Advertisement
১৮ মে ২০২৪
Bangladesh News

ডিসেম্বরে হাসিনার ভারত সফর, ২০টির বেশি চুক্তি স্বাক্ষর হতে পারে

সম্পর্কটি নিবিড় হয়েছিল ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে, স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের সময়েই। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যখন বাংলাদেশকে কার্যত শ্মশান তৈরি করেছিল— তখনই এক কোটি বাংলাদেশি শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছিল ভারত।

অঞ্জন রায়
ঢাকা শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৬ ১৮:২৯
Share: Save:

সম্পর্কটি নিবিড় হয়েছিল ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে, স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের সময়েই। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যখন বাংলাদেশকে কার্যত শ্মশান তৈরি করেছিল— তখনই এক কোটি বাংলাদেশি শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছিল ভারত। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ, অস্ত্র দেওয়াই শুধু নয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য ভারতীয় সেনা সদস্যদের জীবনও দিতে হয়েছে। এক জন দু’জন নয়, সেই শহিদ সেনার সংখ্যাও অসংখ্য। কিন্তু, তার পরেও ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের মাঝে যেমন নিবিঢ় বন্ধুত্ব আছে, তেমনই ছিল বেশ কিছু হিসেবনিকেশ।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘ভারত কার্ড’-এর ব্যবহার শুরু হয়েছিল স্বাধীনতার অল্প পর থেকেই। ডানপন্থীদের সঙ্গে এই কার্ড সমান তালেই ব্যবহার করেছে মস্কোপন্থী বামেরা ছাড়া অন্য বামদলগুলো। তার পরেও ভারত বাংলাদেশ সম্পর্ক দু’দেশের জন্যই জরুরি। সেই সম্পর্ক হিসেব করলে এখন সবচেয়ে উষ্ণ। গত কয়েক বছরে সমাধান হয়েছে এমন অনেকগুলো বিষয়, যা বহু বছর চাপা পড়েছিল নানা সংকটের নীচে। সেই অবিশ্বাস আর দায় চাপানোর রাজনীতির রেশ এখন আর তেমন নেই— যে কারণেই বাড়ছে প্রত্যাশা, বাড়ছে সম্ভাবনাও।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ১৮ ও ১৯ ডিসেম্বর ভারত সফরে যাচ্ছেন। আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বেশ অনেকগুলো কারণেই দু’দেশের চোখ ওই দু’দিনের দিকে। জানা গিয়েছে, এই সফরে ঢাকার দিকে থেকে জল সহায়তার দিকে প্রধান নজর থাকবে। সন্ত্রাসবাদ দমনের বিষয়ে চোখ থাকবে দু’তরফের। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্য, হাসিনার এ বারের সফরের নতুন বিষয় হিসেবে পারমাণবিক, মহাকাশ, উপগ্রহ, বাণিজ্য সহযোগিতা-সহ ২০টির বেশি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ার জোরদার সম্ভাবনা রয়েছে। সূত্রগুলো বলছে, দু’দেশের ভেতরে চুক্তি, প্রকল্প-সহ একাধিক বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।

তিস্তা চুক্তি ঢাকার অগ্রাধিকারের তালিকায় থাকবে। চুক্তি সম্পাদনের জন্য সরকার দিল্লিকে বলেছে। ২০১১তে কংগ্রেস সরকারের শাসন কালে ঢাকাতে এসেছিলেন তত্কালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। সেই সফরে তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষরের কথা প্রায় নিশ্চিত থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতায় সে বার তা আলোর মুখ দেখেনি। ঢাকার প্রত্যাশা, ভারত সরকারের সঙ্গে যত দ্রুত সম্ভব এ চুক্তি করে ফেলা। গঙ্গা বাঁধ নিয়েও সমাধান প্রত্যাশিত।

রবিবার বাংলাদেশের বিদেশসচিব এম শহিদুল হকের সঙ্গে দেখা করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। এর পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘‘জল সহযোগিতা নিয়ে দু’দেশের মধ্যে আলোচনা চলছে।’’ ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পর্রীকর আগামী ৩০ নভেম্বর দু’দিনের সফরে ঢাকা আসবেন। এটিই হবে ভারতের কোনও প্রতিরক্ষামন্ত্রীর প্রথম ঢাকা সফর। সেই সময়ে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তার সহযোগিতার একটি রূপরেখা কাঠামো নিয়ে আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই আলোচনার বিষয়গুলো শেখ হাসিনার ভারত সফরে আলোচনা টেবিলে আসাটাই স্বাভাবিক।

এ বারের সফরে আরও একটি ঘটনা ঘটতে চলেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীর যে সদস্যেরা প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের সম্মাননা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার। জানা গিয়েছে, দিল্লি সফরের সময়েই অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে প্রতীকী ভাবে কয়েক জন শহিদ পরিবারের সদস্যদের কাছে সম্মাননা তুলে দেবেন হাসিনা। যাঁরা নিহত হয়েছেন, পর্যায়ক্রমে প্রতিটি পরিবারের সদস্যদেরই এই সম্মননা দেওয়া হবে।

সংবাদমাধ্যমের খবর, সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা সহযোগিতার জন্য এক রূপরেখা চুক্তির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এই প্রস্তাবে প্রযুক্তির বিনিময়, প্রশিক্ষণ ও যৌথ মহড়ার মাধ্যমে সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদ দমনে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়গুলো থাকছে। অন্য দিকে, বাংলাদেশের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতাকে নতুন উচ্চতায় নেওয়ার কথা ভাবছে ভারত। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে ডিসেম্বরে হাসিনার দিল্লি সফরে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত ঘোষণা থাকতে পারে।

এ বারের সফরে হাসিনা ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করবেন।

আরও পড়ুন

এ বার ঢাকাতেও চালু উবের, ট্যাক্সি হাজির স্মার্টফোনের ডাকে

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bangladesh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE