ভারতে যেন মহামারীর আকার নিচ্ছে ডায়াবেটিস। যার জেরে নড়বড়ে হয়ে পড়ছে দেশের অর্থনীতিও। এক দিকে রোগের কারণে কাজ করার ক্ষমতা হারানোয় আয় কমছে অনেকের। অন্য দিকে, নষ্ট হচ্ছে বিপুল সংখ্যক কাজের দিন। সকলে সুস্থ ভাবে কাজ করলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যতটা উৎপাদন করা সম্ভব হত, তা মার খাচ্ছে স্রেফ এই রোগের প্রকোপে। ফলে ধাক্কা খাচ্ছে আর্থিক বৃদ্ধি।
সমীক্ষায় প্রকাশ, কোনও ডায়াবেটিস রোগীর স্বাস্থ্য খাতে খরচ, এর কবলে না-পড়াদের তুলনায় ২-৫ গুণ বেশি। তার উপর, এই রোগ এতটাই দুর্বল ও অক্ষম করে দেয় যে, কাজে যেতে পারেন-না অনেকে। বহু ক্ষেত্রে আগাম অবসর নিতে হয়। এ ছাড়া, প্রাণহানির আশঙ্কা তো আছেই। আর এই সব মিলিয়ে নষ্ট হয় অসংখ্য কর্মদিবস। যা ক্ষতি করে অর্থনীতির স্বাস্থ্যেরও। ভারতে এ সংক্রান্ত স্পষ্ট পরিসংখ্যান না-মিললেও, ক’বছর আগে সারা বিশ্বে ‘টাইপ-১’ ডায়াবেটিসে মৃত্যুর কারণে প্রায় ৩৭ হাজার কর্মদিবস নষ্ট হয়েছে। ‘টাইপ-২’ ডায়াবেটিস-জনিত মৃত্যুতে প্রায় ২.৮৮ লক্ষ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব, ডায়াবেটিসের জেরে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার খরচ চিকিৎসা খরচের ৫ গুণ। ২০১৩ সালে ভারতে ৬.৩৩ কোটি মানুষ এতে আক্রান্ত হন। কিন্তু সচেতন না-হওয়ায় উপসর্গ থাকা সত্ত্বেও আরও ৩.২২ কোটির রোগ ধরা পড়েনি। চিকিৎসাও হয়নি।
যে কারণে ডায়াবেটিসের হাত ধরে চলতে থাকা বিপুল এই সামাজিক-অর্থনৈতিক ক্ষতি রুখতে অবিলম্বে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা। না হলে ভবিষ্যতে আরও বড় আকার নেবে রোগটি। দেশে আরও কমবে উৎপাদনশীলতা। তাঁদের দাবি, আধুনিক চিকিৎসা ও নতুন ওষুধপত্রে এই রোগ অনেকটাই প্রতিরোধ করে অর্থনীতির বোঝা কমানো যায়। সে সব নিয়েই শুক্রবার থেকে কলকাতায় ৩ দিন ব্যাপী চতুর্থ বার্ষিক সম্মেলন ‘আইডিয়াকন’-এর আয়োজন করেছে কলকাতার ইন্টিগ্রেটেড ডায়াবেটিস অ্যান্ড এন্ডোক্রিন অ্যাকাডেমি (আইডিয়া)।
সমীক্ষা অনুযায়ী, ক’বছর আগেও এর চিকিৎসায় ভারতে বার্ষিক খরচ ছিল প্রায় ৩৮০০ কোটি ডলার। পরিবারের গড় বার্ষিক আয় ৪৮ হাজার টাকা হলে হাসপাতালের বাইরে আক্রান্তের চিকিৎসা-খরচ রোজগারের ৭.৭%। হাসপাতালে ভর্তি হলে ১৭.৫%। অপারেশন করতে হলে আরও বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান, নিম্নবিত্ত পরিবারের একজন পূর্ণ বয়স্ক ডায়াবেটিস রোগীর পারিবারিক আয়ের প্রায় ২৫% খরচ হয়ে যায় চিকিৎসায়।
এই পরিস্থিতিতে ডায়াবেটিস ও তার নতুন চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনাই আইডিয়াকনের মূল লক্ষ্য জানিয়ে উদ্যোক্তাদের দাবি, এটি পূর্ব-ভারতের সবচেয়ে বড় সম্মেলন। যার দুই শীর্ষ কর্তা অধ্যাপক দেবাশিস মাজি ও চিকিৎসক অনির্বাণ মজুমদার। কার্যকরী সমিতির অন্যতম সদস্য চিকিৎসক সুজয় মজুমদার জানান, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রের ৫ জন ও জাতীয় স্তরের ২০ জন বিশেষজ্ঞ-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের প্রায় ১১০০ জন প্রতিনিধি অংশ নেবেন এতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy