Advertisement
E-Paper

নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠক খালেদার

বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লিগ গঠিত সরকারকে অবৈধ আখ্যা দিয়েও, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে বৈঠক করলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। আজ এই বৈঠকের মধ্য দিয়ে দেশটিতে শুরু হল নির্বাচন কমিশন ইস্যুতে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বিরোধী দলগুলোর ধারাবাহিক বৈঠক।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৬ ০০:৩৬
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বিএনপি নেত্রী। ছবি: সংগৃহীত।

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বিএনপি নেত্রী। ছবি: সংগৃহীত।

বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লিগ গঠিত সরকারকে অবৈধ আখ্যা দিয়েও, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে বৈঠক করলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। আজ এই বৈঠকের মধ্য দিয়ে দেশটিতে শুরু হল নির্বাচন কমিশন ইস্যুতে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বিরোধী দলগুলোর ধারাবাহিক বৈঠক। রবিবার রাষ্ট্রপতির সরকারি বাসভবন বঙ্গভবনে আবদুল হামিদের সঙ্গে এক ঘণ্টার বৈঠক করেন খালেদা জিয়া।

সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় শেষ হওয়া বৈঠকে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে যোগ দিয়েছিলেন ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দল।

দলে ছিলেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমেদ, জমির উদ্দিন সরকার, মইন খান, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, নজরুল ইসলাম খান, রফিকুল ইসলাম মিয়া, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

বৈঠক থেকে বেরিয়ে প্রতিনিধি দলের তিন সদস্য সাংবাদিকদের জানান, বৈঠক ফলপ্রসু হয়েছে। তারা আরও জানান, তাদের লিখিত প্রস্তাব রাষ্ট্রপতি গ্রহণ করেছেন। নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটির জন্য সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবও বিএনপি জমা দিয়েছে রাষ্ট্রপতির কাছে। বৈঠকের বিষয়ে পরে বিএনপির নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় আনুষ্ঠানিক ব্রিফিং করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জানা গিয়েছে, নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের বিষয়ে খালেদা জিয়ার দেওয়া ১৩ দফার ভিত্তিতেই রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।

দলের শীর্ষ কয়েক জন নেতা, বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞদের দিয়ে তৈরি দফাগুলো হলো-

(১) ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠন,

(২) প্রধান নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচন কমিশনারদের খুঁজে বের করতে পাঁচ সদস্যের বাছাই কমিটি গঠন,
(৩) বাছাই কমিটির আহ্বায়ক হবেন অবসরপ্রাপ্ত কর্মক্ষম একজন সাবেক প্রধান বিচারপতি যিনি বিতর্কিত নন এবং অবসর সময় সরকারের কোনও লাভজনক পদে আসীন হননি,
(৪) বাছাই কমিটির অন্য সদস্যরা হবেন- আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি,
(৫) বছাই কমিটি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের জন্য দুই জন ও চারজন নির্বাচন কমিশনারের জন্য ৮ জনের নামের তালিকা দেবেন। এই তালিকা থেকে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশন ও চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেবেন,
(৬) নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত সকল রাজনৈতিক দল অথবা স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত সংসদে প্রতিনিধিত্বশীল রাজনৈতিক দলগুলোর মতৈক্যের ভিত্তিতে ইসি গঠন,
(৭) কমিশনে অন্তত একজন প্রবীণ মহিলা কমিশনার রাখা,
(৮) নির্বাচনের সময় সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা প্রদানের বিধান কমিশনের আরপিওতে সংযোজন,
(৯) নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল অথবা স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত সংসদে প্রতিনিধিত্বশীল রাজনৈতিক দলগুলো ২ জন করে ব্যক্তির নাম বাছাই কমিটির কাছে প্রস্তাব করবে,

(১০) বাছাই কমিটিই প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন,
(১১) কেউ যদি দায়িত্ব পালনে অসম্মতি প্রকাশ করেন তাহলে একই প্রক্রিয়ায় পুনরায় কমিশনার নিয়োগ,
(১২) প্রধান কমিশনার-সহ অন্যান্য কমিশনারদের হতে হবে দল নিরপেক্ষ, সর্বজন শ্রদ্ধেয় স‍ৎ ব্যক্তি এবং (১৩) নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করতে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয় গঠন।

উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে আলোচনার জন্য বিএনপি-সহ ৫টি দলকে বঙ্গভবনে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ। ২০ ডিসেম্বর জাতীয় পার্টি, ২১ ডিসেম্বর এলডিপি ও কৃষক শ্রমিক জনতা লিগ ও ২২ ডিসেম্বর জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জাসদকে ডাকা হয়েছে বঙ্গভবনে। বাকি নিবন্ধিত দলগুলোকেও পর্যায়ক্রমে ডাকা হবে।

এর আগে গত ১৮ নভেম্বর এক অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশন গঠন ও নির্বাচন সুষ্ঠু করার লক্ষে ১৩ দফা প্রস্তাব উপস্থাপন করেন বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া।

আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে রকিব কমিশনের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ায় নতুন কমিশন গঠনের প্রস্তাব দেন তিনি। প্রস্তাবে খালেদা জিয়া নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন, কাদের নিয়ে গঠিত হবে, বাছাই কমিটি, বাছাই কমিটির কাঠামো, নির্বাচন কমিশন শক্তিশালীকরণে দলের বিস্তারিত সুপারিশ তুলে ধরেন। এরপর এই প্রস্তাব নিয়ে জোর তৎপরতা চালায় বিএনপি। গত ৫ ডিসেম্বর বিএনপির সিদ্ধান্ত ছিল, এক সপ্তাহের মধ্যে আলোচনার জন্য রাষ্ট্রপতির সম্মতি না পেলে বিকল্প পথে প্রস্তাব পৌঁছে দেওয়া হবে। সে অনুযায়ী দলের ভাইস চেয়ারম্যান রুহুল আমিন চৌধুরী ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বঙ্গভবনে প্রস্তাব দিয়ে আসেন গত সপ্তাহে। এর আগে গত ২০ নভেম্বর খালেদা জিয়ার প্রস্তাব জানাতে রাষ্ট্রপতির একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তারকে ফোন করে সময় চেয়েছিলেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এরপর ২৩ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “রাষ্ট্রপতির কাছে প্রস্তাব পাঠানোর জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে সময় চাওয়া হবে।” এ দিনই বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল মহাসচিবের স্বাক্ষরিত একটি চিঠি বঙ্গভবনে পৌঁছে দেন।

সংবিধান অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশন গঠন করার এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শক্রমে তিনি নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দিতে পারেন। বর্তমান কমিশন গঠনের আগে সে সময়ের রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান সার্চ কমিটির মাধ্যমে কমিশন গঠন করেছিলেন। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে বর্তমান কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে।

Khaleda Zia Bangladesh President Election Commission
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy