নিজস্ব চিত্র।
হলি আর্টিজান বেকারি নামটা শুনলেই চোখে ভাসে মৃত্যু। জঙ্গিদের চাপাতি আর বুলেটের নৃশংসতা। কিন্তু সেই হলি আর্টিজান বেকারির সামনে থমকে তাকিয়ে দেখছেন বেঙ্গল উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত উৎসবের মাঠের সুরপাগল অনেকেই। মাঝ রাত পেরিয়ে পন্ডিত শিব কুমার শর্মার বাজনায় মুগ্ধ কয়েক হাজার মানুষ। তাঁদের দু’-এক জন হাঁটতে হাঁটতে থমকে দাঁড়াচ্ছেন, ‘হলি আর্টিজান’ নামটি দেখে।
এটা শুধু নিছক কফির পেয়ালা হাতে নেওয়া নয়। শ্রদ্ধা জানানোও। এখানেই তো প্রাণ হারিয়েছিলেন অবিনীতা কবীর, ইশরাত আকন্দ। যাঁরা খুন হওয়ার আগে নিয়মিত আসতেন প্রতিটি উৎসবে। ওই ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন তারিশ জৈন সহ ১৭ বিদেশি নাগরিক।
মাঠে আসা এক জন- মালবিকা মজুমদার আনন্দবাজারকে বললেন, ‘‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সুরও একটা বড় হাতিয়ার। আমি হলি আর্টিজানের সামনে এসেছি সুরের ওপর ভরসা রেখে সন্ত্রাসবাদকে ঘৃণা জানাতে।’’
রাত তখন ৩টে। শেষ হয়েছে সন্তুরের সুরের জাদু। প্যান্ডেলের প্রায় সব চেয়ারই দর্শকের দখলে। খোলা মাঠে বইছে শেষ ডিসেম্বরের কনকনে হাওয়া। ধানমন্ডি এলাকায় প্রচুর গাছ, বিশাল লেক আর খোলা মাঠের জন্য শীতটা একটু বেশি। প্যান্ডেলটিও খোলামেলা। এই সবের মধ্যেই দর্শকরা মাঝে মাঝে চেয়ার ছাড়ছেন। একটু হেঁটে-চলে আসছেন।
মাঝ রাত পেরনোর পরে পেটেও টান। সেই সময়েই পথ চলতে চোখে পড়ছে হলি আর্টিজান বেকারি। মনে পড়ে যাচ্ছে দেড় বছর আগে এই নামটি হয়েছিল বিশ্বের তাবৎ গণ মাধ্যমের শিরোনাম।
কিন্তু তার পর পরই পুলিশের প্রায় ৩৩টি অভিযান শহরটিকে ফিরিয়ে দিয়েছে তার আগের চেহারা। শহিদ মিনার, একুশের বইমেলা, পয়লা বৈশাখের লাখো মানুষের ঢলে একটাই কথা উচ্চারিত হয়েছে- ‘চাপাতি থাকবে না, থাকবে বাংলাদেশ।’
শোক আর শ্রদ্ধায় বেঙ্গল উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত উৎসবের মাঠে প্রায় সকলের পথ চলার গতি কিছুটা কমে আসছে, যখন চোখের সামনে ‘হলি আর্টিজান বেকারি’ লেখা বোর্ডটি চোখে পড়ছে।
এই মাঠের শুদ্ধ সুর আর স্বর যেন মনে করিয়ে দিচ্ছে, এই মাটি সুরের আর অসাম্প্রদায়িকতার। সেটাই ইতিহাস।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy