Advertisement
E-Paper

‘দুঃখিত, ৪৭ বছরের রাষ্ট্রীয় ক্ষত মেরামতির কাজ চলছে!’

ঢাকায় একটি সড়ক দুর্ঘটনায় দুই স্কুল পড়ুয়া নিহত হয়েছে। তার পর থেকেই রাজধানীর সড়ক এখন খুদে শিক্ষার্থীদের দখলে। কারণ এ তো দুর্ঘটনা নয়, বেপরোয়া হত্যাকাণ্ড। তিনটি বাস রেষারেষি করতে করতে বেমালুম চড়াও হয়েছে স্কুলের বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা পড়ুয়াদের ওপরে। ভ্রাতৃহত্যা-ভগ্নিহত্যার বিচারের পাশাপাশি সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে নিজেরাই নেমেছে শিক্ষার্থীরা।

বাপ্পাদিত্য বসু

শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৮ ০৩:২০
আন্দোলন: ঢাকার রাস্তায় শুক্রবারও এ ভাবেই চলেছে বিক্ষোভ। ছবি: ফেসবুক থেকে।

আন্দোলন: ঢাকার রাস্তায় শুক্রবারও এ ভাবেই চলেছে বিক্ষোভ। ছবি: ফেসবুক থেকে।

ঢাকার কিশোর আন্দোলনের স্লোগান— ‘যদি তুমি ভয় পাও তবে তুমি শেষ, যদি তুমি রুখে দাঁড়াও তবে বাংলাদেশ...’

দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা-সহ পুরো বাংলাদেশের মানুষ এমনকি সরকারও গণপরিবহণের মালিক-শ্রমিকদের হাতে পণবন্দি। একটি প্রভাবশালী চক্র, যার নেতৃত্বে রয়েছে আওয়ামি লিগ-বিএনপি-জাতীয় পার্টি— সবার ভাগাভাগি। নিয়ম-নীতি, আইনের তোয়াক্কা না-করেই হরদম মানুষকে পিষে মারছে রাস্তায়। আইন করতে গেলেই বাংলাদেশ অচল করে দেয় যানবাহন বন্ধ করে। চালকদের লাইসেন্সের পরোয়া নেই, গাড়ির নিবন্ধন কিংবা ফিটনেসের তোয়াক্কা নেই। এই পণবন্দি দশার অবসান বুঝি এ বার ঘটতে চলেছে কিশোর পড়ুয়াদের আন্দোলনে!

ঢাকায় একটি সড়ক দুর্ঘটনায় দুই স্কুল পড়ুয়া নিহত হয়েছে। তার পর থেকেই রাজধানীর সড়ক এখন খুদে শিক্ষার্থীদের দখলে। কারণ এ তো দুর্ঘটনা নয়, বেপরোয়া হত্যাকাণ্ড। তিনটি বাস রেষারেষি করতে করতে বেমালুম চড়াও হয়েছে স্কুলের বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা পড়ুয়াদের ওপরে। ভ্রাতৃহত্যা-ভগ্নিহত্যার বিচারের পাশাপাশি সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে নিজেরাই নেমেছে শিক্ষার্থীরা। যুগ যুগ ধরে চলে আসা সড়কের সব নৈরাজ্য যেন তারা মাত্র এই পাঁচ দিনে সাফ করে দিচ্ছে! লাইসেন্সহীন গাড়ি আটকে দিচ্ছে, লেন মেনে চলতে বাধ্য করছে, অ্যাম্বুল্যান্স ও দমকলের গাড়ির জন্যও রেখেছে ইমার্জেন্সি লেন। বিশৃঙ্খল রিকশা চলাচলেও এনেছে শৃঙ্খলা। এত দিন তো এ সব কাজ করতে পারেননি পুলিশকর্তা বা প্রভাবশালী পরিবহণমন্ত্রী।

এই বাংলাদেশ কেউ দেখেনি আগে!

রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে জমে থাকা ক্ষত পরিষ্কারের সংগ্রাম শুরু হয়েছিলো ২০১৩-র শাহবাগ আন্দোলনে। অভূতপূর্ব গণজাগরণ গড়ে তুলেছিল তরুণেরা। এর আগে ধরেই নেওয়া হয়েছিলো, বাংলাদেশের এই তরুণেরা নিছক আত্মসর্বস্ব কি-বোর্ড প্রজন্ম। কিন্তু তারুণ্যের যুথবদ্ধতার তাকত দেখিয়েছিল শাহবাগ। যুদ্ধাপরাধের বিচারকে বাধ্যবাধকতায় পরিণত করেছিল। যুথবদ্ধতার শক্তি এই অর্ধ দশকে যে আরও পোক্ত হয়েছে তার প্রমাণ দিল এই কিশোরেরা। সড়ক অবরোধে পথচারীদের অসুবিধার জন্য দুঃখপ্রকাশ করে ওরা প্ল্যাকার্ড লিখেছে— ‘দুঃখিত, ৪৭ বছরের রাষ্ট্রীয় ক্ষত মেরামতির কাজ চলছে!’

এই যুথবদ্ধ তারুণ্যের বাংলাদেশ আর পিছু ফিরবে না! এই প্রজন্ম আশা জাগানিয়া।

কিশোর আন্দোলনের তোড়ে সরকার ইতোমধ্যে সব দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে সেগুলি বাস্তবায়নের পথে হাঁটতে শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু এ নির্মল কিশোর আন্দোলনে সুবিধাবাদী শক্তি ইতিমধ্যে অনুপ্রবেশ শুরু করেছে। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হিংসার পদধ্বনি! এ ধরনের স্বতঃস্ফূর্ত গণআন্দোলনকে দীর্ঘায়িত হতে দিলে এমন সঙ্কট আসবেই। আন্দোলনকে উপযুক্ত সময়ে থামাতে হয়। শাহবাগ আন্দোলনকে ঠিক সময়ে আমরা থামাতে পারিনি। তাই বিভক্তি এসেছে। এই মুহূর্তে এই আন্দোলনকেও থামতে হবে। সরকারকে সময় দিতে হবে। কিন্তু মুশকিলটা হল, কিশোরদের কাছে গিয়ে তাদের বুঝিয়ে জয় করার মানুষের অভাব। ছাত্রদের কাছে যাওয়ার মতো দায়িত্বশীল কেউ নেই। সব দায় যেন প্রধানমন্ত্রীর! সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে প্রতিক্রিয়াশীলেরা। কিশোর আন্দোলনে সরকার পতনের স্বপ্নও উচ্চারণ করে ফেলেছে তারা।

এমনটা যেন না ঘটে, সে জন্য দ্রুত ছাত্র বিক্ষোভের সামনে গিয়ে সত্য বলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফেরাতে হবে কিশোরদের। না হলে চাপা আশঙ্কাগুলো সত্য হয়ে বিপদ পুরো বাংলাদেশেরই।

শাহবাগ আন্দোলনের অন্যতম মুখ

Protest Student Discipline Dhaka Bangladesh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy