প্রতীকী চিত্র।
দু’জনেই অভিযুক্ত খাগড়াগড় বিস্ফোরণ মামলায়। দু’জনেই ভারতীয় নাগরিক, পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা। এক জন ধরা পড়েছে প্রায় দেড় বছর আগে। অন্য জনের হদিস পাওয়া যায়নি এখনও, ঘটনার পর দু’বছর ঘুরতে চললেও। তবে খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের ন’বছর আগেই সীমান্ত টপকে বাংলাদেশে গিয়ে সেখানে ধারাবাহিক নাশকতায় তারা সামিল হয়েছিল বলে জেনেছেন গোয়েন্দারা।
তদন্তকারীদের দাবি, বর্ধমানের কৃষ্ণবাটী গ্রামের ইউসুফ গাজি ও মুর্শিদাবাদ জেলার নবগ্রামের লাল মহম্মদ ওরফে ইব্রাহিম ২০০৫ সালের ১৭ অগস্ট গোটা বাংলাদেশ কাঁপিয়ে দেওয়া সেই ধারাবাহিক বিস্ফোরণে জড়িত। আর খাগড়াগড় বিস্ফোরণ মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত ও ফেরার বাংলাদেশি নাগরিক কওসর ওরফে বোমা বিমাজনই তাদের সঙ্গে করে চোরাপথে সীমান্ত পেরোয়। এই কওসরের নাম ২০১৪-র ২ অক্টোবর খাগড়াগড় বিস্ফোরণের দিনই জানা গিয়েছিল।
কলকাতার এনআইএ আদালতে খাগড়াগড় বিস্ফোরণ মামলার বিচার শুরু হয়েছে ২০ অগস্ট। কিন্তু এখনও ধরা পড়েনি কওসর, ইউসুফ গাজি-সহ পাঁচ-ছ’জন জঙ্গি চাঁই। তাদের হদিস পেতে ও তাদের গোপন আস্তানার সন্ধানে সম্প্রতি জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর এক বহু পুরনো, প্রাক্তন সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন গোয়েন্দারা। মুর্শিদাবাদের ওই বাসিন্দার এখন জঙ্গি সংস্রব নেই বলে গোয়েন্দাদের একাংশের দাবি। ২০০৭ সালে সে সন্দেহজনক কাজকর্মের জন্য গ্রেফতারও হয়েছিল। তার কাছ থেকেই প্রথমে জানা যায় বিষয়টি। পরে লাল মহম্মদও স্বীকার করে নেয় বলে গোয়েন্দাদের দাবি।
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, সে বছর জুলাই মাসে ইউসুফ ও লাল মহম্মদ লালগোলা সীমান্ত দিয়ে চোরাপথে বাংলাদেশে ঢোকে। প্রথমে তারা ঘাঁটি গাড়ে ঢাকার মিরপুরে জেএমবি-র একটি ডেরায়। সেখানে মাস খানেক যাবৎ তাদের দু’জনকে জেহাদি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, তার পর তারা ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস বা আইইডি বানানোরও তালিম নেয় দু’সপ্তাহ ধরে। সব শেষে কোথায় কী ভাবে আঘাত হানতে হবে, সেটা বুঝিয়ে দেওয়া হয়। তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, লাল মহম্মদ ওরফে ইব্রাহিম জেরায় জানিয়েছে, মিরপুরে জেএমবি-র ওই ডেরাতেই সে প্রচুর আইইডি তৈরি হতে দেখেছিল।
২০০৫-এর ১৭ অগস্ট বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ৬৩টি জেলার ৩০০টি জায়গায় প্রায় ৫০০ কমজোরি বোমার বিস্ফোরণ হয়, নিহত হন দু’জন ও জখম হন একশো জনেরও বেশি। ওই ঘটনার পরেই জেএমবি-র চাঁই ও সদস্যদের ব্যাপক ধরপাকড় শুরু হয় গোটা বাংলাদেশ জুড়ে।
তবে ইউসুফ ও লাল মহম্মদ বাংলাদেশের কোথায় বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল, সে কথা এখনও জানা যায়নি বলে গোয়েন্দাদের দাবি।
খাগড়াগড় বিস্ফোরণ মামলার চার্জশিটে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের মাটিকে ব্যবহার করে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করার লক্ষ্যে ধারাবাহিক নাশকতার প্রস্তুতি চলছিল। তাতে বাংলাদেশের কয়েক জন নাগরিকের সঙ্গে জেএমবি সদস্য পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দারাও জড়িত।
এ বার সেই তদন্তের সূত্রে জানা গেল, অনেক আগেই এ পার বাংলার লোক ও পার বাংলায় গিয়ে বড়সড় নাশকতায় সামিল হয়েছে।
কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারত থেকে ওই নাশকতায় লোক নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হল কেন জেএমবি-র?
এনআইএ-র বক্তব্য, ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ থেকে জেএমবি-র চাঁই মামুদ ও হাতকাটা নাসিরুল্লা ওরফে সোহেল মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরে এসে এই রাজ্যে সংগঠনের শাখা তৈরি করে। এই নাসিরুল্লাও কিন্তু খাগড়াগড় বিস্ফোরণ মামলার অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত। তার পর এই রাজ্যে জেএমবি-র পুরোদস্তুর কাজ শুরু হয় ২০০২ সালে।
পরে, ২০০৭-এর এপ্রিলে লালগোলার ফতেপুর গ্রামে জেহাদি মতাদর্শ ও দেশ-বিরোধী ভাবধারা প্রচারের অভিযোগে পুলিশ তিন জনকে গ্রেফতার করে, সেই সময়েই ‘জেএম’ লেখা বেশ কিছু চিরকুট উদ্ধার করা হয়েছিল। কিন্তু কোনও কারণে বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়, শিকড় পর্যন্ত যাওয়া হয়নি বলে দাবি এনআইএ-র। সেই সময়ে ধৃতদের অন্যতম ছিল মুর্শিদাবাদ জেলার বাসিন্দা সেই ব্যক্তি, যার কাছ থেকেই সম্প্রতি জানা গেল ২০০৫-এর বাংলাদেশের নাশকতায় ইউসুফ ও লাল মহম্মদের জড়িত থাকার কথা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy