এক দিকে বিভিন্ন দেশের উপরে আমেরিকার চড়া শুল্ক চাপানোর অভিঘাত। অন্য দিকে তেল উৎপাদক দেশগুলির সংগঠন ওপেক-এর জোগান বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত। এই দুইয়ের জেরে বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের (ব্রেন্ট ক্রুড) দাম প্রায় চার বছরের সর্বনিম্ন হল। ব্যারেল ছুঁল ৬৫ ডলার। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, ভারতের পক্ষে এটা সুখবর। তেল আমদানি খাতে খরচ কমবে। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, সেই সুবিধা দেশের মানুষের ঘরে পৌঁছবে কি? পেট্রল-ডিজ়েলের মতো জ্বালানি বা এলপিজি-র মতো রান্নার গ্যাসের চড়া দামে যাঁরা বহু দিন নাজেহাল।
একাংশের যুক্তি, বিশ্ব বাজারে দাম কম থাকাকালীন দেশেও কমলে, উল্টো পরিস্থিতিতে দাম বাড়লেও তা গায়ে লাগে কম। তেল সংস্থাগুলিও ক্ষতি এড়াতে পারে। শেষ বার ব্রেন্ট এত সস্তা ছিল ২০২১-এর জুলাই-অগস্টে। তখন দেশে (কলকাতায়) পেট্রলের লিটার ছিল প্রায় ৯৫.৪১ টাকা। এখন ১০৫.০১ টাকা। ডিজ়েল ৯১.৮২ টাকা। ফলে নানা মহল থেকে দাম কমানোর দাবি উঠলেও, তেল সংস্থা সূত্রের বার্তা এখনই তা সম্ভব নয়।
এইচডিএফসি সিকিউরিটিজ়ের প্রধান (কমোডিটি) অনুজ গুপ্ত বলেন, ‘‘ট্রাম্পের শুল্ক বিশ্ব জুড়ে বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কাকে চাগিয়ে তুলেছে। তাতে চাহিদা যখন ঝিমিয়ে, তখনই জোগান বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত অশোধিত তেলের দাম কমাচ্ছে। দর আরও কমতে পারে।’’ বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, তা নামতে পারে ৬০ ডলারের কাছে। উল্লেখ্য, ওপেক দেশগুলি দৈনিক ৪.১১ লক্ষ ব্যারেল বাড়তি তেল তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শুক্রবার দিনভর প্রায় ৭% কমেছে ব্রেন্ট।এক সময় তা নামে ৬৪.৭৬ ডলারে।
এতে যে ভারতের লাভ, তাতে একমত সকলেই। তবে এর সুবিধা নিয়ে দেশে জ্বালানি সস্তা হওয়ার নিশ্চয়তা নেই। তেল সংস্থা সূত্রের দাবি, এখনই দাম কমবে না। ভবিষ্যতে পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত হবে। ওয়েস্ট বেঙ্গল পেট্রোলিয়াম ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী সভাপতি প্রসেনজিৎ সেন বলেন, ‘‘দাম অবিলম্বে কমা উচিত। তাতে আমাদেরও সুবিধা হয়।’’ যদিও অর্থনীতিবিদ অজিতাভ রায়চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘ভারতে তেলের দামের অনেকটাই নির্ভর করে বিভিন্ন করের উপর। সরকারের কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা আছে। ফলে দাম এখনই কমবে বলে মনে হয় না।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)