Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

সুরে ডুবে ঢাকা, তৃতীয় রাত শেষ হল অজয় চক্রবর্তীর ভৈরবীতে

শুরুতেই দলবদ্ধ সেতারে বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিক্ষার্থীরা। পণ্ডিত কুশল কুমার দাসের গ্রন্থনায় কিরওয়ানিতে সেতার অর্কেস্ট্রার রেশ না কাটতেই ঘাটম ও কাঞ্জিরা পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে এলেন গ্র্যামি বিজয়ী পদ্মভূষণ বিদ্বান ভিক্ষু বিনায়ক রাম।

পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর সঙ্গীত আর সুরের আবহে মেতে উঠল মঞ্চ। নিজস্ব চিত্র।

পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর সঙ্গীত আর সুরের আবহে মেতে উঠল মঞ্চ। নিজস্ব চিত্র।

অঞ্জন রায়
ঢাকা শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭ ১৩:৩৩
Share: Save:

দেখতে দেখতে তিনটে রাত পার। বৃহস্পতিবার তৃতীয় রাত জাগল ঢাকার আবাহনী মাঠ। বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবে এ দিন রাতভর একটি চেয়ারও খালি ছিল না। অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল সন্ধে ৭টায়। শেষ হল আজ, শুক্রবার, ভোর ৫টা ২৫ মিনিটে। গোটা সময়টা সব্বাই ডুবে ছিলেন সুর আর ছন্দের সাগরে। বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সংগীতকারদের সামনে বসে শোনা- এ তো এক বিরল প্রাপ্তি।

শুরুতেই দলবদ্ধ সেতারে বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিক্ষার্থীরা। পণ্ডিত কুশল কুমার দাসের গ্রন্থনায় কিরওয়ানিতে সেতার অর্কেস্ট্রার রেশ না কাটতেই ঘাটম ও কাঞ্জিরা পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে এলেন গ্র্যামি বিজয়ী পদ্মভূষণ বিদ্বান ভিক্ষু বিনায়ক রাম। তার সঙ্গে ছেলে সেলভাগনেশ বিনায়ক রাম এবং নাতি স্বামীনাথন। একই মঞ্চে তিন প্রজন্মের পরিবেশনা। কাঞ্জিরা ও কোনাক্কলে স্বামীনাথন। মোরসিংয়ে ছিলেন এ গণেশন। পুরো সময়টা জুড়েই ছিল মুগ্ধতা। ঘাটমে শিব তাণ্ডব, সেভেন অ্যান্ড হাফ বিট কম্পোজিশনে ঢাকার শুদ্ধ সঙ্গীতপ্রেমীদের মনে থাকবে অনেক দিন। এর পরে মালকোষ রাগে খেয়াল নিয়ে মঞ্চে আসেন সরকারি সংগীত কলেজের শিক্ষার্থীরা। আবির হোসেনের সরোদে রাগ আভোগী এবং সঙ্গে যোগেশ সামসির তবলার সঙ্গত ছিল এক অনন্য পরিবেশনা।

গাজি আবদুল হাকিমের বাঁশির আমেজ না ফুরোতেই এলেন পণ্ডিত উদয় ভাওয়ালকর। ধ্রুপদী আমেজে সময় তখন স্থির। বিদূষী কালা রামনাথ বেহালা বাদন শেষ করলেন রাগ বসন্ত বাজিয়ে। ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত ৩টে ৩১।

আরও পড়ুন:

সুরকেও বিষণ্ণ করে দিচ্ছে ‘হলি আর্টিজান বোর্ড’!

ভরে উঠল আরও একটা রাত, উচ্চাঙ্গের সুরছন্দে মজে ঢাকা

রাত ৩টে ৫১ তে মঞ্চে এলেন পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী। শুরুতেই উস্তাদ বড়ে গোলাম আলির সেই বিখ্যাত রাগ গুনকেলী- গাও গুনকেলী গুনীয়ামমে- গুনকি বাত সামঝানমে। সঙ্গে তবলায় পণ্ডিত যোগেশ সামসী। সংগীত আর সুরের আবহে তখন চার দিকেই সাদা কুয়াশার চাদর। এর পর তিনি টেনে নিলেন হারমোনিয়াম। শুরু করলেন- যামিনী হল যে ভোর... বাঁশি বাজে। যোগিয়াতে মুগ্ধ দর্শক। যেন সুর ছাড়া আর সব কিছুই তখন হারিয়ে গিয়েছে।

পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী তার অনুষ্ঠান শেষ করলেন ভৈরবীতে মীরার ভজনে- নায়না বায়ন পারি। তখন আলো আসছে- সুরের হাত ধরেই দিনের প্রথম আলো। সূর্য তখনও অস্পষ্ট। আলো আর অন্ধকারের চরৈবেতি শেষে আলো আসছে- শুদ্ধ সুর আর সঙ্গীতের হাত ধরে ক’দিন আগেরও শঙ্কার নগরী ঢাকাতে।

পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর পরিবেশনার শেষে, মাঠে দাঁড়িয়ে প্রায় পাঁচ হাজার দর্শক সম্মিলিত করতালিতে তাঁকে সম্মান জানাচ্ছেন। চোখে পড়ল মঞ্চের ছাউনির পাশেই উড়ছে কয়েকজোড়া পায়রা। এই ভোরে সুরই যেন ডেকে এনেছে একঝাঁক শান্তির দূতকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE