Advertisement
E-Paper

‘মাথার ওপর শন শন গুলি, ঝাঁপ দিলাম ২৫ ফুট নীচের ছাদে’

‘‘তত ক্ষণে পুলিশ আমাদের রেস্তোরাঁটাকে পুরোপুরি ঘিরে ফেলেছে। ওরাও তখন বুঝে গিয়েছিল, এ বার লড়তে হবে শেষ যুদ্ধটা। সেই সময় ওরা এ দিক ও দিক ছুটোছুটি করতে করতে এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়ছিল। দেখলাম, ডিনার টেবিলে বসা এক ইতালিয়ের দিকে বন্দুক তাক করে রেখেছে এক জঙ্গি। গুলি ছুটে আসছে নানা দিক থেকে। একটা গুলি তো আমার মাথার ঠিক ওপর দিয়ে বেরিয়ে গেল।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৬ ১৩:২৫
এই সেই পালিয়ে বেঁচে যাওয়া ইতালীয় শেফ জাকোপো বিওনি।

এই সেই পালিয়ে বেঁচে যাওয়া ইতালীয় শেফ জাকোপো বিওনি।

‘‘তত ক্ষণে পুলিশ আমাদের রেস্তোরাঁটাকে পুরোপুরি ঘিরে ফেলেছে। ওরাও তখন বুঝে গিয়েছিল, এ বার লড়তে হবে শেষ যুদ্ধটা। সেই সময় ওরা এ দিক ও দিক ছুটোছুটি করতে করতে এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়ছিল। দেখলাম, ডিনার টেবিলে বসা এক ইতালীয়ের দিকে বন্দুক তাক করে রেখেছে এক জঙ্গি। গুলি ছুটে আসছে নানা দিক থেকে। একটা গুলি তো আমার মাথার ঠিক ওপর দিয়ে বেরিয়ে গেল। মেঝেয় শুয়ে পড়লাম প্রথমে, বাঁচতে। কিন্তু শুয়ে শুয়েই ভাবলাম, এ ভাবে কত ক্ষণই বা বাঁচতে পারব! কারণ, ওরা মেঝেতে মরার মতো পড়ে থাকলেও তো ছেড়ে দেবে না। কাছে এসে গায়ে হাত দিয়ে দেখবে, বেঁচে আছে কি না। তার পর যদি দেখে, কেউ বেঁচে আছে, তা হলে তাকে গুলি করে বা তুলে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে মারবে।’’

তখনও উত্তেজনায় কাঁপতে কাঁপতে গড়গড়িয়ে বলে যাচ্ছিলেন গুলশনের ঘটনা। জাকোপো বিওনি। ওই রেস্তোরাঁর যে দুই ইতালীয় শেফ পালিয়ে বেঁচে গিয়েছিলেন, তাঁদের এক জন এই বিওনি। গত শুক্রবার কী ভাবে পালিয়েছিলেন ওই রেস্তোরাঁ থেকে, একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তা সবিস্তারে জানিয়েছেন বিওনি।

তাঁর কথায়, ‘‘বাঁচার জন্য আমাদের রেস্তোরাঁর পিছনের সিঁড়ি দিয়ে ছুটে তার ছাদে উঠে গিয়েছিলাম। ছাদে উঠে দেখলাম, নীচে রেস্তোরাঁর সামনে পুলিশের সঙ্গে কার্যত, খণ্ডযুদ্ধ চলছে জঙ্গিদের। গুলি, গ্রেনেড ছুড়ছে জঙ্গিরা। পাল্টা গুলি চালাচ্ছে পুলিশ। ছাদে উঠে ভাবছিলাম, কোন দিকে যাব? ছাদ থেকে কোন দিকে লাফ মারব? দেখলাম, রেস্তোরাঁর পিছন দিকে গলির মধ্যে একটা বাড়ি আছে। তার ছাদে লাফিয়ে পড়া যায়। কিন্তু ওই বাড়িটা ছিল প্রায় ২০/২৫ ফুট নীচে। মানে, ঝাঁপ দিয়ে দু’টো তলা নীচে নামতে হবে। কয়েক মিনিট ভাবলাম। যদি কোমরের হাড়গোড় ভেঙে যায়! পরে ভাবলাম, গেলে যাবে। গুলি বা চাপাতির কোপ খেয়ে তো মরতে হবে না! এই ভেবেই ঝাঁপ দিয়ে নামলাম রেস্তোরাঁর পিছনের দিককার ওই বাড়িটার ছাদে। সেখানেই ছিলাম বহু ক্ষণ। গুলিযুদ্ধ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও বেশ কিছু ক্ষণ লুকিয়ে ছিলাম ওই বাড়িটাতে, ভয়ে। যদি পরে চোরাগোপ্তা রেস্তোরাঁ থেকে কেউ বেরিয়ে এসে আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে! আমাকে তো লাফিয়ে বাড়িটার ছাদে নামতে দেখে খুব হকচকিয়ে গিয়েছিলেন বাড়িটার লোকজন। ভয় পেয়ে ওই বাড়ির দু’টি ছোট ছোট ছেলেমেয়ে চেঁচিয়ে উঠেছিল। তার পর ওঁরা সব কিছু বুঝতে পেরেছিলেন। তখন ওঁরাই আমাকে ওঁদের ঘরে নিয়ে গিয়ে লুকিয়ে রেখেছিলেন। পরে যত্ন করে আমাকে খাইয়েওছিলেন। শনিবার বিকেল পর্যন্ত ওই বাড়িতেই ছিলাম। এক বার পুলিশ এসে ওই বাড়িতেই আমার খোঁজখবর নিয়ে গেল। আর তখনই ঠিক করে ফেললাম, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওই বাড়ি ছেড়ে আমাকে বেরিয়ে যেতে হবে। না হলে আরও কত পুলিশি ঝামেলা পোহাতে হবে আমাকে, কে জানে! আর আমার জন্য ওই বাড়ির লোকজনকেও থাকতে হবে দারুণ দুশ্চিন্তায়।’’

আরও পড়ুন- ফের রক্তাক্ত বাংলাদেশ, খুন আওয়ামি লিগ নেতা, গুলিবিদ্ধ স্ত্রী

‘‘যেই ভাবা, সেই কাজ। আমার সঙ্গে ছিল দু’টো ব্যাগ আর একটা পাসপোর্ট। তাই নিয়েই পড়িমড়ি করে ছুট লাগালাম এয়ারপোর্টের দিকে। দেরি না করে চেপে বসলাম ব্যাঙ্ককগামী প্রথম ফ্লাইটেই।’’

বাড়ি ফেরার জন্য আর তর সয়নি বিওনির। সোমবারই ব্যাঙ্কক থেকে রওনা হয়ে গিয়েছেন ইতালিতে।

Dhaka Terror Attack Survivor Explains How He Escaped
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy