Advertisement
২২ মে ২০২৪
Bangladesh

মায়ের গলা কেটে খুন, ছেলের বিরুদ্ধে বাবার মামলা

চট্টগ্রাম বন্দর থানার গোসাইলডাঙা এলাকায় মাকে খুন করার পর আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনায় ছেলে সৌমিত চৌধুরীর বিরুদ্ধে দু’টি মামলা হয়েছে।

হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে সুমিত চৌধুরী। নিজস্ব চিত্র।

হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে সুমিত চৌধুরী। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঢাকা শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১৮:১৫
Share: Save:

চট্টগ্রাম বন্দর থানার গোসাইলডাঙা এলাকায় মাকে খুন করার পর আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনায় ছেলে সৌমিত চৌধুরীর বিরুদ্ধে দু’টি মামলা হয়েছে।

নিজের ফ্ল্যাটে খুন হওয়া কুমকুম চৌধুরীর স্বামী সুখময় চৌধুরী ছেলে সুমিতকে অভিযুক্ত করে রবিবার রাতে একটি মামলা করেন। এ ছাড়া পুলিশও স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সৌমিতের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার চেষ্টার অভিযোগে আর একটি মামলা করেছে। বন্দর থানার ওসি একেএম মহিউদ্দিন সেলিম এ কথা জানিয়েছেন।

নিহতের স্বজনেরা জানান, নগরীর একটি কলেজ থেকে এ বার এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে অকৃতকার্য হন সৌমিত। শনিবার ফল পুনঃনিরীক্ষণের ফলাফলেও তার উন্নতি হয়নি, যা নিয়ে তাকে বকাবকি করা হয়।

এর জেরে শনিবার দুপুরে সৌমিত চট্টগ্রামের বারিক বিল্ডিং মোড় এলাকায় ‘সরকার টাওয়ার’-এ তার মা কুমকুমকে কুপিয়ে হত্যা করে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায় বলে পুলিশ জানিয়েছে। সরকার টাওয়ারে কুমকুম দেবী বড় ছেলে সোমনাথ এবং ছোট ছেলে সৌমিতের সঙ্গে থাকতেন।

পক্ষাঘাতগ্রস্থ কুমকুম দীর্ঘ দিন ধরে অসুস্থ ছিলেন এবং পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে সৌমিতও বিষণ্ণতায় ভুগছিলেন বলে পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ঘাড়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাত নিয়ে বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই তরুণ। বন্দর থানার সেকেন্ড অফিসার আতিকুর রহমান বলেন, ‘‘আহত সুমিতকে হাসপাতালের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের নাক কান গলা বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ওটিতে নিয়ে যাওয়ার সময় সুমিত মাকে খুন করার কথা স্বীকার করেন। তবে খুনের কারণ সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।’’

আরও পড়ুন: দুর্গা পূজার আগাম শুভেচ্ছা আনন্দ উৎসবে

পুজোয় এ বার চোখ থাকুক অ্যানড্রয়েড টিভিতে

প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, ওই দম্পতির বড় ছেলে সোমনাথ চট্টগ্রামের হাজি মুহাম্মদ মুহসিন কলেজে বিবিএ প্রথম বর্ষে পড়াশোনা করছেন। সৌমিত এ বার ব্যারিস্টার সুলতান আহমেদ ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে তিনটি বিষয়ে অকৃতকার্য হয়। পরে ফলাফল পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করেন তিনি। পুনর্নিরীক্ষণে এক বিষয়ে পাশ করলেও অপর দু’টি বিষয়ে অকৃতকার্যই হয়। এ নিয়ে দাদা তাকে বকাঝকা করেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে খুন ও আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনা ঘটে বলে প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান।

হাসপাতালে দাঁড়িয়ে সোমনাথ গত শনিবার জানান, বেলা ১১টা থেকে ১টার মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। তিনি বলেন, ‘‘অকৃতকার্য হওয়ায় ভাইকে বকাঝকা করে বেলা ১১টায় কলেজে চলে যাই। এর পর মায়ের সঙ্গে ছোট ভাইয়ের কী হয়েছে তা জানি না।’’ বেলা একটায় ঘরে ফিরে কয়েক বার কলবেল বাজানোর পর সৌমিত নিজে এসে দরজা খুলে দিয়ে সেখানেই পড়ে যান। তখন তিনি দেখতে পান সৌমিতের সারা শরীর রক্তে ভেসে যাচ্ছে। এর পর তিনি ছুটে মায়ের ঘরে গিয়ে দেখেন কুমকুম দেবী বিছানায় রক্তাক্ত মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন। এক প্রতিবেশীর সহায়তায় গুরুতর আহত ভাইকে নিয়ে তিনি হাসপাতালে যান বলে জানিয়েছেন সোমনাথ।

নিহত কুমকুম দেবীর বোন হাসপাতালে সংবাদমাধ্যমকে জানান, তাঁর বোন মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ হয়ে গত নয় মাস ধরে অসুস্থ ছিলেন। ছোট ছেলে সৌমিতই তখন মায়ের দেখাশোনা করতেন। তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘‘আমি বুঝতে পারছি না, যে মাকে এত যত্ন করত, সে কী ভাবে এ কাজ করতে পারে! ডাক্তার দেখানো থেকে শুরু করে ওষুধ খাওয়ানো সবই সৌমিত করত।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘কেন সে মাকে খুন করল?’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE