চিনা রোগীদের প্রবেশ নিষেধ। ভিয়েতনামের এক হাসপাতালে রয়েছে এই নোটিস। রয়টার্স
চিনের রহস্যময় ভাইরাস নিয়ে গোটা পৃথিবীকে সতর্ক হতে বলল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। সীমান্ত পেরিয়ে অন্তত ১৬টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে নোভেল করোনাভাইরাস। চিনে মৃতের সংখ্যা ১৭০ পেরিয়ে গিয়েছে। সংক্রমিতের সংখ্যা কমপক্ষে ছ’হাজার। অথচ পৃথিবীর কোনও প্রান্তে কোনও চিকিৎসকের হাতে এখনও পর্যন্ত কোনও নিশ্চিত প্রতিষেধক নেই।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অন্যতম অধিকর্তা মাইক রায়ানের কথায়, ‘‘চিন দারুণ ভাবে চ্যালেঞ্জ নিয়েছে। কিন্তু গোটা পৃথিবীকে সতর্ক হতে হবে।’’ তিনি আরও জানিয়েছেন, একটি বিশেষজ্ঞ দল তৈরি করা হয়েছে। তাঁরা খুব কাছ থেকে বিষয়টির উপরে নজর রাখছেন। রায়ান বলেন, ‘‘আমার বিশ্বাস এখনও এই সংক্রমণ-রহস্য ভেদ করা যাবে।’’ বেজিং সরকার বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, নোভেল করোনাভাইরাস হামলা মোকাবিলায় প্রায় চারশো কোটি ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে। সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছেন শিল্পপতি জ্যাক মা এবং বিল ও মেলিন্ডা গেটস।
চিনে সব চেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হুবেই প্রদেশ। এখানের উহান শহর থেকে প্রথম ভাইরাসটি ছড়ায়। ডিসেম্বরের শেষে প্রথম সংক্রমণের খবর মেলে। তার পর থেকে এ পর্যন্ত ১৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে চিনে। ছ’হাজার সংক্রমিতের মধ্যে ১৩৭০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। জাপান-আমেরিকার পরে নিউজিল্যান্ড, সিঙ্গাপুরও তাদের দেশের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টায়। একই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ভারত। কিন্তু তুলনায় ছোট দেশগুলোর বাসিন্দারা বিপাকে পড়েছেন। যেমন সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে নিয়ে উহানে আটকে রয়েছেন তাইল্যান্ডের এক দম্পতি। ৩২ বছর বয়সি আফিনিয়া তাসরিপেক বলেন, ‘‘ওরা (জাপান, আমেরিকা) তো দেশের মানুষকে উদ্ধার করে নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের কথা কেউ ভাবছে না। হয় না খেতে পেয়ে মরব, না হলে সংক্রমিত হয়ে...।’’
উহানের সঙ্গে বাকি দেশের যাবতীয় যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ। বাস, ট্রেন, বিমান, এমনকি ফেরিও চলছে না। অন্তত ১ কোটি মানুষ ‘তালাবন্ধ’ শহরে আটকে। এর মধ্যে আফিনিয়ার মতো বহু বিদেশি রয়েছেন। তিনি জানালেন, তাইল্যান্ডের ৬৫ জন উহানে আটকে। বেশ কয়েক দিন আগে ব্যাঙ্কক প্রশাসন তাদের জানিয়েছিল চিনের অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছে তারা। তার পরেই উদ্ধারের ব্যবস্থা করবে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সদর্থক খবর পাননি আফিনিয়া। বললেন, ‘‘আজ হোক বা কাল হোক, আমরাও সংক্রমিত হব।’’ একই বক্তব্য, তাইল্যান্ডের মেডিক্যাল পড়ুয়া বাদিফাক কাওসালা বলেন, ‘‘কতগুলো দেশকে অনুমতি দিয়ে দিল চিন... আমাদের অবস্থা সত্যিই খারাপ।’’ একই আক্ষেপ ঝরে পড়েছে পাকিস্তানের রুকিয়া শেখের গলায়। ইন্দোনেশিয়ার মেডিক্যাল পড়ুয়া বাট ফাদিলও হতাশ। দক্ষিণ কোরিয়া, ফ্রান্স, ব্রিটেন বিমান পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিশেষ বিমান পাঠাচ্ছে নিউজিল্যান্ড, সিঙ্গাপুরও। জাপান ইতিমধ্যেই দু’টি বিমানে করে তাদের দেশের নাগরিকদের নিয়ে গিয়েছে।
এয়ার ইন্ডিয়া, ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ, লায়ন এয়ার, ইন্ডিগোর মতো উড়ান সংস্থা তাদের চিনগামী বিমান পরিষেবা আপাতত বন্ধ রেখেছে। বেজিং সরকার নিজেও বলছে, দেশের বাইরে কোথাও সফর না করতে। আবার যে সব চিনা নাগরিক প্রবাসে রয়েছেন, তাঁদের দেশে ফিরতে বারণ করছে সরকার। রাশিয়া আজ জানিয়েছে, চিন-রাশিয়া সীমান্ত অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ রাখার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। এই পরিস্থিতিতে উহানে আটকে পড়া ছোট দেশগুলোর বাসিন্দাদের আতঙ্ক ক্রমে গ্রাস করছে। মায়ানমারের এক যুবকের আর্তি, ‘‘বোকা না হলে কে এখানে থাকবে। সব দেশ নিজেদের লোকেদের নিয়ে যাচ্ছে... আমরা কবে ফিরব?’’ পাকিস্তান সরকার জানিয়েছে, তারা কাউকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে না। উহানে অন্তত ৮০০ পাকিস্তানি আটকে রয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy