Advertisement
E-Paper

পাকিস্তানকে বাগে আনতে এ বার মাঠে নামবেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প?

বেপরোয়া বিতর্ক। তীব্র বিদ্বেষ। সংবাদমাধ্যের আক্রমণ। যৌন হেনস্থার পর পর অভিযোগ। জনমতের প্রবল ঝাপটায় এর সব কিছুকেই পিছনে ফেলে হোয়াইট হাউসে যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্প যখন রিপাবলিকার প্রার্থী হওয়ার জন্য দৌড় শুরু করেছিলেন তখন অনেকেই তাকে ঠাট্টা বলে ধরেছিলেন। কিন্তু রিপাবলিকান প্রাইমারিতে বাঘা বাঘা প্রার্থীদের পিছনে ফেলে, হিলারিকে হারিয়ে সেই ট্রাম্পই আজ প্রেসিডেন্ট।

রত্নাঙ্ক ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৬ ১৩:০২

বেপরোয়া বিতর্ক। তীব্র বিদ্বেষ। সংবাদমাধ্যের আক্রমণ। যৌন হেনস্থার পর পর অভিযোগ। জনমতের প্রবল ঝাপটায় এর সব কিছুকেই পিছনে ফেলে হোয়াইট হাউসে যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্প যখন রিপাবলিকার প্রার্থী হওয়ার জন্য দৌড় শুরু করেছিলেন তখন অনেকেই তাকে ঠাট্টা বলে ধরেছিলেন। কিন্তু রিপাবলিকান প্রাইমারিতে বাঘা বাঘা প্রার্থীদের পিছনে ফেলে, হিলারিকে হারিয়ে সেই ট্রাম্পই আজ প্রেসিডেন্ট। ট্রাম্প নিজেই বলেন তিনি রাজনীতির লোক নন। ফলে ট্রাম্পের বিদেশনীতি কী হবে তা পরিষ্কার নয়। ফলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে কেমন সম্পর্ক হবে ভারতের তাও পরিষ্কার নয়। তবে নির্বাচনী প্রচার চলার সময়ে ট্রাম্পের কথাবার্তা থেকে কিছুটা আন্দাজ পাওয়া যেতে পারে।

ট্রাম্প প্রবল ভাবে অবৈধ অভিবাসন বিরোধী। বিশেষ করে মেক্সিকো থেকে দলে দলে যাঁরা আমেরিকায় আসেন তাঁদের ধর্ষক বলতেও দ্বিধা করেননি। ধরা যায়, এই অভিবাসন বন্ধ করতে উদ্যোগী হবেন ট্রাম্প। কিন্তু তাতে ভারতের বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ, ট্রাম্প এইচ-১বি ভিসার পক্ষে। তবে ব্যাপারটি ‘অশ্বত্থামা হত ইতি গজ’-এর মতো। কারণ, এই ভিসা নিয়ে যে সব কর্মী ভারতের মতো দেশ থেকে কাজ করতে আসবেন তাঁরাও যাতে মার্কিন কর্মীদের মতো মাইনে পান তা নিশ্চিত করতে চান ট্রাম্প। ব্যাপারটি উপর থেকে ভালই। কিন্তু ভারতের মতো দেশ থেকে কম মাইনে দিয়ে কর্মী আনা যায় বলেই তো মার্কিন সংস্থাগুলি ভারত থেকে কর্মী নিয়ে আসতে আগ্রহী। যদি তাঁদের একই মাইনে দিতে হয় তবে খামোখা ভারত থেকে কর্মী আনতে কেন আগ্রহী হবে মার্কিন সংস্থাগুলি? তবে এই ধরনের ভিসা নিয়ে যে দুর্নীতি হয় তা বন্ধ করতে আগ্রহী ট্রাম্প।

পাকিস্তান সম্পর্কে ট্রাম্পের ধারণা যথেষ্ট নেতিবাচক। দেশটিকে একে বারেই ভরসা করা যায় না বলে প্রকাশ্যে বলেছিলেন ট্রাম্প। ভারতের সঙ্গে মিলে পাকিস্তানকে নিয়ন্ত্রণে রাখার কথাও বলেছেন ট্রাম্প। মোদী সরকারের কাছে এর থেকে মধুর বচন কী হতে পারে! সন্ত্রাসবাদে পাকিস্তানের মদত দেওয়া নিয়েও ট্রাম্প ভারতের সঙ্গে অনেকটা সহমত। কাশ্মীর নিয়েও ট্রাম্প ভারতের দিকে ঝুঁকবেন বলে অনেকের আশা। ভারত সম্পর্কে এমনিতে ট্রাম্পের ধারণা কম। তা তাঁর কথাবার্তায় প্রমাণ পাওয়া যায়। মার্কিনী ভারতীয়দের দিওয়ালি সম্মেলনে ট্রাম্প জানান, তিনি হিন্দুদের ভালবাসেন। তিনি হিন্দুদের ফ্যান। ভারতের বহুত্ববাদ নিয়ে আশ্চর্য নীরব তিনি। মুসলিমদের আমেরিকায় ঢোকাই বন্ধ করার দাবি তুলেছিলেন ট্রাম্প। এ যেন আরএসএস বা বিজেপির কাছে মেঘ না চাইতেই জল! ট্রাম্পের জয় চেয়ে যজ্ঞও করেছে কয়েকটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। কিন্তু নির্বাচনী প্রচার দেখিয়েছে ট্রাম্প অস্থিরমতি। অতএব ভবিষ্যতের গর্ভে কী লুকিয়ে আছে তা এখনই বলা যায় না।

আমেরিকা-চিন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পাল্লাটি বিপুল ভাবে চিনের দিকে ঝুঁকে আছে। চিনের সঙ্গে আমেরিকার বিপুল বাণিজ্য ঘাটতি বরবারই আলোচনার বিষয়। এই ঘাটতির বড় কারণ চিনের সস্তা শ্রমিক। ট্রাম্পও এই ঘাটতি নিয়ে মুখ খুলেছেন। এই ঘাটতি দূর করতে আমদানির উপরে কর বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এতে সস্তা শ্রমিকের সুবিধা পাবে না চিন। ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে এ ধরনের কর বসানো শক্ত। ফলে ট্রাম্পের আমলে ভারত-মার্কিন বাণিজ্যের শ্রীবৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি চিনের সামরিক শক্তি বাড়িয়ে যাওয়া নিয়েও ট্রাম্প চিন্তিত। চিন আসলে আমেরিকার দিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ছে। এটা ভারতের কাছে বড় সুযোগ। ওবামার আমল থেকেই দু’দেশের সেনা যোগাযোগকে নিবিড় করেছে। বেশ কয়েকটি যৌথ মহড়া হয়েছে। আমেরিকার থেকে সমরাস্ত্র কিনছে ভারত। ট্রাম্পের আমলে সামরিক সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হওয়ার সম্ভবনাই বেশি।

কিন্তু মোদীর ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র স্বপ্নের সঙ্গে ট্রাম্পের ভাবনার সরাসরি সঙ্ঘাত ঘটতে পারে। এ ক্ষেত্রে ট্রাম্প আর হিলারির একই সুর। মার্কিন উৎপাদন শিল্পকে চাঙ্গা করতে নানাবিধ প্রস্তাব রয়েছে ট্রাম্পের। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে আমেরিকার বাজারের ওপর লক্ষ্য রেখে ভারতের উৎপাদন শিল্পের শ্রীবৃদ্ধির সম্ভাবনা ক্ষীণ।

ট্রাম্প বরাবরই বিনিয়োগকারীদের উচ্চ কর-হারের বিরোধী। আমেরিকায় কর্পোরেট করের হার এখন প্রায় ৩৯ শতাংশ। ট্রাম্পের মতে এতে বিনিয়োগে উৎসাহ কমে যায়। অর্থনীতিবিদদের একাংশ এই তত্ত্বে বিশ্বাস করেন। তাই ট্রাম্প বিনিয়োগকারীদের করের হার ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে চান। এর ফলে, আমেরিকায় বিনিয়োগে আগ্রহী ভারতীয়দের কাছে নতুন সুযোগের দরজাটা খুলে যাবে বলে আশা করা যায়।

ছবি: রয়টার্স, এএফপি।

আরও পড়ুন- ওবামার চার ঘাঁটি ছিনিয়ে নিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প

when trump gets elected as us president What Would Be The Impacts When Trump Gets Elected as US President Donald Trump
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy