Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Xi Jinping

ভারত মহাসাগর নাগালে আনতে সু চি-র দেশে শি

শুধু সড়ক নয়, দ্রুতগামী ট্রেনের মাধ্যমে চিনের জমিঘেরা ইউনান প্রদেশের সঙ্গে মায়ানমারের ওই বন্দরকে জোড়ার পরিকল্পনা রয়েছে বেজিংয়ের।

চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনফিং। —ছবি এপি।

চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনফিং। —ছবি এপি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২০ ০৬:০০
Share: Save:

লগ্নি বিস্তারে অন্যেরা যেখানে যেতে রাজি নয়, সেখানেই পা রাখতে প্রবল আগ্রহ চিনের। শুক্রবার দু’দিনের সফরে মায়ানমারে যাচ্ছেন চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনফিং।

রাখাইনে রোহিঙ্গা গণহত্যা ও দেশ থেকে ৭.৪ লক্ষ রোহিঙ্গাকে বিতাড়নের অভিযোগ রাষ্ট্রপুঞ্জ ও অন্য সব মঞ্চে খণ্ডন করে এসেছেন মায়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা আউঙ সান সু চি। যে কারণে বিশ্বে এই শান্তি-নোবেল বিজয়িনীর ভাবমূর্তি নিদারুণ ভাবে টলে গিয়ে গিয়েছে। রাখাইনে লগ্নি করার প্রশ্নে মুখ ফিরিয়ে রেখেছে সব দেশ। চিন কিন্তু এই রাখাইনেরই কিয়াউকফিউ বন্দর মারফত নাগালে পেতে চায় বঙ্গোপসাগরকে ও তার মাধ্যমে সরাসরি ভারত মহাসাগরকে। তার জন্য চিন-মায়ানমার আর্থিক করিডর প্রকল্পের পথ সুগম করাই শি-র এই সফরের অন্যতম লক্ষ্য।

শুধু সড়ক নয়, দ্রুতগামী ট্রেনের মাধ্যমে চিনের জমিঘেরা ইউনান প্রদেশের সঙ্গে মায়ানমারের ওই বন্দরকে জোড়ার পরিকল্পনা রয়েছে বেজিংয়ের। সামগ্রিক ভাবে দেখলে মায়ানমারে সবচেয়ে বড় বিদেশি লগ্নিকারী হিসেবে চিনের প্রভাব প্রতিষ্ঠা করাই শি-র সফরের মূল লক্ষ্য। এবং সেই লক্ষ্যে সু চি-র সঙ্গে বৈঠক করবেন শি। কথা বলবেন সেনাপ্রধান মিন আউঙ লেইং ও প্রেসিডেন্ট উ উইন মিয়িন্টের সঙ্গে।

এমনিতে মায়ানমারের সঙ্গে যে চিনের সম্পর্ক মধুর তা নয়। চিনা লগ্নিতে যে ঋণের ফাঁদে দেশ বিকিয়ে যেতে পারে— সেই আশঙ্কা রয়েছে মায়ানমারেরও। তাদের বিদেশি ঋণ যত, তার ৪০ শতাংশই চিনের কাছে। কিয়াউকফিউ বন্দরের উন্নতি ঘটাতে চিন ৭২০ কোটি ডলার ঢালতে চেযেছিল। কিন্তু দেনার দায়ে বিকিয়ে যাওয়ার ভয়েই সেটা ১৩০ কোটি ডলারে নামিয়ে এনেছে সু চি-র দেশ।

এই বিপদের কথা ভাল ভাবে জানে পাকিস্তানও । তবে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ‘মিত্র’ দেশের রক্ষাকারীর ভূমিকা নিয়ে সেই দেশে পরিকাঠামো ও লগ্নি প্রসারের রাস্তা করে নেওয়াটা চিনের পরিচিত কৌশল। পাকিস্তানের গদর বন্দরে লগ্নি করে ও চিন-পাক আর্থিক করিডর গড়ে তুলে পশ্চিমে আরব সাগর পর্যন্ত নিজেদের বাণিজ্যপথ অবাধ করতে চায় চিন। এ জন্য সন্ত্রাসে মদতের প্রশ্নে আন্তর্জাতিক মঞ্চে কোণঠাসা পাকিস্তানের ঢাল হতেও দ্বিধা নেই বেজিংয়ের। বার বার সেটার প্রমাণ পেয়েছে ভারত।

মায়ানমারের ক্ষেত্রেও চিনের কৌশল একই। রোহিঙ্গা প্রশ্নে তারা পাশে দাঁড়িয়েছে মায়ানমারের। রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে মায়ানমারের আলোচনাতেও প্রভাব খাটাচ্ছে বেজিং। লক্ষ্য, মায়ানমারে সড়ক ও রেলপথ গড়ে ভারত মহাসাগর পর্যন্ত বাণিজ্যপথের বিস্তার ঘটানো। বিশ্বের বিশাল অংশ জুড়ে চিনের সামরিক দাপটও বাড়বে যার মাধ্যমে।

পাকিস্তানের সঙ্গে মিত্রতার সম্পর্ক থাকলেও চিন-পাক আর্থিক করিডরের পথে বড় বাধা ভারত। কারণ, ওই সড়কের অনেকটা হওয়ার কথা পাক-অধিকৃত কাশ্মীর দিয়ে, ভারত যা নিজেদের বলে দাবি করে। ফলে ওই সড়ক নিয়ে গোড়া থেকেই জোরালো আপত্তি জানিয়ে যাচ্ছে ভারত। মায়ানমারে আর্থিক করিডর গড়ার প্রশ্নে চিন-মায়ানমার সীমান্তে জাতি-সংঘাত, রাখাইন ও মায়ামারের অন্যত্র জঙ্গিদের ঘাঁটির মতো কিছু সমস্য রয়েছে। তবে জঙ্গিদের সঙ্গে চিনা দূত ইতিমধ্যেই কথা বলে রেখেছে, যাতে শি-এর সফরে কোনও রকম বাগড়া না-দেয় তারা। এই প্রথম চিনের কোনও প্রেসিডেন্ট মায়ানমারে আসছেন। শি ২০০৯-এ গিয়েছিলেন মায়ানমারে। ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Xi Jinping China Myanmar Indian Ocean
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE