বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম বেশ কিছু দিন ধরেই ছিল ব্যারেলে ৬০-৬৫ ডলার। ফলে দেশে তা আমদানির খরচ কিছুটা কমলেও, সেই সুবিধা পৌঁছয়নি সাধারণ মানুষের ঘরে। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি ছিল, আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় বহাল থাকা ভূ-রাজনৈতিক সঙ্কটের আবহে অশোধিত তেল ফের চড়তে পারে। কাজেই সুযোগ নষ্ট হওয়ার আগে তার সদ্ব্যবহার করে দেশে দাম কমাক রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলি। আর্জিতে কাজ হয়নি। তবে আশঙ্কা শেষ পর্যন্ত সত্যি হল। ইরানের উপর ইজ়রায়েলের হামলায় শুক্রবার পশ্চিম এশিয়া নতুন করে তেতে উঠতেই চড়তে শুরু করল অশোধিত তেল। বিপুল লাফিয়ে ইউরোপের ব্রেন্ট ক্রুড ব্যারেলে পৌঁছে গেল ৭৬ ডলারের কাছে। আমেরিকার ডব্লিউটিআই উঠল প্রায় ৭৩ ডলারে।
এর আগে ২০২২-এর জুনে বিশ্ব বাজারে তেলের দাম উঠেছিল ১২২ ডলারে। ইউক্রেনে রাশিয়ার হানায় জোগান ধাক্কা খাওয়ার আশঙ্কাই ছিল কারণ। বিশেষজ্ঞদের দাবি, এ বারও সেই উদ্বেগেই দাম চড়ছে। কারণ, ইরান পশ্চিম এশিয়ার অন্যতম তেল উৎপাদক এবং রফতানিকারী দেশ।
এ দিন সকালে ইরানের পরমাণু কেন্দ্র ও সেনা ছাউনি আক্রমণ করে ইজ়রায়েল। তেহরান ইতিমধ্যেই প্রতি-আক্রমণে নেমেছে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, লম্বা হতে পারে সংঘর্ষের মেয়াদ। সে ক্ষেত্রে তেলের জোগানই সব থেকে বেশি ধাক্কা খাবে। উপদেষ্টা জেপি মর্গানের সতর্কবার্তা, পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে অশোধিত তেল ফের ১২০ ডলারে চড়তে পারে।
সংশ্লিষ্ট মহলের অভিযোগ, আন্তর্জাতিক দামের সুবিধা নিয়ে পেট্রল-ডিজ়েল সস্তা করার সুযোগ হেলায় হারাল ভারত। এ দেশে বিশ্ব বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দাম যে ভাবে বাড়ে, কমার ক্ষেত্রে তা হয় না। তেল মন্ত্রকের কর্তারা কিছু দিন আগে দাবি করেছিলেন, বিশ্ব বাজারে জ্বালানি সস্তা হলেও ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি দেখে সতর্ক ভাবে পা ফেলতে চাইছেন তাঁরা এবং রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থার কর্তারা। অপেক্ষা করছেন। কারণ একবার দাম কমালে, তা আবার চট করে বাড়ানো যাবে না। যার নেতিবাচক রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া হবে।
কলকাতায় আইওসি-র পাম্পে পেট্রলের লিটার এখন ১০৫.০১ টাকা। ডিজ়েল বিক্রি হয় ৯১.৮২ টাকায়। গত বছর লোকসভা ভোটের আগে, মার্চে দু’ক্ষেত্রেই লিটারে দাম ২ টাকা করে কমে। ২০২২-এর মে মাসের পরে দামে এটুকু ছাড়া বিশেষ রদবদল হয়নি। অথচ চলতি বছরেরই এক সময় বিশ্ব বাজারে তেল ৫৯ ডলারে নেমেছিল। গত চার বছরে যা ছিল সর্বনিম্ন। তার পরে তা ছিল ৬১-৬২ ডলারে। পরে একটু উঠে দাঁড়ায় ৬৫-র আশেপাশে। এ বার প্রায় ১১ ডলার বাড়ল। যা উল্টে দেশে পেট্রল-ডিজ়েলের দাম বৃদ্ধির উদ্বেগ তৈরি করেছে।
আশঙ্কা
বিশ্ব বাজারে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম পৌঁছেছে ব্যারেলে ৭৬ ডলারের কাছাকাছি।
ডব্লিউটিআই ৭৩ ডলার।
কলকাতায় পেট্রল লিটারে ১০৫.০১ টাকা।
ডিজ়েল ৯১.৮২ টাকা।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)