় আইএস বিরোধী সেনাদের প্রশিক্ষণ এবং অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম দিয়ে সাহায্য করা।

কিন্তু ওবামার এই পরিকল্পনাটি আদৌ নতুন নয়। প্রায় এক বছর ধরে আদতে এই পথেই আইএস দমনে রত আমেরিকা। আর এই নীতি নিয়ে সমালোচনায় মুখর বিরোধী রিপাবলিকানরা। রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীরা তো আসরে নেমেই পড়েছেন। এমনকী, এই ভাষণের পরে বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের সমীক্ষা বলছে, এই পরিকল্পনা মার্কিন জনগণের বড় অংশের না-পসন্দ।

মার্কিন জনগণের পছন্দের উপরে আইএস দমন নীতি নির্ভর করে না। নির্ভর করাও উচিত নয়। কিন্তু ওবামার এই নীতির কার্যকারিতা নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন তোলাই যায়। কারণ, সিরিয়া, ইরাক জুড়ে আইএস-এর মার্কিন, রাশিয়া, ব্রিটেন, ফ্রান্স— মহাশক্তিধররা হামলা বহুগুণ বাড়িয়েছে। সে হামলায় আইএস-এর পরিকাঠামো ধ্বংস হয়েছে। সঙ্গে আছে স্পেশ্যাল ট্রুপের হানা, আইএস বিরোধীদের অর্থ ও অস্ত্র সাহায্য, ইরাকি এবং কুর্দ সেনাকে প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র সাহায্য।

এ কথা সত্য যে আইএস জমিও হারিয়েছে। ধ্বংসে হয়েছে সন্ত্রাসের পরিকাঠামো। কিন্তু সত্যিই কি আইএস পরাস্ত হওয়া পথে? প্রথমে প্যারিস ও পরে সান বার্নির্দিনোর ঘটনা কিন্তু সে কথা বলছে না। প্রথম ক্ষেত্রে ইউরোপের বুকে ঢুকে হানা দিতে জঙ্গি পাঠিয়েছে আইএস। আর দ্বিতীয় ক্ষেত্রে শুধু আইএস-এর মতাদর্শই যথেষ্ট।

নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে যুদ্ধ চালানোর এই নীতি নিজের সেনাকে নিরাপদে রাখে, কিন্তু সমস্যার বৃহত্তর দিকটিকে উপেক্ষা করে যায়। যে অঞ্চলে আজ আইএস রয়েছে সেখানে আইনশৃঙ্খলা, প্রশাসনিক ব্যবস্থা, নাগরিক পরিষেবার পরিকাঠামো কি আকাশপথে নির্মাণ সম্ভব? এ ভাবে কি এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের ভরসা ফেরানো সম্ভব?

সম্মিলিত শক্তির হামলার সামনে সিরিয়া ও ইরাকের যে অঞ্চল পড়েছে তা সুন্নি প্রধান। এখানে আইএস-এর দাপটের পিছনে সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক বঞ্চনার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। স্থানীয় সমর্থন ছাড়া কোনও জঙ্গি সংগঠনের টিকে থাকা অসম্ভব। কিন্তু এর মানেই এই নয় যে এঁরা সবাই আইএস-এর সমর্থক। আইএস-এর হাত থেকে এই অসহায় সাধারণদের বাঁচানোর, ভরসা জোগানোর দায়িত্ব কি সম্মিলিত শক্তির নেই? আর এই বিষয়ে ওবামার রণনীতি আশ্চর্যরকম নীরব।

যদি আইএস-কে ওই অঞ্চল থেকে সরিয়েও দেওয়া যায় তবে সেখানে আসবে কারা? কারা নেবে প্রশাসনিক দায়িত্ব? শিয়া সেনাকে ওই অঞ্চলে সুন্নিরা আদৌ স্বাগত জানাবে না। কুর্দ সেনাদের আরও এগিয়ে যাওয়ায় ইরাক, ইরান, তুরস্ক— কারও সম্মতি থাকবে না। সৌদি আরব, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর মতো দেশ স্থলসেনা পাঠানোর ব্যাপারে আদৌ আগ্রহ দেখায়নি। আর ‘ফ্রি সিরিয়ান আর্মি’, আল-কায়দার ছায়া নুসরা ফ্রন্ট বা বাসার আল-আসাদের সেনাকে নিয়ে সম্মিলিত শক্তির মধ্যেই তীব্র মতভেদ রয়েছে। আর নিজেদের পদাতিক সেনা। ওই বেলতলায় যে তিনি যাবেন না তা বার বার বলেছেন ওবামা।

পড়ুন: আইএস রুখতে মুসলমান সমাজকেও পাশে চাই, বার্তা ওবামার

কিন্তু বেশ কয়েক বছর পিছনে গেলেই ওবামা দেখতে পেতেন ইরাকে আল-কায়দার চূড়ান্ত বাড়বাড়ন্তের সময়ে ‘সুন্নি উত্থান’ বলে একটি পরীক্ষার কথা। মার্কিন সেনার সংখ্যা বেশ কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়ে, নানা সুন্নি গোষ্ঠীকে সঙ্গে নিয়ে, সাধারণ সুন্নিদের ভরসা জুগিয়ে ঘটেছিল এই সুন্নি উত্থান। যাতে প্রায় মুছে যেতে বসেছিল আল-কায়দা ইন ইরাক। হ্রাস পেয়েছিল হিংসার ঘটনা। জেনারেল ডেভিড প্রিট্রেয়াসের মস্তিষ্কপ্রসূত এই পরিকল্পনা প্রয়োগের সময়ে মার্কিন প্রশাসনকে বেশ সাহসী হতে হয়েছিল। কিন্তু পদে থাকার এই পড়ন্তবেলায় সেই সাহস দেখানো ওবামার পক্ষে কঠিন।

পাশাপাশি, ওবামা যদি আইএস-কে ইরাক বা সিরিয়া থেকে হঠাতেও পারেন, তশফিনের মন থেকে হঠাবেন কী করে? যেখানে লড়াইটা আরও কঠিন। যদিও এই লড়াই যাতে আমেরিকা আর ইসলামের মধ্যে লড়াই হিসেবে যাতে প্রতিপন্ন না হয় তা নিয়ে ওবামা-র প্রশাসন খুবই সতর্ক। কিন্তু তশফিনের মতো মানুষের মনে পৌঁছনোর পথ খুবই দুরূহ। সেই পথে যেতে গেলে শুধু রণদুন্দুভি বাজালে হবে না। দরকার ধৈর্য আর সহানুভুতির।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

President Barack Obama ISIS
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE