Advertisement
E-Paper

প্রিয়তমা বাংলাদেশের মাটিতেই অন্তিম শয্যায় শহীদ কাদরী

এটাই বাংলাদেশ। আবেগে ভালবাসায় যে দেশের মানুষ ভাষার জন্য জীবন দেয়। কবিতা আর কবির জন্য ঘণ্টার পরে ঘণ্টা অপেক্ষা করে ফুল হাতে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৬ ১৮:৪৮
কবির প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি। —নিজস্ব চিত্র।

কবির প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি। —নিজস্ব চিত্র।

ঘুম পাচ্ছে আমার, বড্ড বেশি ঘুম|

সেই কবে ঘর ছেড়ে বেরিয়েছি, হেঁটেছি,
সাইকেলে উঠে শহরকে করেছি এফোঁড়-ওফোঁড়,
এক মহাদেশ ছেড়ে আরেক, আবার আরেক;
বড্ড বেশি ক্লান্তি ছুঁয়েছে আমায়|
শহিদ মিনারে জেঁকে বসা চড়া রোদ্দুর, এতো মানুষের ঘাম,
মাইকের তীব্র আওয়াজ ভাল লাগছে না খুব বেশি আর,
হাসপাতালের কার্নিশে চলে কয়েকটি শালিকের শোকসভা|
বিষন্ন আমার নারী দাঁড়িয়ে শিয়রে, অন্য ক্রন্দসী দূর পরবাসে,
এসব কিছুই কেন যেন আজ ভাল লাগছে না খুব বেশি আর|
ঘুম পাচ্ছে, এই শহরে এত কাল পরে এসে ঘুম পাচ্ছে আমার|

— মাহবুবুল হক শাকিল


যখন শহিদ মিনারে কবির মরদেহে শ্রদ্ধার ফুল নিয়ে হাজার মানুষ, তখনই আর একজন কবি লিখছেন ওপরের কবিতাটি। কবিতাটির নাম- ঘুম পাচ্ছে আমার, প্রিয় কবি শহীদ কাদরীর জন্য।

এটাই বাংলাদেশ। আবেগে ভালবাসায় যে দেশের মানুষ ভাষার জন্য জীবন দেয়। কবিতা আর কবির জন্য ঘণ্টার পরে ঘণ্টা অপেক্ষা করে ফুল হাতে। কবি শহীদ কাদরী ফিরলেন তার প্রিয় বাংলাদেশের মাটিতে। যে মাটিতে মিশে আছে ৩০ লাখ শহিদের লাশ। সেই প্রিয়তম বাংলাদেশেই এখন ঘুমোবেন কবি। নিথর নিস্পন্দ শরীরে।

কবি শহীদ কাদরীর শেষ ইচ্ছে মেনেই তাঁকে তাঁর বাংলাদেশে আনা হয়েছে। ফিরিয়ে আনার সব ব্যবস্থা করেছেন, করিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বয়ং। শুধু প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বপালন হিসেবে নয়, কবির ব্যক্তিগত অনুরাগী হিসেবেও এগিয়ে এসেছিলেন হাসিনা। আমেরিকা থেকে কবির মরদেহ ঢাকায় নামে বুধবার সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে।
মরদেহ গ্রহণ করার জন্য বিমানবন্দরে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল জয়নাল আবেদিন, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল, প্রধানমন্ত্রীর দফতরের সংস্কৃতি বিভাগের কর্মকর্তারা, কবিতা পরিষদ ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নেতারা। আগেই ভোরে কাতার এয়ারলাইন্সের বিমানে পৌঁছে গিয়েছিলেন শহীদ কাদরীর স্ত্রী নীরা কাদরী, ছেলে আদনান কাদরী এবং পারিবারিক বন্ধু সাবিনা হাই উর্বি।

আরও পড়ুন: কাল ফিরছেন দেশে, ঢাকাতেই কবরে ঘুমোবেন শহীদ কাদরী

বিমানবন্দর থেকে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় বারিধারাতে কবি শহীদ কাদরীর বড় ভাইয়ের বাড়িতে। সেখান থেকে কফিন কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে এলে সকলের শ্রদ্ধা নিবেদন চলে। প্রথমে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পক্ষ থেকে। তারপরে হাজার ভক্তের শ্রদ্ধা নিবেদন চলে।

সম্মিলত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে কবির কফিন নিয়ে যাওয়া হয় বাংলা একাডেমিতে। দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে হল জানাজা। পরে মিরপুর শহিদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন কবি শহীদ কাদরী, তাঁর প্রিয় স্বদেশ বাংলাদেশের মাটিতে।

Shahid qadri
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy