আপাতত আসছেন না বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দু’দেশের কূটনীতিকদের আলোচনায় প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমন্ত্রণ গ্রহণ করে এ মাসের ১৭ তারিখে তিন দিনের সফরে নয়াদিল্লি আসবেন হাসিনা। কিন্তু বৃহস্পতিবার ঢাকা আর্জি জানায়— এই সফর আপাতত স্থগিত রাখা হোক। বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রকের এক সূত্র জানাচ্ছেন, জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারির কোনও সময়ে এই সফর হতে পারে।
গত বছর জুনে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে ঢাকা সফরে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সে সময়েই তিনি রাষ্ট্রীয় সফরের জন্য শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে আসেন। এ বছর অক্টোবরে বিমস্টেক সম্মেলন উপলক্ষে দু’দিনের জন্য গোয়ায় এসেছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। মোদীর সঙ্গে তাঁর একান্ত আলোচনাও হয়। কার্যত সেখানেই ঠিক হয়, ডিসেম্বরের দ্বিতীয়ার্ধে রাষ্ট্রীয় সফরে দিল্লি আসবেন হাসিনা। বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলি সে কথা ঘোষণা করে বলেন, ‘‘এই সফরে দু’দেশের সম্পর্ক এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছবে।’’ তার পরে দু’দেশের কূটনীতিকরা কথা বলে ডিসেম্বরের ১৭ ও ১৮ তারিখ এই সফরের দিন ক্ষণ ঠিক করলেও সরকারি ভাবে তা ঘোষণা করা হয়নি।
ঠিক হয়েছিল, দিল্লি থেকে ফেরার পথে শেখ হাসিনা শান্তিনিকেতনে গিয়ে সেখানে ‘বাংলাদেশ ভবন’ নির্মাণের সূচনা করবেন। বাংলাদেশের হাই কমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলি শান্তিনিকেতনে এসে সে বিষয়ে তদারকিও করে যান। তার পরে ঢাকা কী কারণে সফর পিছিয়ে দেওয়ার আর্জি জানাল, সে বিষয়ে বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে কিছু বলা হচ্ছে না। ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশনের এক পদস্থ কর্তা আনন্দবাজারকে জানান, সফর পিছিয়ে দেওয়ার কোনও নির্দিষ্ট কারণ ঢাকা জানায়নি। শুধু বলেছে, শীঘ্রই বিকল্প দিন ক্ষণ জানাবে তারা। দু’দেশ একই সময়ে তা ঘোষণা করবে বলে ঠিক হয়েছে।
দিল্লিতে বাংলাদেশ হাই কমিশনের এক অফিসার জানান, ডিসেম্বরের ওই সময়ে বিজয় দিবস উপলক্ষে ঢাকায় বিভিন্ন অনুষ্ঠান চলে। সামরিক বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের নানা সংগঠনের এই সব অনুষ্ঠানে মুজিব-কন্যা শেখ হাসিনাকে উপস্থিত থাকতে হয়। ১৭ ডিসেম্বরও তাঁর দলের একটি বড়সড় কর্মসূচি রয়েছে। ঠিক ছিল তা সেরে সন্ধ্যায় দিল্লির বিমানে উঠবেন হাসিনা। ওই অফিসারের কথায়, মোদী দায়িত্ব নেওয়ার পরে শেখ হাসিনার প্রথম এই রাষ্ট্রীয় সফর বাংলাদেশের পক্ষে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। হাজার অনুষ্ঠান সামলে তাড়াহুড়ো করে তা করার ব্যাপারে অনেকের আপত্তি ছিল বলেই দিন ক্ষণ ঘোষণা করা যাচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে বিদেশ মন্ত্রককে বলা হয়, সফর পিছিয়ে দিলে ভাল হয়।
হাসিনার এই সফরে তিস্তা চুক্তি নিয়ে দিল্লির কোনও সুনির্দিষ্ট ঘোষণা আশা করছে ঢাকা। দু’দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি বেঝাপড়া চুক্তিও হওয়ার কথা, যা চূড়ান্ত করতে গত সপ্তাহে তিন বাহিনীর উপ-প্রধান ও তটরক্ষী বাহিনীর প্রধানকে নিয়ে ঢাকায় গিয়েছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পর্রীকর। এই পরিস্থিতিতে হাসিনার সফর পিছিয়ে দেওয়ার পিছনে অন্য কোনও কারণ থাকতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করছেন ঢাকার রাজনীতিকদের একাংশ। সেনা বাহিনীকে আধুনিক করতে চিন থেকে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র কিনছে বাংলাদেশ। সূত্রের খবর, পর্রীকরের সফরসঙ্গী ভারতীয় সেনাকর্তারা বাংলাদেশের সেনাকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় এ বিষয়টি উল্লেখ করে এমন কিছু স্পর্শকাতর কথাবার্তা বলেছেন, যার বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়েছে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীতে। সে সব সামলে তবেই দিল্লি যেতে চান হাসিনা। বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রকের এক অফিসার অবশ্য এ খবরকে ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছেন, হাসিনার সফর স্থগিতে দু’দেশের সম্পর্কে কোনও প্রভাব পড়বে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy