Advertisement
E-Paper

বিদায় শহীদ কাদরী, তোমাকে অভিবাদন

তুমি ও তো কথা রাখলে না কবি! বলেছিলে, এমন দিন এনে দেবে যে দিন ‘সেনাবাহিনী বন্দুক নয়, গোলাপের তোড়া হাতে কুচকাওয়াজ করবে’। জানি এ তোমার একার কাজ নয়। তুমি ঘুমোও কবি। নিশ্চিন্তে ঘুমোও। তোমার স্বপ্ন বেঁচে থাকবে জেগে থাকা মনুষ্যত্বের পৃথিবীতে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৬ ২১:৫৯
শহীদ কাদরী। —ফাইল চিত্র।

শহীদ কাদরী। —ফাইল চিত্র।

তুমি ও তো কথা রাখলে না কবি! বলেছিলে, এমন দিন এনে দেবে যে দিন ‘সেনাবাহিনী বন্দুক নয়, গোলাপের তোড়া হাতে কুচকাওয়াজ করবে’। জানি এ তোমার একার কাজ নয়। তুমি ঘুমোও কবি। নিশ্চিন্তে ঘুমোও। তোমার স্বপ্ন বেঁচে থাকবে জেগে থাকা মনুষ্যত্বের পৃথিবীতে।

শহীদ কাদরী চলে গেলেন। রবিবার নিউ ইয়র্কের নর্থ শোর বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় মারা গেলেন আমেরিকা প্রবাসী এই কবি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর।
তাঁর পরিবার সূত্রের খবর, জ্বর ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে গত শনিবার রাত ৩টা নাগাদ নর্থ শোর বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল তাঁকে। সেখানেই তিনি মারা যান।
শহীদ কাদরী ১৯৪২ সালের ১৪ অগস্ট কলকাতার পার্কসার্কাসে জন্মগ্রহণ করেন। ১০ বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে ঢাকায় চলে আসেন তিনি। মাত্র ১১ বছর বয়স থেকে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘উত্তরাধিকার’ প্রকাশিত হয় ১৯৬৭ সালে। তখন তাঁর বয়স ছিল ২৫ বছর। স্বাধীনতার পর ১৯৭৮ সাল থেকে তিনি প্রবাসী জীবন বেছে নেন। প্রথমে জার্মানির বার্লিন, পরে লন্ডন হয়ে নিউইয়র্কে বসবাস শুরু করেন তিনি।
শহীদ কাদরী ১৯৪৭ সাল পরবর্তীকালে বাংলা সংস্কৃতির বিখ্যাত কবিদের একজনে পরিণত হন। তিনি নাগরিকজীবন সম্পর্কিত শব্দচয়ন করে নাগরিকতা ও আধুনিকতাবোধের সূচনা করেন। আধুনিক নাগরিক জীবনের প্রাত্যহিক যন্ত্রণা ও ক্লান্তির অভিজ্ঞতাকে কবিতার রূপ দেন তিনি। তাঁর ভাষা, ভঙ্গি ও বক্তব্যের তীক্ষ্ণ রূপ তাঁর কবিতাকে এনে দেয় নতুন মাত্রা। নাগরিক জীবনের প্রাত্যহিক যন্ত্রণা ও ক্লান্তি তার কবিতার প্রধান বিষয়। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলো হল- উত্তরাধিকার (১৯৬৭), তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা (১৯৭৪), কোথাও কোনও ক্রন্দন নেই এবং আমার চুম্বনগুলো পৌঁছে দাও (২০০৯)।
কবিতার অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি বাংলা অ্যাকাডেমি পুরস্কার (১৯৭৩) ও একুশে পদক (২০১১) পেয়েছেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে একুশের পদক তিনি নিজে গ্রহণ করতে পারেননি। তাঁর হয়ে পুরস্কার গ্রহণ করেন ঢাকার বন্ধু মফিদুল হক। তবে ওই বছরের ৬ মার্চ নিউইয়র্কে কবির হাতে সরকারের পক্ষ থেকে একুশে পদক তুলে দেয়া হয়। সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শুভেচ্ছাও কবিকে প্রদান করা হয়।

আরও পড়ুন: তামিমের দুই সঙ্গীর পরিচয়ও মিলল, মাথায় বুলেট তিনজনেরই

এক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কবির মৃত্যুতে আধুনিক বাংলা কবিতা এক উজ্জ্বল নক্ষত্রকে হারাল।” বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পরে কবি শহীদ কাদরীর লেখা অসাধারণ কবিতা ছিল-

হন্তারকদের প্রতি......

বাঘ কিংবা ভালুকের মতো নয়,

বঙ্গোপসাগর থেকে উঠে আসা হাঙরের দল নয়

না, কোনো উপমায় তদের গ্রেপ্তার করা যাবে না

তাদের পরণে ছিল ইউনিফর্ম

বুট, সৈনিকের টুপি,

বঙ্গবন্ধুর সাথে তাদের কথাও হয়েছিল,

তারা ব্যবহার করেছিল

এক্কেবারে খাঁটি বাঙালির মতো

বাংলা ভাষা। অস্বীকার করার উপায় নেই ওরা মানুষের মতো

দেখতে, এবং ওরা মানুষই

ওরা বাংলা মানুষ

এর চেয়ে ভয়াবহ কোনো কথা আমি আর শুনবো না কোনও দিন।

qadri bangladesh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy