কড়া নিরাপত্তার ঘেরাটোপে কল্যাণপুর।
গোয়েন্দা সূত্রে খবর এসেছিল, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার বুকে কল্যাণপুরের এক বাড়িতে ঘাঁটি গেড়েছে একদল জঙ্গি। সোমবার মধ্য রাতে সেখানে অভিযান চালায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), ঢাকা পুলিশ এবং ঢাকা পুলিশেরই বিশেষ প্রশিক্ষিত সশস্ত্র বাহিনী সোয়াত। প্রায় সকাল পর্যন্ত চলা এই অভিযানে ৯ জঙ্গি নিহত হয়েছে। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গ্রেফতার করা হয়েছে এক জঙ্গিকে। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, সোমবার রাত ১টা নাগাদ কল্যাণপুরের ৫ নম্বর রোডে ‘জাহাজ বিল্ডিং’ নামের সাততলা বাড়িটিতে অভিযান শুরু হয়। পুলিশ পৌঁছতে না পৌঁছতেই বাড়ির পাঁচ তলা থেকে জঙ্গিরা ককটেল বোমা ছোড়ে। বাড়ি ঘিরে ফেলে পুলিশ। ঘিরে ফেলা হয় আশপাশের এলাকাও। রাতভর ছক কষা হয় কীভাবে হানা দেওয়া হবে সশস্ত্র জঙ্গিদের ডেরায়। আশপাশের বাড়িগুলির ছাদে পজিশন নেয় যৌথ বাহিনী। আশপাশের সবকটি সংযোগ সড়কেও ব্যারিকেড দেয় পুলিশ। আজ মঙ্গলবার ভোর ছ’টার কিছু আগে শুরু হয় চূড়ান্ত অভিযান। মুহুর্মুহু গুলির শব্দে কেঁপে ওঠে গোটা এলাকা। প্রায় এক ঘণ্টা পরে বাড়ির দখল নেয় বাহিনী। ততক্ষণে মৃত্যু হয়েছে নয় জঙ্গির। মাত্র একজনকেই জীবন্ত ধরতে পারা গিয়েছে। পুলিশ এই অভিযানের নাম দিয়েছে, ‘অপারেশন স্টর্ম টোয়েন্টিসিক্স’।
অভিযান শেষে পুলিশ কর্তা মারুফ হাসান জানান, নিহত জঙ্গিদের সবার পরনেই ছিল কালো পোশাক। মাথায় ছিল পাগড়ি।
বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহিদুল হক বলেন, ‘‘আমরা দেশব্যাপী জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালাচ্ছি। ব্লক রেইড (অভিযান) করছি, সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছি। ডিএমপি (ঢাকা মহানগর পুলিশ) এটাকে অত্যন্ত কার্যকরভাবে চালাচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে গতকাল এই এলাকায় (কল্যাণপুরে) আমরা অভিযান চালাচ্ছিলাম। ওই অ্যাপার্টমেন্টে ঢুকতে যাওয়ার সময়েই তারা গ্রেনেড চার্জ করে। বোমা চার্জ করে। তবে বোমা কোনও পুলিশের ওপর পড়েনি। ওখানে জঙ্গি আছে জেনে আমরা আগে থেকেই সতর্ক হয়ে ছিলাম। পুলিশ নিশ্ছিদ্র কর্ডন করে ফেলে, যাতে জঙ্গিরা না বেরোতে পারে। আশপাশে সব কটা বিল্ডিংয়ে পুলিশ অবস্থান নেয় যেন তারা পালাতে না পারে।’’
আইজিপি আরও জানান, ‘‘অভিযানের একটা পর্যায়ে ওরা দরজা খুলে গুলি করতে করতে পালানোর চেষ্টা করছিল। পুলিশ আগে থেকেই তৈরি ছিল। তখন পুলিশের সাথে গুলি বিনিময় হয়। আমি একটু আগে দেখে এলাম যে নয় জন জঙ্গি নিহত হয়েছে। সবার পরনে কালো পোশাক, যেমন গুলশানের জঙ্গিরা পড়েছিল। সবার কাছে একটা করে ব্যাগপ্যাক ছিল, ব্যাগ ছিল। মাথায় পাগড়ি, আর হাতে ছিল ছুরি।’
একেএম শহিদুল হক বলেন, “বিভিন্ন গোয়েন্দা সোর্স (সূত্র) থেকে আমরা অনুমান করছিলাম ঢাকায় তারা একটা বড় ধরনের ঘটনা ঘটাতে চাইছে। ঘটনা যাতে না ঘটাতে পারে, সে জন্যই আমাদের অভিযান ছিল।”
আইজিপির মতে এই জঙ্গিরা সবাই জেএমবির (জামাত-উল-মুজাহিদিন) লোক। আইএসের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই।
আরও পড়ুন: সন্দেহভাজন জঙ্গি তালিকায় ৬৮ জনের নাম প্রকাশ করল র্যাব
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy