বাংলাদেশের অর্থনীতি দুরন্ত নদী। বাঁকে বাঁকে অবাধ গতি। ছুটছে সাগর সঙ্গমে। রোখে কে। পুঁজির বাজার বাড়ন্ত। নিশ্চিন্তে কৃষি উন্নয়ন, শিল্প স্থাপন। নগরায়ণে, শিল্পস্থাপনে জমি কমছে। কম আবাদেই বেশি সোনা। বিজ্ঞান-প্রযুক্তির ম্যাজিক। বৃদ্ধি জ্যামিতিক নিয়মে। দু'এর জায়গায় চার, চারে আট, আটে ষোল। ভাল চাষে চাষি সন্তুষ্ট। পুঁজির বিকাশে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি। এ সব ভাবনার বাইরে ছিল অবিভক্ত পাকিস্তানে। পশ্চিম পাকিস্তানের ব্যর্থতার মাশুল গুনতে হত পূর্ব পাকিস্তান মানে এখনকার বাংলাদেশকেও। খাদ্যশষ্যের উৎপাদন তখন ১ কোটি ১০ লাখ টন। দরকারের চেয়ে ১৫ শতাংশ কম। এখন বাংলাদেশের জমির তেজই আলাদা। ঘরে উঠছে ৩ কোটি ৮০ লাখ টন। নিজেরা খেয়ে ফুরোচ্ছে না। দেওয়া যাচ্ছে এদেশ, সেদেশকে। তারা যত পাচ্ছে, তত চাইছে। গুণগত উৎকর্ষে চাহিদা বৃদ্ধি।
আরও পড়ুন, ৮০ ভাগ রোহিঙ্গা নারী ধর্ষণের শিকার, জানাল কফি আনান কমিশন
১৯৪৯ থেকে ১৯৬৭ পরিস্থিতি ছিল সবচেয়ে করুণ। পাকিস্তানের সামরিক রাজনীতি, অর্থনীতির গলা টিপে ধরেছিল। নড়াচড়ার উপায় কোথায়। এগোনোর রাস্তায় কঠোর অবরোধ। খাদ্যের হাহাকারে ত্রাতা আমেরিকা। তাদের কাছেই হাত পেতে বাঁচা। পাকিস্তানকে বলা হত, আমেরিকার 'বাস্কেট কেস'। অতীতের দিকে আঙুল তুলে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানিয়েছেন, এমন দুরবস্থা বাংলাদেশের কখনও হয়নি। সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব হেনরি কিসিঞ্জারের মন্তব্য ভুল করে বাংলাদেশের ঘাড়ে চাপানো হয়। তিনি নাকি বলেছিলেন, বাংলাদেশ এমন একটি ঝুড়ি যার নীচটা ফাঁকা। যাকে বলে 'বটমলেস বাস্কেট'। ভর্তি করলেও খালি। কিসিঞ্জার সে কথা বলেননি। বলেছিলেন তাঁর দফতরের উপসচিব অ্যালেক্সিস জনসন। কিসিঞ্জারকে তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশ যেভাবে আবির্ভূত হচ্ছে, তাতে মনে হয় এটি একটি 'বাস্কেট কেস' হবে। যারা ঝুড়ি পেতে বসে থাকবে। সমানে তাদের দিয়ে যেতে হবে। প্রচুর দিয়েও কখনও পূর্ণ করা যাবে না। এমন দুঃসময় বাংলাদেশের আসেনি। ধীরে ধীরে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে দেশটা প্রমাণ করেছে, কারও ভরসায় নয়, স্বাধীন শক্তিতে বাঁচবে। কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে গোড়াতেই চিনেছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশ কখনই আমেরিকার বাস্কেট কেস হবে না। তাঁর কথাটাই সত্যি হয়েছে। এটা ঠিক বাংলাদেশ শুধু আমেরিকা নয় অনেক দেশের সহযোগিতা পেয়েছে। পরিবর্তে দিয়েছে অনেক, এক তরফা পাওয়া নয়। দেওয়া-নেওয়ায় দৃঢ় বিশ্ববন্ধুত্ব।
আরও পড়ুন, হাজার পড়ুয়া ধুয়ে দিলেন মায়ের পা, খাইয়ে দিলেন নিজের হাতে, আবেগবিহ্বল নীলফামারি
পরনির্ভর হয়ে চললে বাংলাদেশ আজ শক্ত অর্থনৈতিক জমি খুঁজে পেত না। সমান তালে কৃষির সঙ্গে শিল্পের বিকাশ সম্ভব ছিল না। সব দিকেই কলকারখানা মাথা তুলছে। মানুষ কাজ পাচ্ছে। কর্মসংস্থানে যুব মানসে বিষণ্ণতা কাটছে। মুহিতের মন্তব্য, বাংলাদেশের অগ্রগতিতে স্পষ্ট, আর তিন বছরে দেশে শক্তিশালী পুঁজিবাজার সৃষ্টি হবে। যার থেকে বিনিয়োগ আসবে। টাকার অভাবে কোনও প্রকল্প আটকে থাকবে না। নদীর পলি ছড়ানোর মতো ওই পুঁজি দেশের অর্থনৈতিক জমি উর্বর করবে। টাকার অভাবে চাতক পাখি হয়ে বসে থাকতে হবে না। না চাইতেই ঝমঝমিয়ে বৃষ্টির মতো নামবে মাটিতে। প্রথম বিশ্বের সমকক্ষ হয়ে ওঠার মাইলস্টোন হবে সেটাই। সেই হিসেবে বাংলাদেশের নতুন দিগন্ত উন্মোচন ২০২০-তে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy