Advertisement
E-Paper

হিলারিকে হারাতে শ্বেতাঙ্গদের মরণ কামড় কি এ বার?

ওবামা-কেয়ার চালু হওয়ার ফলে প্রায় দু’কোটি মানুষ হেল্‌থকেয়ার ইন্সিওরেন্স-এর আওতায় এলেও খরচা বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। সম্প্রতি এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, পরের বছর এই খরচা পরিবার প্রতি প্রায় ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। ব্যস, আগুনে যেন ঘৃতাহুতি হয়েছে।

রানা আইচ

শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৬ ১৮:০১

গুপ্তচর: সেলাম মন্ত্রীমশাই।

মন্ত্রী: এসো গুপ্তচর, খবর কী?

গুপ্তচর: আজ্ঞে আমি রাস্ট বেল্ট থেকে আসছি।

মন্ত্রী: হুম, তা রাস্ট বেল্টেই তোমার পোস্টিং হয়েছিল তাই না?

গুপ্তচর: আজ্ঞে, হ্যাঁ, মন্ত্রীমশাই।

মন্ত্রী (ব্যাঙ্গভরে): তা তুমি রাস্ট বেল্ট থেকে আসবে না তো কি ক্যালিফোর্নিয়া থেকে আসবে?

গুপ্তচর: আজ্ঞে না মন্ত্রীমশাই।

মন্ত্রী: ও পক্ষের ক্যাম্পেনের অবস্থা কেমন দেখলে? কে কে করছে ক্যাম্পেন?

গুপ্তচর: আজ্ঞে কেউ নেই মন্ত্রীমশাই।

মন্ত্রী (কিঞ্চিত অবাক হয়ে): নেই?

গুপ্তচর: নেই।

মন্ত্রী: বুশ ভাইয়েরা?

গুপ্তচর: নেই।

মন্ত্রী: মিট রামনি?

গুপ্তচর: নেই।

মন্ত্রী: স্পিকার পল রায়ান?

গুপ্তচর: নেই।

মন্ত্রী (উত্তেজনায় কিঞ্চিৎ উঠে বসে): পল রায়ানও নেই! হেঁ হেঁ! তা ক্যাম্পেনটা চালাচ্ছে কে শুনি— তুমি আর আমি?

গুপ্তচর: আজ্ঞে এক জনই তো আছেন।

মন্ত্রী: তা তিনি কে? পাবলিকের প্রতিক্রিয়াই বা কী, একটু শুনি।

গুপ্তচর: আজ্ঞে, তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্প। রাস্ট বেল্টের— মানে মিশিগান, ওহাইও, পেনসিলভ্যানিয়া, আইওয়া, উইসকন্সিনের লোকেরা বেদম রেগে আছে, তারা ট্রাম্পের কথায় উঠছে বসছে। এখানে কুখ্যাত নাফটা-র (নর্থ আমেরিকান ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট) জন্য কলকারখানা উঠে গিয়েছে আজ দশ-পনেরো বছর। শিল্পনির্ভর পুরনো বড় বড় শহরগুলো আজ টিমটিম করছে। ২০০৮-এর অর্থনীতির মন্দায় আরও লোকের চাকরি গিয়েছে এবং তাদের পিছনে না আছে সরকার, না পার্টির সাহায্য। কিছু লোক যদিও চাকরি ফিরে পেয়েছে, অনেক লোকই এখনও পার্ট টাইম চাকরি করে। পুরো দিন আনি দিন খাই অবস্থা। সবচেয়ে বড় কথা, অধিকাংশই শ্বেতাঙ্গ, যারা তাদের পুরনো স্বচ্ছলতার দিনে ফিরতে চায় এবং এদের জন্যই ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্লোগান— মেক আমেরিকা গ্রেট এগেন।

গুপি গায়েন বাঘা বায়েন-এর দৃশ্যগুলি ২০১৬-র আসন্ন আমেরিকান ভোটের প্রেক্ষাপটে লেখা হলে এমনই হবে আজকের দিনে। এক দিকে আছেন চিরপরিচিত হিলারি ক্লিন্টন ও তাঁর বাঘা বাঘা শাগরেদরা, যাঁরা এ দেশে ‘সারোগেটস’ বলে পরিচিত। কে নেই হিলারি ক্লিন্টনের এই টিমে! বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তস্য ভার্যা মিশেল ওবামা, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন, বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন— এ ছাড়াও বহু সেনেটর ও লোকাল কংগ্রেস প্রতিনিধি আদাজল খেয়ে আমেরিকার সুইং স্টেটগুলো চষে ফেলছেন হিলারির হয়ে প্রচার করতে। আর অন্য দিকে শুধুই আছেন শ্বেতাঙ্গদের নয়নের মণি ডোনাল্ড ট্রাম্প।

দীর্ঘ দিন হয়ে গেল আমেরিকার রাজনৈতিক নেতারা আম আদমির কথা ভুলে গিয়েছে। লোকেদের মাইনেপত্তর ও মিনিমাম ওয়েজ, প্রধানত যাঁরা ব্লু কলার জব করেন তা অনেক দিন ধরেই এক জায়গাতে দাঁড়িয়ে আছে। এ দিকে যারা দিনের পর দিন মর্কিন কংগ্রেসে এই মিনিমাম ওয়েজ বৃদ্ধির বিরোধিতা করেছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প সেই রিপাবলিকানদের হয়ে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী। এবং যাঁরা এই মাইনেপত্তর কম বলে এত দিন হা-হুতাশ করেছেন তাঁরাই আবার হইহই করে মাঠে নেমে পড়েছেন ট্রাম্পের সমর্থনে।

নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছেন। এ কী করে সম্ভব! আসলে ভারতের মতো পার্টি-নির্ভর ইলেকশন এখানে নয়। ক্যান্ডিডেট এখানে পার্টির লাইনে না-ই খেলতে পারেন। যেমন ধরুন, ডোনাল্ড ট্রাম্প কিন্তু এখানে জনগণকে বোঝাতে সমর্থ হয়েছেন যে, ইরাকে যুদ্ধে যাওয়াটা এক ব্যাপক ভুল হয়েছিল। এবং অধিকাংশ লোক যারা দেশপ্রেমের বানে ভেসে গিয়ে দু’হাত তুলে জর্জ বুশকে সমর্থন করেছিলেন, তাঁরাও ট্রাম্পের এই কথা মেনে নিয়েছেন।

এ দিকে গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো বেড়েই চলেছে হেল্‌থকেয়ারের খরচা। ওবামা-কেয়ার চালু হওয়ার ফলে প্রায় দু’কোটি মানুষ হেল্‌থকেয়ার ইন্সিওরেন্স-এর আওতায় এলেও খরচা বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। সম্প্রতি এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, পরের বছর এই খরচা পরিবার প্রতি প্রায় ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। ব্যস, আগুনে যেন ঘৃতাহুতি হয়েছে। ট্রাম্প প্রতি জনসভায় এই ওবামা-কেয়ারকে নিয়ম করে গালি পাড়ছেন এবং ক্ষমতায় এলেই এই আইনটিকে পত্রপাঠ বাতিল করবেন বলে হুমকি দিচ্ছেন।

কিন্তু, বাতিল করলেই কি সমস্যার সমাধান হবে?

যে দু’কোটি মানুষ এই ওবামা-কেয়ারের দৌলতে স্বাস্থ্য বিমা পেয়েছেন, তাঁদের কী হবে? এই ব্যাপারে ট্রাম্প সম্পূর্ণ নীরব। তাঁর মুখে একই কথা, ‘‘আই উইল রিপিল অ্যান্ড রিপ্লেস দ্য ওবামা-কেয়ার।’’ এবং সেই সব লোক যাঁদের পকেটে টান পড়েছে এ জন্য তাঁরা চট করে ট্রাম্পের সমর্থক বনে গিয়েছেন। হিলারি ক্লিন্টন কিন্তু বলছেন, ওবামা-কেয়ার সম্পূর্ণ নাকচ করে সমস্যার সমাধান হতে পারে না। বরং এই আইনে কিছু সংশোধন করা হোক। কিন্তু, ট্রাম্পের চিল চিৎকারে সে কথা লোকের কানে পৌঁছচ্ছে বলে তো মনে হচ্ছে না!

তার পরে আছে বেআইনি অভিবাসন নিয়ে সমস্যা। কী করা হবে এঁদের নিয়ে? এঁরা নাকি মার্কিন আর্থিনীতির ওপর এক বোঝা! ট্রাম্প তো ক্ষমতায় আসার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এঁদের প্লেনে তুলে দেবেন বলে জানিয়েছেন। আরও কথা দিয়েছেন, মেক্সিকো সীমা বরাবর এক বিশাল কংক্রিটের (এটা নাকি হতেই হবে) পাঁচিল তুলে দেবেন। কল্পনা করলে যা হবে চিনের প্রাচীরের সমতুল্য। হয়তো বৃহস্পতি গ্রহ থেকে দেখা যাবে আধুনিক যুগের অষ্টম আশ্চর্যকে! লিবারাল হিলারি এই ব্যাপারে ‘ইললিগাল ইমিগ্র্যান্ট’দের প্রতি বিশেষ ভাবে সহানুভূতিশীল। আর হবেন না-ই বা কেন? এখানকার ল্যাটিনো পপুলেশন তো ডেমক্র্যাটদের জন্য এক বিশাল ভোট ব্যাঙ্ক। তিনি বলেছেন, এদেরকে অ্যামনেস্টি দেওয়ার জন্য নতুন আইন পাশ করাতে হবে মার্কিন কংগ্রেসে। বারাক ওবামাও চেয়েছিলেন, এই নিয়ে আইন পাশ করতে। কিন্তু রিপাবলিকানদের আপত্তিতে তা আর সম্ভব হয়নি। এর পরে ক্ষুব্ধ ওবামা এক এগ্‌জিকিউটিভ অর্ডার মারফত ‘ইললিগাল ইমিগ্র্যান্ট’দের অ্যামনেস্টি দিয়েওছিলেন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টে তা খারিজ হয়ে যায়। স্বাভাবিক ভাবে এতে বেজায় চটেছেন এ দেশের শ্বেতাঙ্গ জনগণ, বিশেষত তাঁরা, যাঁদের রুটিরুজি নিয়ে প্রায় ল্যাজেগোবরে অবস্থা।

এই লেখা লিখতে লিখতেই খবর পাওয়া গেল যে, এফবিআই ডিরেক্টর জেমস কোমি আবার কংগ্রেসকে চিঠি লিখে জানিয়েছেন, হিলারি ক্লিন্টন ইমেল কেলেঙ্কারিতে আর নতুন করে কিছু পাওয়া যায়নি। রাজনীতির যাঁরা খবরাখবর নিয়ে থাকেন, তাঁরা এই খবরে যত না বিস্মিত, তার থেকে বেশি হয়রান কোমি কাণ্ডের যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা খুঁজতে। নিন্দুকেরা বলছেন, এফবিআই-এর ৮১ শতাংশ অফিসার শ্বেতাঙ্গ এবং এর মধ্যে অনেক লোকজনই কট্টর ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থক। বহু দিনের ঐতিহ্যশালী এই প্রতিষ্ঠান নাকি আড়াআড়ি ভাবে দুই ভাগে ভেঙে গিয়েছে। স্বয়ং জেমস কোমিই এক জন কেরিয়ার রিপাবলিকান। ন’দিন আগের ওই অক্টোবর সারপ্রাইজের নাটকটা এই কট্টর অফিসারদের চাপেই নাকি মঞ্চস্থ করা হয়েছিল। কিন্তু, কোমি ওবামার কাছে তুমুল ধমক খেয়ে আবার পথে এসেছেন।

কিন্তু, এই ‘সারপ্রাইজ’ ফিরিয়ে নিলেও শুনছে কে? প্রত্যেকটা সুইং স্টেট থেকেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের খবর আসছে। নেট সিলভারের সাইটে হিলারি দু’সপ্তাহ আগের ৮৫ থেকে কমতে কমতে এখন ৬৫-৩৫ ফেভারিট। শেষ মুহূর্তের জনমত সমীক্ষাগুলোতে হিলারি ১ থেকে ৪ শতাংশে এগিয়ে আছেন। দু’-একটি পোলে ট্রাম্পও এগিয়ে। নেভাদা থেকে খবর আসছে প্রচুর পরিমাণ ল্যাটিনো ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিচ্ছেন। ও দিকে নিউ হ্যাম্পশায়ারের ৪টি ইলেক্টোরাল ভোটও দু’পক্ষের কাছে অত্যন্ত মূল্যবান হয়ে দেখা দিয়েছে।

কে জিতবে বলা প্রায় ‘মুশকিল হি নেহি নামুমকিন হ্যায়’। কিন্তু একটা ব্যাপার খুব পরিষ্কার, আমেরিকান রাজনীতিতে শ্বেতাঙ্গ ভোটারদের আধিপত্য আর থাকবে কি না সেটা ঠিক হতে চলেছে এই নির্বাচনে।

আরও পড়ুন: হিলারি না ট্রাম্প, কে জিতলে ভারতের সুবিধা?

আমেরিকার এ বারের ভোট এবং পুঁটিদি

Hillary Clinton US Presidential Election
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy