কলার স্লিং খুলে ফেলেছেন ক’দিন আগে। আস্তে আস্তে করছেন ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ। তবে মুস্তাফিজুরের বাঁ হাতটা নিশপিশ করছে। ক্যারিবিয়ান লিজেন্ড কোর্টনি ওয়ালশ তাসকিনকে বলের গ্রিপিং দেখিয়ে দিচ্ছেন, এক্সট্রা বাউন্সটা কী ভাবে করতে হয় তা শেখাচ্ছেন। দূর থেকে তা দেখা ছাড়া উপায় যে নেই মুস্তাফিজুরের। পরিচিত ড্রেসিং রুমে রবিরার ঢুকে কাটিয়েছেন খানিকটা সময়। দেখেছেন শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে ফ্লাড লাইটের আলোয় সতীর্থদের অনুশীলন। সোমবারও অনুশীলন দেখতে হাজির কাটার মাস্টার! মাঠে এবং মাঠের বাইরে অন্য টিমমেটরা যখন হাসি-আনন্দে কাটাচ্ছেন, করছেন খুনসুটি, দূর থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তা দেখেই খুঁজছেন আনন্দ।
আফগানিস্তান, ইংল্যান্ডকে পিষে মারতে বাঁ হাতটি নিশপিশ করছে ঠিকই, কিন্তু উপায় নেই। হাত দিয়ে বল গ্রিপই যে করতে পারছেন না মুস্তাফিজুর! সাসেক্সে খেলতে গিয়ে বড় ধরনের ইনজুরিতে পড়ে কি ক্ষতিটাই না হয়ে গেছে। গত ১১ আগস্ট লন্ডনের বুপা ক্রমওয়েল হাসপাতালে কাঁধে সফল টেলিস্কোপ সার্জারি হয়েছে। তবে মাঠে ফিরতে অপেক্ষা করতে হবে আরও অন্তত মাস তিনেক। আফগানিস্তান এবং ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হোম সিরিজ মিস করতে হচ্ছে, বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) চতুর্থ সংস্করণটা নভেম্বরে। সেই আসরেও থাকতে হবে দর্শকের আসনে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কেরিয়ারের শুরুতে এমন ধকল সামাল দেওয়া যে কতটা কঠিন, বাস্তবতার মুখে তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন মুস্তাফিজুর- “যখন জাতীয় দলে ছিলাম না, তখন তো বেকার সময় কাটতো। এই লেভেলে আসার পর অলসভাবে কাটেনি। জাতীয় দলে ঢোকার পর খেলার মধ্যেই ছিলাম। এখন খেলতে পারছি না। তাই অনেক কিছু মিস তো অবশ্যই করছি।”
অস্ত্রোপচারের পর কলার স্লিং লাগিয়ে এসেছিলেন ঢাকায়। সাতক্ষীরায় গ্রামের বাড়িতে ইদ কেটেছে এই কলার স্লিং পরেই। চিকিৎসকদের পরামর্শে তা খুলে ফেলেছেন ক’দিন আগে। এখন প্রস্তুতি নিচ্ছেন পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার। ইংল্যান্ডের বিশেষজ্ঞ সার্জন অ্যান্ড্রু ওয়ালেশ সব কিছু বুঝিয়ে দিয়েছেন বিসিবি-র প্রধান চিকিৎসক দেবাশিষ চৌধুরীকে। ফিজিও বায়েজিদুল ইসলাম সেই ব্যবস্থাপত্র দেখেই মুস্তাফিজুরের দেখভাল করছেন। এখন এই ফিজিও’র তত্ত্বাবধানেই পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরুর অপেক্ষায় আছেন মুস্তাফিজুর, “অস্ত্রোপচারের পর ছ’সপ্তাহের মতো শেষ হয়েছে। ডাক্তার যে ভাবে বলছেন, সেভাবেই কাজগুলো করছি। আশা করছি ২-১ দিনের মধ্যে পুনর্বাসন শুরু হবে। পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে বায়েজিদ ভাই (ফিজিও) যুক্ত আছেন।”
আরও পড়ুন: দুর্গোৎসব এর নতুন স্বাদ আনন্দ উৎসবে
আলতা-সিঁদুরে অপরূপা মা দুর্গা আসছেন ট্র্যাডিশন মেনেই
ইনজুরিতে পড়ে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া এবারই প্রথম নয়। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে ইংল্যান্ড সফরের মাঝপথে আহত হয়ে দেশে ফিরতে হয়েছে। পুনর্বাসন প্রক্রিয়া যথাযথভাবে মেনে ফিরেছেন ক্রিকেটে। শুরুতে ব্যক্তিগত ড্রিলগুলো করা যে মোটেও সহজ কাজ নয়, তা ভালই জানেন মুস্তাফিজুর। সে কারণেই পুনর্বাসন প্রক্রিয়া নিয়ে ভয় পাচ্ছেন না এই বাঁ হাতি কাটার মাস্টার। বলছেন, “অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে ইংল্যান্ডে খেলতে গিয়ে ইনজুরিতে পড়েছি আগে। পুনর্বাসন প্রক্রিয়া সম্পর্কে তাই অভিজ্ঞতা রয়েছে।”
হোমে গত বছর ৯টি ওয়ানডেতে ২৬ উইকেট, যার মধ্যে ভারতের মতো প্রতিপক্ষের বিপক্ষে প্রথম দুই ম্যাচে ১১ উইকেট! এমন পারফরমেন্সে আইসিসি’র বর্ষসেরা ওয়ানডে দলে উঠেছে তাঁর নাম। অথচ, বাংলাদেশ দলের বোলিং নিউক্লিয়াস মুস্তাফিজুরকে মিস করতে হচ্ছে হোমে পর পর ২টি সিরিজ। তৈরি হতে হচ্ছে আগামী ডিসেম্বরে নিউজিল্যান্ড সফরের জন্য। উপমহাদেশের গণ্ডি পেরিয়ে নিউজিল্যান্ডের বাউন্সি উইকেট নিজেকে মেলে ধরার মানসিক প্রস্তুতিটা এখন থেকেই নিয়ে রেখেছেন। কাউন্টডাউন শুরু করে দিয়েছেন প্রত্যাবর্তনের, “এই মূহুর্তে তো আমি অসুস্থ। সুস্থ হওয়ার পর খেলার আশা তো থাকবেই। দেশে সফল হয়েছি, চেষ্টা করব দেশের বাইরে সফল হতে।”