E-Paper

উড়ান ভাড়া মাত্রাছাড়া, লাগাম পরাতে প্রস্তাব

যে হারে উড়ান টিকিটের দাম বাড়ছে, তাতে বিভিন্ন মহল থেকে শুরু হয়েছে সমালোচনা। বিশেষজ্ঞদের মতে, মোদী সরকার বিমানের ভাড়া সংস্থার শুভবুদ্ধির উপরে ছেড়েছিল।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৬:০০
An image of Flight

— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

এর আগেও বহুবার চেষ্টা হয়েছে। কাজ হয়নি। নতুন করে আবার উড়ান টিকিটের আকাশছোঁয়া দাম কমাতে কোমর বেঁধেছে কেন্দ্র। কারণ, গন্তব্য যা-ই হোক, মাত্রাছাড়া টিকিটের দাম দেখে যাত্রীদের ক্ষোভ ক্রমশ বাড়ছে। সরকারের তরফে এর আগে সতর্ক করা হলেও তাঁদের স্বার্থ রক্ষায় কড়া কোনও পদক্ষেপ করা হচ্ছে না কেন, উঠছে সেই প্রশ্নও। এই পরিস্থিতিতে পরিবহণ সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রস্তাব, রুট-ভিত্তিক ভাড়ার উর্ধ্বসীমা বেঁধে দেওয়া হোক। উড়ান ভাড়া নিয়ন্ত্রণের জন্য আলাদা সংস্থা তৈরির প্রস্তাবও দিয়েছে ওই কমিটি।

যে হারে উড়ান টিকিটের দাম বাড়ছে, তাতে বিভিন্ন মহল থেকে শুরু হয়েছে সমালোচনা। বিশেষজ্ঞদের মতে, মোদী সরকার বিমানের ভাড়া সংস্থার শুভবুদ্ধির উপরে ছেড়েছিল। কিন্তু, তাতে যে তিলমাত্র কাজ হয়নি, তা প্রতিদিনের বর্ধিত ভাড়া চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।

সম্প্রতি সংসদীয় স্থায়ী কমিটির জমা দেওয়া রিপোর্টে বলা হয়েছে, উড়ান সংস্থাগুলি যে নিজে থেকে ভাড়া কমাবে না তা ইতিমধ্যেই একপ্রকার নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে। কমিটির পরামর্শ, সরকার এমন কোনও বন্দোবস্ত করুক যাতে বিমান পরিবহণ নিয়ন্ত্রক ডিজিসিএ (ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল এভিয়েশন) উড়ানের ভাড়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এমনকি ভাড়া নিয়ন্ত্রণে বিমান পরিবহণ মন্ত্রক আধা বিচার বিভাগীয় ক্ষমতা সম্পন্ন সংস্থাও গড়ে দিতে পারে বলেও পরামর্শ দিয়েছে কমিটি।

উল্লেখ্য, এখন উড়ান ভাড়ার উপরে সরকারের কোনও নিয়ন্ত্রণ না-থাকায় বিশেষত উৎসব ও ছুটির মরসুমে তা ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞ সুদীপ্ত চন্দ্রর কথায়, ‘‘আবহাওয়া, যান্ত্রিক ত্রুটির মতো এমন অনেক বিষয়ের জন্য উড়ান সংস্থার খরচ হয়, যা তার নিয়ন্ত্রণে থাকে না। এমনিতেই লাভের অঙ্ক কম। সঙ্গে জ্বালানির ক্রমবর্ধমান দাম রয়েছে। সরকারি বিমানবন্দরের সঙ্গে বেসরকারি বিমানবন্দরের ভাড়ার আকাশ-পাতাল তফাত। তাই এমন কিছু করা বোধহয় ঠিক হবে না, যার ধাক্কায় উড়ান সংস্থাগুলি আর্থিক ভাবে ধুঁকতে শুরু করে।’’

কমিটির সুপারিশ, যাত্রী এবং উড়ান সংস্থা, দু’পক্ষেরই স্বার্থ রক্ষা করেই আলাদা আলাদা যাতায়াতের পথ বা রুটে টিকিটের সর্বোচ্চ দাম বেঁধে দেওয়া যেতে পারে। সংস্থার কথা মাথায় রেখে উৎসবের আগে সেই সময়কালের ভাড়াও কিছু বেশি রাখার ব্যবস্থা করা যায়। তবে যাত্রীদের আগে থেকে সেই বর্ধিত ভাড়ার কথা জানাতে হবে। কমিটির অভিযোগ, যে পদ্ধতিতে এখন ভাড়া নির্ধারিত হচ্ছে, সেটা পুরোটাই সংস্থা ও তার শেয়ারহোল্ডারদের কথা ভেবে। যাত্রীদের কথা মাথাতেই রাখা হচ্ছে না। সংসদীয় কমিটির পরামর্শ, ১৯৩৭ সালের এয়ারক্র্যাফ্ট রুল ১৩ (১) মেনে যাত্রীদের স্বার্থ যাতে অক্ষুণ্ণ থাকে, তার ব্যবস্থা করুক বিমান মন্ত্রক।

বর্তমানে একই উড়ানের বিভিন্ন আসনের টিকিটের দাম হয় ভিন্ন। কারণ টিকিট আগে কাটলে কম টাকায় এবং শেষ মুহূর্তে কাটলে বেশি টাকায় কিনতে হয়। এই অসাম্য দূর করার কথাও রয়েছে সংসদীয় কমিটির রিপোর্টে। তবে তারা এটাও বলেছে, যাঁরা বিমানে চড়ে বিভিন্ন অতিরিক্ত পরিষেবা চান, তাঁদের জন্য অতিরিক্ত টাকা সংস্থা চাইতেই পারে।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালে ২৫ মার্চ থেকে দু’মাস করোনার লকডাউন চলার পরে ২৫ মে ঘরোয়া উড়ানে ভাড়ার সীমা বেঁধেছিল কেন্দ্র। পরে ২০২২ সালের অগস্টের শেষ থেকে তা তুলে নেওয়া হয়। তার পর থেকে মাত্রাছাড়া ভাড়া নিয়ে প্রশ্ন উঠছিল। যা নিয়ে বিরোধীদের তোপের মুখে পড়তে হয়েছিল কেন্দ্রকে। সরকারের দাবি ছিল, সংস্থাগুলির নিজেদেরই উচিত ভাড়ায় নজরদারি চালানো।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Flight Ticket Flight Services Price Hike Central Government

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy