Advertisement
E-Paper

শুল্কের কালো মেঘে চলছে আলোর খোঁজ

পরিস্থিতি যা, তাতে ছারখার হতে বসেছে বিশ্ব বাণিজ্যের মসৃণ আবহাওয়া। এই আশঙ্কা থেকেই সপ্তাহের শেষ দু’দিনে সেনসেক্স খোয়ায় ১২৫৩ পয়েন্ট।

অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২৫ ০৭:১০
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

গত বুধবার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্ব অর্থনীতির আকাশে যে বোমা ফাটালেন তা ছোটখাটো পরমাণু বোমা বিস্ফারণের সমান। গোটা বিশ্ব আশঙ্কা নিয়ে অপেক্ষা করছিল ট্রাম্প শুল্ক নিয়ে কী সিদ্ধান্ত নেন, তা জানতে। সে দিন সব দেশের উপরে ১০% শুল্ক তো তিনি বসিয়েইছেন। সেই সঙ্গে ভারত-সহ সিংহভাগ দেশের পণ্যে বসেছে আরও বেশি শুল্ক। এই ঘোষণায় বিভিন্ন দেশ তো বটেই, ভাল রকম আতঙ্ক ছড়িয়েছে আমেরিকাতেও। যা প্রতিফলিত হয়েছে সেখানকার দুই শেয়ার সূচক ন্যাসড্যাক এবং ডাও জোন্সে বড় ধস নামায়। চিন শুক্রবারই আমেরিকারপণ্যে ৩৪% শুল্কের ঘোষণা করেছে। কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন-সহ অনেক দেশ শুল্কের পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছে। পরিস্থিতি যা, তাতে ছারখার হতে বসেছে বিশ্ব বাণিজ্যের মসৃণ আবহাওয়া। এই আশঙ্কা থেকেই সপ্তাহের শেষ দু’দিনে সেনসেক্স খোয়ায় ১২৫৩ পয়েন্ট। নামে ৭৫ হাজারে (৭৫,৩৬৫)।

প্রশ্ন হল এই যুদ্ধে ভারত কোথায় দাঁড়িয়ে। নয়াদিল্লি পাল্টা হুমকি না দিয়েসমঝোতার পথ বেছেছে। এরই মধ্যে আমেরিকার কিছু পণ্যে শুল্ক কমানো হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে সেখান থেকেতেল আমদানি। বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে চলছে আলোচনা। তবে ট্রাম্পের শুল্ক সিদ্ধান্তে যে সমস্ত শিল্পের বেশি ক্ষতি হতে পারে সেগুলি হল বৈদ্যুতিন পণ্য, বস্ত্র, অলঙ্কার, তথ্যপ্রযুক্তি, রসায়নিক পণ্য, গাড়ির যন্ত্রাংশ, ইস্পাত ইত্যাদি।

শুল্কের পরিণাম কী হতে পারে তার আলোচনা চলছে বিভিন্ন মহলে। দেখে নেওয়া যাক—

  • ভারতীয় পণ্যে ২৬% শুল্ক বসছে। এতে ক্ষতি হবে রফতানিকারী সংস্থাগুলির। উৎপাদন তথা কর্মী ছাঁটাইয়ের আশঙ্কাও থাকছে। পড়তে পারে তাদের শেয়ার দর।
  • আমেরিকার পথে হেঁটে অন্য কিছু দেশও নতুন শুল্ক বসাতে পারে। যা ভারতের উপরে চাপ বাড়াবে।
  • ভারত-সহ বহু দেশে উন্নয়ন বিঘ্নিত হবে। কমবে জাতীয় উৎপাদন, প্রভাব পড়বে বিভিন্ন সংস্থার আর্থিক ফলে।
  • আমেরিকার বহু শিল্প কাঁচামাল আমদানি করে। শুল্ক বসায় তা দামি হবে, বাড়বে সেখানে তৈরি পণ্যের দামও। এতে মূল্যবৃদ্ধি মাথাচাড়া দিতে পারে। আমেরিকা-সহ কিছু দেশে দেখা দিতে পারে মন্দাও।
  • রফতানি কমলে ভারতের বিদেশি মুদ্রার ভান্ডার সঙ্কুচিত হতে পারে। বাড়তে পারে টাকায় ডলারের দাম।
  • আমেরিকার পণ্যে ভারত শুল্ক কমালে দেশীয় শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
  • চরম অনিশ্চয়তায় বাজার ‘বেয়ার’-এর কবলে পড়তে পারে। মাত্র দু’দিনে আমেরিকার প্রযুক্তি শেয়ার সূচক ন্যাসড্যাক এমন পড়েছে যে তা এরই মধ্যে বেয়ারদের কব্জায় চলে গিয়েছে।
  • ছ’মাস ধরে সূচক নেমেই চলেছে, যাতে নতুন করে ইন্ধন জোগাল শুল্ক নীতি। ক’মাসে যাঁরা শেয়ার ও ফান্ডের জগতে ঢুকেছেন, তাঁরা আতঙ্কিত। যে কারণে শেয়ারের দাম কমলেও, লগ্নি বৃদ্ধির আশা তেমন করা হচ্ছে না।

সব খারাপেরই কিছু ভাল দিক থাকে। ভারতের ক্ষেত্রেও নতুন সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে। কারণ—

  • চিন, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ, তাইল্যান্ড, তাইওয়ানের পণ্যে বেশি শুল্ক বসিয়েছেন ট্রাম্প। ফলে তাদের হারানো বাজার ধরতে ঝাঁপাবে ভারত।
  • আমেরিকা শুল্ক পাঁচিল তোলায় ভারতকে অন্য বাজার খুঁজতে বেরোতে হবে, যার উদ্যোগ শুরু হয়েছে।
  • যে সব দেশ আমেরিকার পণ্যে শুল্ক চাপাবে, সেখানে ভারতের রফতানির সম্ভাবনা বাড়বে।
  • শুল্ক যুদ্ধ শুরুর পর অশোধিত তেলের দাম অনেকটা কমেছে (৬৫.৯৫ ডলার), যা ভারতের পক্ষে ভাল।
  • ডলারের সাপেক্ষে উঠছে টাকার দর।
  • দেশে বন্ড ইল্ড কমেছে (৬.৪৭%), যা সরকার, লগ্নিকারীদের জন্য ভাল।

রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক ফেব্রুয়ারির ঋণনীতি বৈঠকে সুদ কমিয়েছে ২৫ বেসিস পয়েন্ট। তার প্রেক্ষিতে সম্প্রতি জমায় সুদ ছেঁটেছে দু’তিনটি ব্যাঙ্ক। ৯ এপ্রিলের ঋণনীতিতে ফের তা কমার সম্ভাবনা। সেটা হলে সুদ কমবে বহু ব্যাঙ্ক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে। অর্থাৎ, মেয়াদি আমানতে লগ্নি দু’দিনের মধ্যে সারতে পারলে ভাল।

(মতামত ব্যক্তিগত)

BSE SENSEX Donald Trump
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy