ভারত-পাকিস্তান সংঘাত থামতেই শেয়ার বাজারে হইচই। পাঁচ দিনে দেশীয় প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলির স্টকের দাম বাড়ল ২২ শতাংশ। বম্বে এবং ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জে ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে ভারত ইলেকট্রনিক্স লিমিটেড, ভারত ডায়নামিক্স লিমিটেড, হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড এবং মাজগাঁও ডক শিপবিল্ডার্সের শেয়ারের দর। ফলে এগুলিতে লগ্নি করে বিনিয়োগকারীরা যে মোটা অঙ্কের মুনাফা পেতে চাইছেন, তা বলাই বাহুল্য।
গত ১২ মে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে ‘অপারেশন সিঁদুর’ এবং তার পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাতে দেশের মাটিতে তৈরি হাতিয়ারের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের বিষয়টি উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এ ক্ষেত্রে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ শব্দবন্ধ ব্যবহার করতে শোনা যায় তাঁকে। শেয়ার বিশেষজ্ঞদের দাবি, তাঁর ওই বক্তব্যের পরেই দেশীয় প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলির স্টকে লগ্নি করতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। ফলে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে স্টকের দাম।
ব্রোকারেজ ফার্মগুলির দাবি, ‘যুদ্ধ’র সময়ে দেশীয় প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলির তৈরি করা হাতিয়ার দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করায়, বাহিনীতে সেগুলির কদর বেড়েছে। ফলে ভবিষ্যতে এগুলির চাহিদা বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। পাশাপাশি, সংশ্লিষ্ট অস্ত্রগুলির রফতানি বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। সেই কারণেই দেশীয় প্রতিরক্ষা সংস্থাটির স্টকে ‘ষাঁড়ের দৌড়’ দেখা যাচ্ছ। আপাতত এই অবস্থা বজায় থাকবে বলেই মনে করছে তারা।
চার দিন ধরে চলা সংঘাতে পাক ফৌজের পাঠানো হাজার হাজার ড্রোন আটকাতে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে কাজ লাগায় ভারতীয় ফৌজ। সূত্রের খবর, এর সাহায্যে তুরস্কের অত্যাধুনিক ড্রোনকেও মাঝ-আকাশে ধ্বংস করা সম্ভব হয়েছে। সেই কারণে এর নির্মাণকারী সংস্থা ভারত ইলেকট্রনিক্স এবং ভারত ডায়নামিক্সের শেয়ার দাম গত পাঁচ দিনে বেড়েছে প্রায় ১০ এবং ১৯ শতাংশ। তালিকায় রয়েছে হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড বা হ্যালের নাম। গত পাঁচ দিনে তেজস যুদ্ধবিমান প্রস্তুতকারী সংস্থাটির স্টকে প্রায় ২০ শতাংশ ঊর্ধ্বগতি দেখা গিয়েছে।
এ ছাড়া ড্রোন তৈরির সঙ্গে যুক্ত নাগপুরের সোলার ইন্ডাস্ট্রিজ়ের শেয়ারের দাম পাঁচ দিনে বেড়েছে প্রায় ছ’শতাংশ। আর স্টকের দর প্রায় ১৪ শতাংশ বেড়েছে রণতরী নির্মাণকারী সংস্থা মাজ়গাঁও ডক শিপবিল্ডার্স লিমিটেডের। পারস ডিফেন্স অ্যান্ড স্পেস টেকনোলজ়িস, গার্ডেনরিচ শিপবিল্ডার্স এবং কোচিন শিপবিল্ডার্সের শেয়ার যথাক্রমে ১০, ৩২ এবং ২৬ শতাংশ ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে।
ভারতের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে চিন এবং তুরস্কের অস্ত্রেই ভরসা রেখেছিল পাক সেনা। কিন্তু, কার্যক্ষেত্রে সেগুলি সে ভাবে কাজে আসেনি। উল্টে বেজিঙের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ড্রোন হামলা চালিয়ে উড়িয়ে দেয় নয়াদিল্লি। ফলে লড়াই থাকতেই ড্রাগনভূমির প্রতিরক্ষা স্টকগুলির সূচক নিম্নমুখী হয়েছে। বিশ্লেষকদের দাবি, বিশ্ববাজারে যে ভাবে ভারতীয় হাতিয়ারের কদর বেড়েছে, তা অভূতপূর্ব। আগামী দিনে বিভিন্ন দেশ সেগুলি কিনতে চাইলে, ভারতের প্রতিরক্ষা স্টক আকাশ ছোঁবে, বলছেন আর্থিক বিশ্লেষকেরা।
(বিশেষ দ্রষ্টব্য: শেয়ার বাজারে লগ্নি বাজারগত ঝুঁকি সাপেক্ষ। আর তাই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনেই স্টকে বিনিয়োগ করুন। এতে আর্থিক ভাবে লোকসান হলে আনন্দবাজার ডট কম কর্তৃপক্ষ কোনও ভাবেই দায়ী নয়।)