ন্যু কুশে। মোদিগ্লিয়ানির এই ছবিটিই নিলাম হয়েছে ১৭ কোটি ডলারে।
আমেদিও মোদিগ্লিয়ানি। বাড়ির সব চেয়ে ছোট। সব চেয়ে রুগ্ণ। কিছুটা অস্বাভাবিক গোছেরও। উদ্বিগ্ন মা তাই ডায়েরির পাতায় লিখে রেখেছিলেন— ‘‘কিছুতেই বুঝতে পারি না ছেলেটাকে। কী যে হবে এর? আচার-আচরণে হাবাগোবা। কখনও আবার চূড়ান্ত বখাটে। বুদ্ধি যে নেই, সেটাই বা বলি কী করে! তবে কি বড় হয়ে ও শিল্পী হবে!’’
ডায়েরির সেই পাতা ১৮৯৫ সালের। বিশ শতকের প্রথমার্ধের সাড়া জাগানো ইতালীয় চিত্রশিল্পী ও ভাস্কর মোদিগ্লিয়ানি তখন সবে এগারোয় পা রেখেছেন। ছেলের শিল্পী হয়ে ওঠা, দেখে যেতে পারেননি মা। খ্যাতি কাকে বলে, টের পাননি মোদিগ্লিয়ানি নিজেও। যক্ষ্মায় ভুগে শিল্পীর আয়ু খতম মাত্র পঁয়ত্রিশেই।
তাঁর শিল্পকর্ম অবশ্য রয়ে গিয়েছে বহাল তবিয়তে। আক্ষরিক অর্থেই রাজার হালে। ১৯১৭-১৮ নাগাদ মোদিগ্লিয়ানির আঁকা একটি ‘ন্যুড’ (নগ্ন-শায়িতা) সোমবার রাতে নিউ ইয়র্কের ক্রিস্টি মিউজিয়ামের নিলামে বিকোল ১৭ কোটি ডলারে। এখনও পর্যন্ত তাঁর আঁকা সব চেয়ে দামি ছবি।
নিলামে বিক্রি হওয়া বিশ্বের দ্বিতীয় দামি ছবির শিরোপাও পেল ‘ন্যু কুশে’।
পাবলো পিকাসোর আঁকা ১৮ কোটির ছবির ঠিক পরেই। ১০০ মিলিয়ন ডলার ক্লাবের যে প্রথম দশটি ছবি, তাতেও ঢুকে পড়লেন মোদিগ্লিয়ানি। অথচ আর্থিক অনটনে এক সময় প্যারিসের স্টুডিও থেকে এই সিরিজের সব ছবিই তিনি মাত্র ৩০০ ডলারে বেচতে চেয়েছিলেন, পারেননি। শেষ মুহূর্তে পিছিয়ে যান ক্রেতারা।
সোফার উপর নীল বালিশে পিঠ দিয়ে শুয়ে এক বিবস্ত্র নারী। নিলামে বিক্রি মোদিগ্লিয়ানির এই ছবিটিও প্যারিসের স্টুডিওতেই আঁকা। যা প্রথম প্রচারের আলো দেখে শিল্পীর জীবদ্দশাতেই। প্রদর্শশালায় ছবিটি দেখানো মাত্র বিস্তর সমালোচনার মুখে পড়েন শিল্পী। ওঠে অশ্লীলতার অভিযোগ। তবে সোমবার সেই বিতর্কের লেশ মাত্র ছিল না। প্রদর্শনীতে পিকাসোর মতো শিল্পীদের ছবি থাকা সত্ত্বেও এই ছবিটি ঘিরেই উত্তেজনা সব চেয়ে বেশি ছিল।
আদৌ এই ছবিটি এত বেশি দামে বিক্রি হওয়া উচিত কি না, প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তবে মোদিগ্লিয়ানির এই ছবি যিনি কিনেছেন, সেই চিনা সংগ্রাহক লিউ ওয়াইকিয়ানের এ নিয়ে বিশেষ মাথাব্যথা নেই। নিলামে তিনি উপস্থিত ছিলেন না। বাজিমাত করেন মোবাইলে দর হেঁকেই। লড়াইটা যদিও সহজ ছিল না। খ্যাতনামা ইতালীয় চিত্র সংগ্রাহক গিয়ানি মাত্তিয়োলির মেয়ে মাত্তিয়োলি রোজি ছবিটির ন্যূনতম মূল্য ধার্য করেন ১০ কোটি ডলার। তাতেও দর হাঁকেন অন্তত ছ’জন। নিলাম চলে ন’মিনিট। শেষ হাসি ফোটে লিউয়ের মুখেই।
এই ছবি ঘিরে কৌতূহলের রেশ তবু কাটছে না। বাস্তবে কে এই নগ্ন-শায়িতা? শিল্পীর কোনও প্রেমিকা, নাকি পেশাদার মডেল? উত্তর নেই। তবে শিল্পীর আত্মীয় ও নোবেলজয়ী ফরাসি ঔপন্যাসিক প্যাট্রিক মোদিয়ানোর মতে, শিল্পীর বেশির ভাগ ছবিই সমাজের অন্ত্যজ শ্রেণির মেয়েদের দেখে আঁকা। তাঁর দাবি, সাধারণ চেহারার মধ্যে থেকেই তুলির আঁচড়ে অন্তরের আভিজাত্য ফুটিয়ে তুলেছেন মোদিগ্লিয়ানি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy