গুলশনের রেস্তোরাঁ ঘিরে ধরে জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিচ্ছে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী। ছবি: এপি।
জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)— এই নামটা জোরালো ভাবে উঠে আসছে ঢাকার গুলশনে জঙ্গি হামলার পর। সশস্ত্র বাহিনী যখন ঘিরে ফেলেছিল গুলশনের আক্রান্ত রেস্তোরাঁ, তখন বার বার ভিতর থেকে শর্ত ঘোষণা করছিল জঙ্গিরা— পণবন্দিদের মুক্তি দেওয়ার শর্ত। অন্যতম প্রধান শর্ত ছিল, অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে ধৃত জেএমবি নেতা খালেদ সাইফুল্লাহকে। কিন্তু মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ‘সাইট’ সূত্রের খবর, ইসলামিক স্টেট (আইএস) গুলশন হামলার দায় স্বীকার করেছে।
জেএমবি নেতার মুক্তির লক্ষ্যে আইএস কেন হামলা চালাবে? তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গিয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের তরফে আইএস প্রসঙ্গে এখনও কোনও মন্তব্য করা হয়নি।
বাংলাদেশ পুলিশ সূত্রের খবর, শুক্রবার শেষ রাতে গুলশনের হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁ ঘিরে ফেলার পর হ্যান্ড মাইকে জঙ্গিদের আত্মসমর্পণ করতে বলা হচ্ছিল। কিন্তু রেস্তোরাঁর ভিতরে ২০ জন বিদেশী-সহ মোট ৩৫ জনকে পণবন্দি হিসেবে আটকে রাখা সন্ত্রাসবাদীরা আত্মসমর্পণে রাজি হয়নি। তারা রেস্তোরাঁর ভিতর থেকে চিৎকার করে নিজেদের শর্ত ঘোষণা করতে শুরু করে। কী শর্ত দিচ্ছিল জঙ্গিরা?
১. ডেমরা থেকে যে জেএমবি নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে, সেই খালেদ সাইফুল্লাহকে মুক্তি দিতে হবে।
২. রেস্তোরাঁ থেকে তাদের (জঙ্গিদের) নিরাপদে বেরিয়ে যেতে দিতে হবে।
৩. গুলশনের রেস্তোরাঁয় এই আক্রমণকে ইসলাম প্রতিষ্ঠার স্বার্থে হওয়া অভিযান হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে।
জঙ্গিদের দেওয়া এই শর্তগুলিই নানা জল্পনার জন্ম দিয়েছে। গোটা বিশ্বের সমস্ত জেহাদি গতিবিধির উপর নজর রাখে যে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা, সেই ‘সাইট’ জানিয়েছে, আইএস এই হামলার দায় স্বীকার করেছে ইতিমধ্যেই। কিন্তু আইএস যদি হামলা চালায়, তা হলে জেএমবি নেতার মুক্তির দাবিই প্রধান হয়ে উঠবে কেন? প্রাশন উটছে তা নিয়েই। হামলাকারীরা যে তিনটি শর্ত ঘোষণা করছিল, তার মধ্যে দু’টি হল নিজেদের পালিয়ে যাওয়ার পথ পরিষ্কার করতে। আর অন্যটি তথা মূল দাবিটিই হল জেএমবি নেতার মুক্তির।
ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের মতে, বাংলাদেশে যতগুলি জঙ্গি সংগঠন এবং কট্টরবাদী সংগঠন সক্রিয়, তাদের অধিকাংশই এখন নিজেদেরকে আইএস-এর সঙ্গে যুক্ত বলে প্রমাণ করতে চাইছে। আনসারুল্লা, জেএমবি তো বটেই, হেফাজতে ইসলাম এবং জামাতেরও একটি অংশ নিজেদেরকে আইএস বলে দাবি করেছে। এই সংগঠনগুলির নিজেদের কার্যকলাপ স্বতন্ত্র ভাবেই চলছে। তার সঙ্গেই বেশ কিছু কার্যকলাপ তারা আইএস-এর নামে চালাচ্ছে। দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে ত্রাস বাড়াতেই আইএস-এর নাম ব্যবহার করা হচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞদের এই মহলটির দাবি। যে জেএমবি নেতার মুক্তির দাবি ঢাকার হামলাকারীরা শর্ত হিসেবে তুলে ধরেছিল, সেই জেএমবি নেতাকে হামলার এক দিন আগেই ডেমরা থেকে গ্রেফতার করা হয়। তাই বাংলাদেশের গোয়েন্দারা প্রাথমিক বাবে মনে করছেন, আইএস নয়, হামলা চালিয়েছে জেএমবি-ই। নেতা গ্রেফতার হওয়ার পরের দিনই যে ভাবে হামলা চালিয়ে তার মুক্তির শর্ত দেওয়া হয়েছে, তাতে এই কাজ অন্য কোনও সংগঠনের নয় বলেই স্থানীয় প্রশাসনের অনুমান।
আরও পড়ুন: অনেকটা মাথাচাড়া দিয়েছে বিষবৃক্ষ, হুঁশিয়ার!
অন্য একটি অংশ বলছে, এই কাজ আইএস-এরই। বাংলাদেশের বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনকে এক ছাতার তলায় আনতে চাইছে তারা। গুলশনের হামলা চালানোর ছক আগেই কষা হয়েছিল। ইতিমধ্যে জেএমবি নেতা গ্রেফতার হয়ে যাওয়ায়, নিজেদের শর্তের সঙ্গে তার মুক্তির দাবিটাও জুড়ে দেয় জঙ্গিরা।
বাংলাদেশ সরকার সে দেশে আইএস-এর উপস্থিতি স্বীকার করে না। গুলশনের হামলার পর এখনও সে প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য ঢাকা করেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy