Advertisement
০৬ মে ২০২৪

প্রেমের জোয়ারে হার মানল পরিবারের চোখরাঙানি

কিছু কিছু রূপকথা সত্যি হয়! সেই আফগানিস্তান। যেখানে আজও বাড়ির অমতে বিয়ে করার অপরাধে আকছারই সম্মানরক্ষার্থে খুন করা হয় মেয়েদের। সেই দেশেই এ বার যাবতীয় চোখরাঙানি, হাজারো প্রতিরোধ উড়িয়ে ফের এক হল চার হাত। আঠারো বছরের জাকিয়া প্রেমে পড়েছিল একুশের মহম্মদ আলির। “ভিন্ জাত, তাই বিয়ের স্বপ্নও দেখো না” প্রথম দিনই মেয়েকে সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন বাবা-মা। কিন্তু হার মানার পাত্রী নন জাকিয়া। মার্চ মাসে বাড়ি থেকে পালিয়েই শেষ পর্যন্ত বিয়ে করেন নিজের পছন্দের পাত্রকে।

মুক্তি পাওয়ার পর জাকিয়া ও মহম্মদ।

মুক্তি পাওয়ার পর জাকিয়া ও মহম্মদ।

সংবাদ সংস্থা
কাবুল শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৪ ০৩:১৩
Share: Save:

কিছু কিছু রূপকথা সত্যি হয়!

সেই আফগানিস্তান। যেখানে আজও বাড়ির অমতে বিয়ে করার অপরাধে আকছারই সম্মানরক্ষার্থে খুন করা হয় মেয়েদের। সেই দেশেই এ বার যাবতীয় চোখরাঙানি, হাজারো প্রতিরোধ উড়িয়ে ফের এক হল চার হাত।

আঠারো বছরের জাকিয়া প্রেমে পড়েছিল একুশের মহম্মদ আলির। “ভিন্ জাত, তাই বিয়ের স্বপ্নও দেখো না” প্রথম দিনই মেয়েকে সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন বাবা-মা। কিন্তু হার মানার পাত্রী নন জাকিয়া। মার্চ মাসে বাড়ি থেকে পালিয়েই শেষ পর্যন্ত বিয়ে করেন নিজের পছন্দের পাত্রকে।

সেই শুরু। এই দম্পতির সংসার বলতে তার পর থেকেই কেবল ছুটে বেড়ানো। মেয়ের বিয়ের খবর পেয়ে থানায় যান জাকিয়ার মা-বাবা। তাঁদের অভিযোগ, এর আগে এক আত্মীয়র সঙ্গে নিকাহ্ হয়েছিল মেয়ের। তাই দ্বিতীয় বিয়ে সে করতে পারে না। তা ছাড়া, তাঁদের মতে জাকিয়াকে এই বিয়েতে জোর করে রাজি করিয়েছিল মহম্মদ। এই ভাবে চাপ দিয়ে বিয়ে করা আফগান আইনে নিষিদ্ধ। থানায় অভিযোগ জানিয়েই থামেননি তাঁরা। জাকিয়ার দাবি, এর পর প্রকাশ্যে তাঁদের খুন করার হুমকিও দিতে থাকেন বাড়ির লোকজন।

অগত্যা গা-ঢাকা দেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না মহম্মদ-জাকিয়ার কাছে। বাড়ি থেকে পালিয়ে প্রথমেই তাঁরা যান মধ্য আফগানিস্তানের পাহাড় ঘেরা উপত্যকায়। ক’দিন বাদে আস্তানা গোটাতে হয় সেখান থেকেও। পরের গন্তব্য কাবুল। কিন্তু সেখানে পৌঁছনোর পর মহম্মদকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন তাঁর নিজের আত্মীয়রা। তাঁরাই ধরে নিয়ে যান থানায়।

স্বামীকে ফাটকে পোরার পর আর একা থাকার সাহস পাননি জাকিয়া। আফগান মহিলাদের আশ্রয় দেয়, এমন একটি সংগঠনের কাছে নিজে থেকেই গিয়ে ধরা দেন তিনি। জাকিয়া-মহম্মদের প্রেম কাহিনির এই করুণ পরিণতির কথা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনা ঝড় ওঠে।

শেষ পর্যন্ত হস্তক্ষেপ করেন আফগানিস্তানের অ্যাটর্নি জেনারেল মহম্মদ ইশক অলোকো। তাঁর নির্দেশ পেয়ে বিয়ের শংসাপত্র দেখানোর পরে থানা থেকে ছাড়া পান মহম্মদ আলি। স্বামীর মুক্তির খবর পেয়ে আশ্রয় শিবির থেকে বেরিয়ে আসেন জাকিয়াও।

প্রেমের গল্প কিন্তু ফুরোয়নি এখনও। ছাড়া পেয়েই স্বামীকে ফোন করেন জাকিয়া। ঠিক করেন, একটা নির্দিষ্ট জায়গায় আলাদা আলাদা পৌঁছবেন তাঁরা। নিভৃতে দেখা হবে দু’জনের। মহম্মদের কথায়, এই বিচ্ছেদ যেন শাপে বর। এত দিন আলাদা থেকে ভালবাসা গাঢ় হয়েছে আরও। “ধরা পড়ার আগে আমি ১০০% খুশি ছিলাম। আর এখন ১০০০%” হাসিমুখে জানান তিনি।

জাকিয়ার মতো এত সৌভাগ্য হয়নি প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানের ফরজানার। পরিবারের অমতে বিয়ে করার মাসুল প্রাণ দিয়ে দিতে হয়েছিল ওই তরুণীকে। গত মাসের শেষে লাহৌর হাইকোর্টের একেবারে সামনে ইট দিয়ে থেঁতলে ফরজানাকে খুন করে তার বাবা-ভাইয়েরা। পাক-আফগান মুলুকে ফরজানারাই চেনা ছবি, জাকিয়া রা নয়। এ বার থেকে রূপকথারাই সত্যি হোক সেখানে প্রত্যাশী গোটা বিশ্ব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kabul zakia mohammad
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE